ফিলিস্তিনের গাজ্জা উপত্যকায় ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলি আগ্রাসনে ধ্বংস হয়ে গেছে বহু শতাব্দীর ইতিহাস। দখলদার বাহনীর হামলা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না গাজ্জার ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও। দুই বছরের যুদ্ধকালেই গাজ্জা থেকে হারিয়ে গেছে বা লুট হয়েছে প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ওসমানীয় আমল পর্যন্ত বিস্তৃত অন্তত ২০ হাজার প্রত্নবস্তু।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) এমন তথ্য জানায় বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
গাজ্জার সরকারি মিডিয়া অফিসের প্রধান ইসমাইল আল-থাওয়াবতে জানান, ফিলিস্তিনিদের জাতীয় পরিচয় মুছে ফেলতেই ইসরাইল প্রত্নস্থলগুলোকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৩১৬টির বেশি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা ও ঐতিহাসিক ভবন পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ধ্বংস হয়েছে। এর বেশিরভাগ মামলুক ও ওসমানীয় আমলের, বাকিগুলো ইসলামি ও বাইজেন্টাইন যুগের।
ধ্বংসযজ্ঞে বাদ যায়নি মামলুক আমলে নির্মিত ইউনেস্কো তালিকাভুক্ত ঐতিহাসিক কাসর আল-বাশা প্রাসাদও। গাজ্জার পুরোনো শহরের আল-দারাজ এলাকার এই প্রাসাদের অন্তত ৭০ শতাংশ অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতির পর ধ্বংসস্তূপের নিচে ছড়িয়ে থাকা প্রত্নবস্তু উদ্ধার ও সংরক্ষণে স্থানীয় কর্মীরা এখনো সরল যন্ত্রপাতি নিয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছেন।
থাওয়াবতে জানান, ২০ হাজারের বেশি প্রত্নবস্তু লুট বা হারিয়ে গেছে, যা শুধু ফিলিস্তিনি ঐতিহ্যের ওপর আঘাতই নয়, আন্তর্জাতিক আইনে একটি গুরুতর অপরাধ।
পশ্চিম তীরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিশেষজ্ঞ হামুদা আল-দাহদারও নিশ্চিত করেছেন, ইসরাইলি হামলায় প্রাসাদ থেকে হাজারো বিরল প্রত্নবস্তু উধাও হয়েছে। তার ভাষায়, ‘প্রতিটি প্রত্নবস্তু ফিলিস্তিনের সভ্যতার একেকটি অধ্যায়ের সাক্ষ্য বহন করত। এ লুটপাট আমাদের জাতীয় পরিচয়কে আঘাত করেছে।’
১৯৬৭ সালে ইসরাইল গাজ্জা দখল করে এবং ১৯৯৪ সালে অসলো চুক্তির পর সেনা প্রত্যাহার করে। বহুবার ধ্বংসের মুখোমুখি হওয়া কাসর আল-বাশা পুনরায় সংস্কার করে জাদুঘর হিসেবে খুলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০২৩ সালের আগ্রাসন আবারো এটিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে।
গাজ্জায় চলমান আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত নিহত ৬৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির বেশিরভাগই নারী ও শিশু; আহত হয়েছে আরও ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষ। পুরো অঞ্চল আজ এক ভয়াবহ ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে।









