ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনী বলেছেন, “ইরানি জাতি চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের মুখে যেমন অটলভাবে দাঁড়িয়ে যায়, তেমনি চাপিয়ে দেওয়া শান্তির ক্ষেত্রেও তেমনই অটল থাকবে। এই জাতি কোনো চাপের মুখে কারো কাছেই আত্মসমর্পণ করবে না।”
বুধবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক বিশেষ বার্তায় তিনি ইরানি জাতির সাহসিকতা ও সময়োপযোগী অবস্থানের প্রশংসা করে বলেন, “সাম্প্রতিক ইসরাইলি মূর্খ ও কপট আগ্রাসন আমাদের জাতির বিকাশ, যুক্তিবোধ এবং আধ্যাত্মিকতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই জাতি কখনোই কারও সামনে আত্মসমর্পণ করবে না। আমেরিকানদের এটি বোঝা উচিত।”
আয়াতুল্লাহ খামেনী আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হুমকির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, “যারা বিবেকবান এবং যারা ইরান, তার জাতি ও ইতিহাসকে জানে, তারা কখনোই এই জাতির সঙ্গে হুমকির ভাষায় কথা বলে না। কারণ ইরানি জাতি আত্মসমর্পণযোগ্য নয়।”
তিনি হুঁশিয়ার করে দেন, “আমেরিকার যেকোনো সামরিক হস্তক্ষেপ তাদের জন্য নিশ্চিতভাবেই অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হবে।”
খামেনী বলেন, “গাদির দিবসের র্যালি এবং সাম্প্রতিক সময়ে, বিশেষ করে জুমার নামাজের পর, অনুষ্ঠিত বিশাল র্যালি ও সমাবেশ ইরানি জাতির ঐক্য ও ঈমানের বহিঃপ্রকাশ। শত্রুর আক্রমণের সময় এক নারী টিভি উপস্থাপিকার সৌন্দর্যপূর্ণ ও অর্থবহ আচরণ, তাকবির উচ্চারণ করে জাতির শক্তির প্রতীক তুলে ধরা, এটি ছিল এক ঐতিহাসিক এবং অত্যন্ত মূল্যবান ঘটনা।”
খামেনী বলেন, “এই ইসরাইলি হামলা এমন সময় সংঘটিত হয়েছে যখন আমাদের কর্মকর্তারা আমেরিকার সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন এবং ইরানের পক্ষ থেকে কোনো সামরিক বা উত্তেজনামূলক পদক্ষেপের কোনো ইঙ্গিত ছিল না।”
তিনি আরও বলেন, “শুরু থেকেই অনুমান করা যাচ্ছিল যে, এই ইহুদিবাদী শত্রুর কপটতাপূর্ণ পদক্ষেপে আমেরিকার হাত রয়েছে। এবং আমেরিকান কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক বক্তব্য এই ধারণাকে আরও দৃঢ় করছে।”
খামেনী বলেন, “ইরানি জাতি চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ, শান্তি এবং যেকোনো চাপের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ায়। চিন্তাবিদ, বক্তা, লেখক ও আন্তর্জাতিক জনমতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আমি আহ্বান জানাই, তারা যেন এই বাস্তবতা ব্যাখ্যা করেন এবং শত্রুর প্রতারণামূলক প্রচারণার মাধ্যমে সত্যকে বিকৃত হতে না দেন।”
তিনি বলেন, “ইহুদিবাদী শত্রু একটি বড় ভুল ও অপরাধ করেছে। এই শত্রুকে শাস্তি পেতেই হবে এবং সে এখন শাস্তি পাচ্ছে। আমাদের জাতি ও সশস্ত্র বাহিনী যে কঠিন প্রতিশোধ নিচ্ছে ও ভবিষ্যতের জন্য যা প্রস্তুত রেখেছে, তা এক ভয়াবহ শাস্তি যা এই শত্রুকে দুর্বল করে দিয়েছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “তাদের আমেরিকান বন্ধুরা যখন ময়দানে নামে, সেটাই ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর দুর্বলতা ও অক্ষমতার প্রমাণ।”
আয়াতুল্লাহ খামেনী বলেন, “আমেরিকার প্রেসিডেন্ট সরাসরি ইরানি জাতিকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু আমি বলি, হুমকি তাদের জন্য যারা ভয় পায়। ইরানি জাতি এই আয়াতে বিশ্বাস করে: ‘وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنْتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ’ এই হুমকি কখনোই ইরানি জাতির চিন্তা বা আচরণে প্রভাব ফেলে না।”
তিনি আরও বলেন, “(ইরানি) জাতিকে বলো আত্মসমর্পণ করো, এটা কোনো বুদ্ধিমানের কথা নয়। যারা (ইরানি) জাতিকে ও তার ইতিহাসকে জানে, তারা জানে ইরানি জাতি কারো আগ্রাসনের সামনেও মাথা নত করে না।”
তিনি বলেন, “আমেরিকানরা এবং যারা এই অঞ্চলের রাজনীতি জানে, তারা বোঝে, এই ইস্যুতে আমেরিকার প্রবেশ শতভাগ তাদের ক্ষতির কারণ হবে। তারা এমন এক আঘাত পাবে যার ক্ষয়ক্ষতি ইরানের ক্ষতির চেয়েও বেশি হবে।”
খামেনী স্পষ্টভাবে বলেন, “আমেরিকার সামরিক হস্তক্ষেপ হলে তা হবে তাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।”
তিনি আবারও ইরানি জাতিকে স্মরণ করিয়ে দেন: ‘وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنْتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ’ “জীবনকে দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে নিতে হবে। বিশেষ করে যারা জনসেবায়, দাওয়াতে, তাবলিগে নিয়োজিত তারা যেন সাহসের সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করেন এবং মহান আল্লাহর উপর ভরসা রাখেন। কারণ, ‘وَمَا النَّصْرُ إِلَّا مِنْ عِنْدِ اللَّهِ الْعَزِیزِ الْحَکِیمِ’— ‘জয় তো কেবল পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবান আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে।’”
খামেনী তাঁর বক্তব্যের শেষে বলেন, “মহান আল্লাহ্ অবশ্যই ইরানি জাতিকে, সত্যকে এবং ন্যায়ের পক্ষকে বিজয় দান করবেন।”
সূত্র : ইরনা