বুধবার | ১৭ ডিসেম্বর | ২০২৫

নানা বিধিনিষেধ সত্ত্বেও তুরস্ক গাজ্জায় ১ লাখ টনের বেশি সাহায্য পাঠিয়েছে: এরদোগান

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান বলেছেন, নানা বিধিনিষেধ সত্ত্বেও তুরস্ক গাজ্জায় ১ লাখ ৩ হাজার টনের বেশি মানবিক সহায়তা পাঠিয়েছে, যা সংকটে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। গাজ্জা উপত্যকায় পুনর্গঠন কার্যক্রম অবিলম্বে শুরু করা জরুরি।

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) রাজধানী আঙ্কারায় অনুষ্ঠিত ১৬তম রাষ্ট্রদূত সম্মেলনে তিন এসব কথা বলেন।

এরদোগান বলেন, হামাসের সংযমের কারণে সেখানে (গাজ্জা) যুদ্ধবিরতি মোটামুটি বহাল রয়েছে। বর্তমানে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে যুদ্ধবিরতি বজায় রাখা এবং মানবিক সহায়তা নির্বিঘ্নে পৌঁছে দেওয়ার ওপর।

গাজ্জার মানবিক বিপর্যয় তুলে ধরে তিনি বলেন, অসংখ্য মা, স্ত্রী ও শিশু তাদের মা, বাবা ও জীবনসঙ্গীদের খুঁজে বেড়াচ্ছেন, অথবা তাদের সম্পর্কে সংবাদ পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, হাজার হাজার শিশু পরিবার ও ঘরবাড়ি হারিয়েছে এবং তারা গণহত্যার জীবন্ত সাক্ষীতে পরিণত হয়েছে।

গাজ্জার আয়তন মাত্র ৩৬৫ বর্গকিলোমিটার উল্লেখ করে এরদোগান বলেন, এই ছোট এলাকায় ১৪টি পারমাণবিক বোমার সমান, ২ লাখ টনেরও বেশি বিস্ফোরক নিক্ষেপ করা হয়েছে।

নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে তুরস্ক প্রেসিডেন্ট বলেন, নিজেদের স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি নিজ ভাইদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে তুরস্কের শক্তিশালী হওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।

সিরিয়া

সিরিয়ার বিরুদ্ধে ইসরাইলের আগ্রাসী কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে এরদোগান বলেন, বাশার আল-আসাদের পতন পরবর্তী যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির দায়িত্ব নেয় নতুন প্রশাসন। কিন্তু ইসরাইল বর্তমানে সে প্রশাসনের স্থায়ী নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার প্রধান অন্তরায়।

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই যুদ্ধে ৬ লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। কুখ্যাত সিদনায়া কারাগারসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয়েছে এবং লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

তুরস্কে আশ্রয় নেওয়া সিরীয় শরণার্থীদের মধ্যে ৫ লাখ ৮০ হাজার ইতোমধ্যে নিজ দেশে ফিরে গেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিস্থিতি যত স্থিতিশীল হবে, স্বেচ্ছাসেবী ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের হারও তত বাড়বে।

প্রায় ১৪ বছর ধরে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার সময় বিশ্বের অধিকাংশ দেশের নীরবতারও তিনি কঠোর সমালোচনা করেছেন।

এরদোগান সতর্ক করে বলেন, সিরিয়ায় এসডিএফ-এর সঙ্গে ১০ মার্চের চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আঙ্কারা আহ্বান জানাচ্ছে। প্রতিরোধ করলে বিষয়টি বড় সংকটে রূপ নিতে পারে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত সাম্প্রতিক হামলার প্রসঙ্গ তুলে সতর্কবার্তা দিয়ে এরদোগান বলেন, কৃষ্ণসাগরে বাণিজ্যিক ও বেসামরিক জাহাজে হামলা কারও জন্যই লাভজনক নয়।

তিনি বলেন, এসব হামলা কৃষ্ণসাগরে নৌ-চলাচলের নিরাপত্তাকে মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে ফেলছে। আঙ্কারা এ বিষয়ে উভয় পক্ষকে স্পষ্ট সতর্কবার্তা দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা মন্ট্রো কনভেনশন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করেছি, যার ফলে যুদ্ধ কৃষ্ণসাগরে ছড়িয়ে পড়তে পারেনি। কিন্তু সাম্প্রতিক পাল্টাপাল্টি হামলা এই অঞ্চলে নৌ-চলাচলের নিরাপত্তাকে গুরুতরভাবে হুমকির মুখে ফেলছে। বাণিজ্যিক ও বেসামরিক জাহাজে হামলা কারও উপকারে আসে না। এ বিষয়ে আমরা উভয় পক্ষকে আমাদের সতর্কবার্তা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছি।

এর আগে তুরস্ক জানিয়েছিল, তাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভেতরে জাহাজে হামলা সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যস্থতার বিষয়ে তিনি বলেন, ইস্তাম্বুলে দুই পক্ষকে একত্রিত করা, কৃষ্ণসাগর শস্য উদ্যোগ এবং বন্দিবিনিময়ের মতো কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিয়ে তুরস্ক বাস্তব ও মানবিক ফলাফল অর্জন করেছে।

আর্মেনিয়া-আজারবাইজান

দক্ষিণ ককেশাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আঙ্কারা আজারবাইজানের রাজধানী বাকুর সঙ্গে সংলাপে রয়েছে এবং আর্মেনিয়ার রাজধানী ইয়েরেভানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছে। আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান উভয়ই শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের খুব কাছাকাছি পৌঁছেছে।

এরদোগান তুরস্কের ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক ভূমিকার কথা তুলে ধরে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা তুর্কিভাষী জনগোষ্ঠী ও তুরস্কের সাবেক শিক্ষার্থীরা রাজনীতি, ব্যবসা ও কূটনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।

তিনি বলেন, আঙ্কারা এই ঐতিহাসিক সুযোগগুলো কার্যকরভাবে কাজে লাগিয়ে যাবে।

সবশেষে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বৈশ্বিক ঘটনাপ্রবাহ মানবিক সংকট, বৈশ্বিক বৈষম্য, যুদ্ধ ও অস্থিতিশীলতা কমানোর বদলে আরও গভীর করেছে। তিনি প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ, হলোকাস্ট এবং পরবর্তীতে রুয়ান্ডার গণহত্যা, বসনিয়ার হত্যাযজ্ঞসহ ইরাক, মিয়ানমার, সোমালিয়া ও মধ্য আফ্রিকার সংঘাতের উদাহরণ তুলে ধরে এসব নৃশংসতা ঠেকাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতার কথাও স্মরণ করিয়ে দেন।

সূত্র: আনাদোলু

spot_img
spot_img

সর্বশেষ

spot_img

এই বিভাগের

spot_img