বৃহস্পতিবার | ১৮ ডিসেম্বর | ২০২৫

ফিলিস্তিনিদের মুক্তির দাবীতে লন্ডনে বড় ধরণের ক্যাম্পেইন শুরু করতে যাচ্ছে পিএফবি

গাজ্জার কামাল আদওয়ান হাসপাতালের পরিচালক ডা. হুসাম আবু সাফিয়া সহ সকল ফিলিস্তিনি বন্দীর মুক্তির দাবীতে লন্ডনে বড় ধরণের ক্যাম্পেইন শুরু করতে যাচ্ছে পিএফবি (প্যালেস্টাইনিয়ান ফোরাম ইন ব্রিটেন)।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) মিডল ইস্ট মনিটরের এক প্রতিবেদনে একথা জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পিএফবি (প্যালেস্টাইনিয়ান ফোরাম ইন ব্রিটেন) ঘোষণা দিয়েছে যে তারা ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের কারাগারে বন্দী ডা. হুসাম আবু সাফিয়া ও সকল ফিলিস্তিনি বন্দীর মুক্তির দাবিতে একটি নতুন সংহতিমূলক ক্যাম্পেইন শুরু করতে যাচ্ছে। যা হবে একটি শান্ত ও প্রতীকী কর্মসূচি। নাম, ‘রেড রিবনস ক্যাম্পেইন’। শনিবার, ২০ ডিসেম্বর, লন্ডনের কেন্দ্রস্থল অক্সফোর্ড সার্কাসে, দুপুর ১টা থেকে এর সূচনা হবে।

ফোরামটি জানায়, এই আয়োজনটি কোনো বিক্ষোভ বা মিছিল নয়; বরং এটি একটি নীরব ও শান্তিপূর্ণ সংহতি প্রকাশের কর্মসূচি। এতে অংশগ্রহণকারীরা লাল ফিতা ঝুলাবেন এবং বিশেষভাবে তৈরি পোস্টার প্রদর্শন করবেন, যেখানে স্বাধীনতা ও ন্যায়ের স্পষ্ট দাবী তুলে ধরা হবে। এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনি বন্দীদের দুর্ভোগ সম্পর্কে ব্রিটিশ ও আন্তর্জাতিক জনমতকে একটি মানবিক বার্তা পৌঁছে দেওয়া হবে।

অংশগ্রহণে ইচ্ছুকদের উদ্দেশ্যে বার্তায় ফোরামটি সকলকে সম্ভব হলে সঙ্গে করে লাল ফিতা নিয়ে আসার অনুরোধ জানায়। তবে তারা জোর দিয়ে বলেছে, শুধু উপস্থিত থাকাটাই একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করবে। কেননা বর্তমানে যখন ব্রিটেনের জনপরিসরে ফিলিস্তিনপন্থী কণ্ঠস্বরকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করার এবং সীমিত করার চেষ্টা চলছে, তখন নীরব ও প্রতীকী সংহতি স্লোগানের চেয়েও বেশি প্রভাবশালী হয়ে উঠতে পারে।

ফোরামটি আরো জানায়, তাদের অনুষ্ঠিতব্য কর্মসূচিটির অন্যতম লক্ষ্য হলো, লাল ফিতাকে ফিলিস্তিনি বন্দীদের অধিকারের পক্ষে সচেতনতা তৈরির একটি বৈশ্বিক প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। একই সঙ্গে দখলদার ইসরাইলের হাতে জিম্মি হিসেবে আটক থাকা ফিলিস্তিনিদের বাস্তবতা তুলে ধরা। গ্রেপ্তার, নির্জন বন্দীত্ব, অনাহার এবং জোরপূর্বক গুমের নীতিতে নজিরবিহীন বৃদ্ধির এই সময়ে এটি গুরুত্বপূর্ণ বলেও উল্লেখ করা হয়।

