পাকিস্তানে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিবাহ শাস্তিযোগ্য অপরাধ মর্মে বিল পাশ
পাকিস্তানে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিবাহ শাস্তিযোগ্য অপরাধ মর্মে চূড়ান্ত বিল পাশ হয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ মে) বিরোধিতা সত্ত্বেও দেশটির সিনেটে চূড়ান্তভাবে বিলটি পাশ হয়।
সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, জাতীয় পরিষদের পর পাকিস্তানের সিনেটেও ১৮ বছরের কম বয়সীদের বিবাহ অপরাধ হিসেবে গণ্য করার একটি বিতর্কিত বিল পাস হয়েছে। রাজনৈতিক দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির সিনেটর শেরি রহমান বিলটি উত্থাপন করেন, যা ধারা অনুযায়ী অনুমোদিত হয়। খারিজ করা হয় বিলটি সিনেট থেকে ইসলামী নাজরিয়াতী কাউন্সিল বা ইসলামী দৃষ্টিকোণ পরিষদে পাঠানোর প্রস্তাবনা। যার ফলে দেশটির সর্বত্র এখন ১৮ বছরের কম বয়সীদের বিবাহ আইনত অপরাধ বলে বিবেচিত হবে।
সিনেটে এই প্রসঙ্গে সকলকে মতামত প্রকাশের সুযোগ দেওয়া হয়। মাওলানা ফজলুর রহমানের নেতৃত্বাধীন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (এফ) এই বিলের বিরোধিতা করে। তারা বিলটিকে ইসলামী নাজরিয়াতী কাউন্সিলে পাঠানোর প্রস্তাব দেয়, কিন্তু এটি ধর্মীয় বিষয় নয় উল্লেখ করে তা খারিজ করে দেওয়া হয়।
সিনেটর কামরান মুর্তজা মত প্রকাশ করে বলেন, এটি একটি ধর্মীয় বিষয়, তাই এভাবে বিল পাশ করা উচিত নয়। জবাবে সিনেটর শেরি রহমান বলেন, এটি কোনো নতুন বিল নয় এবং ধর্মীয় বিষয়ও নয়। পূর্বে পিটিআইও এমন বিল এনেছিলো।
সিনেটর শেরি বলেন, জাতীয় পরিষদে এই বিলটি শারমিলা ফারুকি উপস্থাপন করেছিলেন। এখন সিনেটে এসে চূড়ান্তভাবে তা পাশ হয়েছে।
সিনেটর আবদুল ওয়াসি বলেন, সংসদ কোনো কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী বিল পাশ করতে পারে না। আমরা এই বিলের নিন্দা করছি।
সিনেটর ফারুক এইচ নাইক জবাবে বলেন, ১৮ বছরের কম বয়সীদের শিশু হিসেবে ধরা হয়। ইসলাম কোথাও প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার নির্দিষ্ট বয়স উল্লেখ করেনি। তাই ১৮ বছরের নিচে বিয়ে আইনগতভাবে বেআইনি হওয়াতে কোনো সমস্যা নেই।
সিনেটর সামিনা মুমতাজ জাহরি বলেন, আমি মনে করি এমনকি ১৮ বছর বয়সেও বিয়ে হওয়া উচিত নয়। শিশু বিবাহ গুনাহ।
সিনেটর সারমদ আলী বলেন, সৌদি আরবেও ১৮ বছরের কম বয়সে বিয়েতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
বিলের মূল বিষয়বস্তু:
১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের বিয়ের নিবন্ধন আইনত অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে।
নিকাহ রেজিস্ট্রারদের জন্য বাধ্যবাধকতা থাকবে যে, তারা কম বয়সী শিশুদের বিয়ের নিবন্ধন করতে পারবে না।
দায়িত্বশীলকে নিকাহ বা বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের আগে দুই পক্ষের জাতীয় পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড) দেখতে হবে। তথ্য ছাড়া বিয়ে পড়ানো বা রেজিস্ট্রেশনের দায়ে এক বছর জেল, এক লাখ রুপি জরিমানা বা উভয় দণ্ড হবে।
১৮ বছরের কম বয়সী মেয়ের সঙ্গে বিয়ে করা হলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং এর জন্য জরিমানা আরোপ করা হবে।
১৮ বছরের বেশি বয়সী পুরুষ যদি কম বয়সী মেয়েকে বিয়ে করে, তাহলে কমপক্ষে ২ বছর এবং সর্বোচ্চ ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হবে।
কম বয়সী বাচ্চাদের বিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণের শামিল হবে। কাউকে কম বয়সে বিয়ের জন্য প্ররোচিত করা বা জোর করে বিয়ে দেওয়া ধর্ষণের অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
কম বয়সী বাচ্চাদের বিয়ে দেওয়ার দায়ে ৫ থেকে ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ রুপি জরিমানা বা উভয় দণ্ড হবে।
কোনো শিশুকে বিয়ের উদ্দেশ্যে চাকরিতে রাখা বা আশ্রয় দিলে ৩ বছরের জেল এবং জরিমানা হবে।
১৮ বছরের কম বয়সী শিশুর বিয়েতে মা-বাবা বা অভিভাবকদের জন্যও শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে, সর্বোচ্চ ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং জরিমানা।
যদি কাউকে বিয়ের জন্য জোর করে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করা হয়, তা শিশু পাচার (চাইল্ড ট্রাফিকিং) হিসেবে গণ্য হবে। এতে জড়িতদের ৫ থেকে ৭ বছরের জেল এবং জরিমানা হবে।
কম বয়সী বিয়ের মামলায় আদালত স্থগিতাদেশ (ইনজাংশন) দিতে পারবে এবং এই ধরণের মামলা ৯০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বাধ্য থাকবে।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের অধিকাংশ প্রদেশে বিবাহের ক্ষেত্রে এতদিন মেয়েদের সর্বনিম্ন বয়সসীমা ছিলো ১৬ বছর। যা আজ সিনেটে পাশ হওয়া বিলের ফলে ১৮ বছরে উন্নীত হয়েছে।
সূত্র: এআরওয়াই নিউজ