আফগানিস্তান নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ব্যাপক ও অরাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া। দেশটিকে স্থিতিশীল করতে এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঠেকাতে সংলাপ, আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং বাস্তবসম্মত সহায়তার ওপর জোর দিয়েছে মস্কো।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সাম্প্রতিক এক বৈঠকে জাতিসংঘে রাশিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি ভাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের পর পশ্চিমাদের পূর্বাভাসের বিপরীতে আফগানিস্তান ভেঙে পড়েনি।
তিনি বলেন, চলমান নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও আফগান কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় চেষ্টা করছে এবং স্বনির্ভর রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্য নিয়ে আঞ্চলিক সহযোগিতা এগিয়ে নিতে কাজ করছে। তবে তিনি স্বীকার করেন, এই প্রক্রিয়ায় সময় লাগবে এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রয়োজন হবে।
নেবেনজিয়া বলেন, রাশিয়া আফগানিস্তানে জাতিসংঘ সহায়তা মিশন ইউএনএএমএকে সমর্থন করে যাচ্ছে। পাশাপাশি দোহা প্রক্রিয়ার মতো উদ্যোগও সমর্থন করছে, যা ইমারাতে ইসলামিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ততা এবং আফগানিস্তানের ধাপে ধাপে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে পুনঃএকীভূত হওয়াকে উৎসাহিত করে।
তিনি বলেন, আফগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপ অপরিহার্য। একই সঙ্গে তিনি চাপ, আলটিমেটাম বা নিষেধাজ্ঞানির্ভর পন্থার বিরুদ্ধে সতর্ক করে বলেন, এসব পদক্ষেপ অবস্থান আরও কঠোর করে তুলতে পারে এবং মাঠপর্যায়ে জাতিসংঘের প্রচেষ্টা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
রুশ দূত জানান, সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা এবং সমষ্টিগত নিরাপত্তা চুক্তি সংস্থা সদস্যসহ আঞ্চলিক পক্ষগুলোও মনে করে, সামনে এগোনোর একমাত্র কার্যকর পথ হলো সম্পৃক্ততা।
তিনি আফগান সম্পদ অবমুক্ত করা এবং উন্নয়ন সহায়তা বাড়ানোর ক্ষেত্রেও অগ্রগতির আহ্বান জানান। তিনি সতর্ক করে বলেন, তা না হলে দেশটিতে জাতিসংঘের উপস্থিতি আরও কমে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
নিরাপত্তা বিষয়ে নেবেনজিয়া চলমান সন্ত্রাসী হুমকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন, বিশেষ করে আইএসকেপি (দায়েশ) গোষ্ঠীটি এখনও বাহ্যিক অর্থায়ন পাচ্ছে এবং বিদেশি যোদ্ধা নিয়োগ করছে, যার মধ্যে সিরিয়া ও ইরাক থেকে যুদ্ধের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিরাও রয়েছে।
তিনি ন্যাটো বাহিনীর ফেলে যাওয়া অস্ত্র নিয়ে অনিশ্চয়তার কথাও তুলে ধরেন। পাশাপাশি কৃত্রিম মাদক উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, এটি সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত।
আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে সশস্ত্র তৎপরতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে নেবেনজিয়া বলেন, উভয় দেশের মধ্যে সংলাপকে রাশিয়া সমর্থন করে। তিনি দুই পক্ষকে সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানান, বিশেষ করে সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতায়।
তিনি আফগানিস্তানে ক্রমাবনত সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কথাও উল্লেখ করেন। অর্থায়ন কমে যাওয়ার পরও মানবিক সংস্থাগুলোর কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রশংসা করে তিনি বলেন, সহায়তা প্রদান এবং রাজনৈতিক, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আফগানিস্তানের সঙ্গে সহযোগিতা সম্প্রসারণে রাশিয়া সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত রয়েছে।
রুশ দূত সব আফগানের অধিকার রক্ষায় মস্কোর সমর্থন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনের পক্ষে অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি মৌলিক স্বাধীনতা সম্মান করার আহ্বান জানান, যার মধ্যে বৈষম্য ছাড়া শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে প্রবেশাধিকারও অন্তর্ভুক্ত।
নেবেনজিয়া জাতিসংঘকে আফগানিস্তানের “বাস্তব কর্তৃপক্ষের” সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান, যাতে দেশটির চ্যালেঞ্জগুলো সমাধানে সহায়তা করা যায় এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আফগানিস্তানের পুনঃএকীভূত হওয়ায় সমর্থন দেওয়া যায়।
সূত্র : আরিয়ানা নিউজ