ফোরামটি লাল রঙ বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে জানায়, বিপদ, নৃশংসতা, জরুরি অবস্থা এবং কারাগারের ভেতরে চলমান মানবিক রক্তক্ষরণের প্রতীক হিসেবে লাল রঙ বেছে নেওয়া হয়েছে। এটি বৈশ্বিক বিবেকের প্রতি একটি খোলা আহ্বান, যেনো ইসরাইলের মারাত্মক অপরাধ ও লঙ্ঘনের মুখে নীরবতাকে স্বাভাবিক হিসেবে মেনে না নেওয়া হয়।

প্যালেস্টাইনিয়ান ফোরাম ইন ব্রিটেন নামক ফোরামটি ‘রেড রিবনস ক্যাম্পেইন’ শুরুর উদ্যোগ নেওয়ার পেছনে ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত ফিলিস্তিনি বন্দীদের দুর্দশার বাস্তব চিত্র ও পরিসংখ্যানও সামনে আনে। জানানো হয় যে, ফিলিস্তিনি বন্দী অধিকার সংস্থাগুলোর নথি এবং ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত ইসরাইলী প্রিজন সার্ভিস প্রকাশিত পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে তারা ক্যাম্পেইনটি পরিচালনা করতে যাচ্ছেন, যা ইসরাইলী কারাগারে ফিলিস্তিনি বন্দীদের এক ভয়াবহ ও নির্মম বাস্তবতা তুলে ধরে।

নথিগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের অবৈধ রাষ্ট্রটির কারাগারে মোট বন্দী ও আটককৃতের সংখ্যা প্রায় ৯,৩০০ জন। এর মধ্যে অধিকাংশই বিচারাবহির্ভূত ও প্রশাসনিকভাবে আটককৃত। এতে ইসরাইলী সেনা ক্যাম্পে আটক ব্যক্তিরা এর অন্তর্ভুক্ত নয়।

এছাড়া দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দীর পরিমাণ সংখ্যায় ১,২৫৪ জন। তন্মধ্যে ৫১ জন নারী ও ২জন শিশুও রয়েছে।

অপরদিকে প্রায় ৩৫০ শিশু বন্দীকে কোনোকিছু ছাড়াই ওফার ও মেগিদ্দো কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। শুধুমাত্র প্রশাসনিক আটককৃতের সংখ্যাও বর্তমানে ৩,৩৫০ জনে পৌঁছেছে। প্রায় ১,২২০ জন আটককে ‘অবৈধ যোদ্ধা’ হিসেবেও শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। এই সংখ্যায় গাজ্জা থেকে সেনা ক্যাম্পে আটক সকল বন্দী অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং লেবানন ও সিরিয়ার আরব যোদ্ধারা এই আটককৃতদের অন্তর্ভুক্ত।

ফোরামটি জোর দিয়ে বলেছে, এসব পরিসংখ্যান এমন এক গণ-আটক ব্যবস্থার ইঙ্গিত দেয়, যা মৌলিক আইনি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের উপর দাঁড়িয়ে আছে। যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও জেনেভা কনভেনশনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘনও বটে।

সংহতির জন্য উন্মুক্ত আহ্বান:

পিএফবি বা প্যালেস্টাইনিয়ান ফোরাম ইন ব্রিটেন নামের ফোরামটি ব্রিটেনের সকল বিবেকবান মানুষকে তাদের রেড রিবনস ক্যাম্পেইনে অংশ নেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছে। বিবৃতিতে তারা দৃঢ়ভাবে উল্লেখ করেছে যে, বিষয়টি শুধু ডা. হুসাম আবু সাফিয়া কিংবা শুধু ফিলিস্তিনিদের ইস্যু নয়; বরং এটি ন্যায়বিচার ও মানব মর্যাদার প্রশ্ন, যা প্রান্তিককরণ বা উপেক্ষার ক্রমবর্ধমান চেষ্টার পরও জনআলোচনার কেন্দ্রেই থাকা উচিত।

spot_img
spot_img

সর্বশেষ

spot_img

এই বিভাগের

spot_img