জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক ভিসি হাসিবুর রশীদসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে ছয় নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন সিয়াম আহসান আয়ান। তিনি বলেন, ‘আমাদের ওপর অনবরত টিয়ারশেল নিক্ষেপ করছিল পুলিশ। এর প্রতিবাদে দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে যান আবু সাঈদ। কিছুক্ষণ পরই তাকে গুলি করেন পুলিশের একজন সদস্য। গুলি খেয়ে নিজের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি। আবু সাঈদ ভাইকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে ফের গুলি করলে নিজেও আহত হই।’
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব কথা বলেন সিয়াম আহসান আয়ান। ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। ট্রাইব্যুনালের বাকি সদস্যরা হলেন, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
এদিন বেলা সোয়া ১১টায় সাক্ষীর ডায়াসে ওঠেন আয়ান। তিনি রংপুরের আরসিসিআই পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র। চলতি বছরে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমাদের ওপর টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ বাহিনী। এর প্রতিবাদে সড়কের বিভাজকের পশ্চিম পাশে এক নম্বর গেট বরাবর দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে যান আবু সাঈদ। পুলিশ বাহিনী থেকে তাকে শুট করা হয়। তখন আমি বিয়াম শপিং কমপ্লেক্সের সামনে সড়কের পূর্ব পাশে ছিলাম। সেখান থেকে তাকে দেখতে পারছিলাম। গুলি খেয়ে নিজের ভারসাম্য হারিয়ে বিভাজকের পূর্বপাশে চলে আসেন তিনি। তখন ২টা ১৭ মিনিট। আমি আবু সাঈদ ভাইকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসি। তখন তাকে তুলে আমার ডানপাশে অর্থাৎ পূর্ব পাশে ঘুরিয়ে নেই। কিন্তু আবারও গুলি করে পুলিশ। সেই গুলিতে আমি আহত হই। আমার বাম পাশের পুরো শরীর গুলিবিদ্ধ হয়। ওই সময় আবারও ভারসাম্য হারিয়ে আমার হাত থেকে পড়ে যান আবু সাঈদ ভাই। তখন তার শরীরের সামনের পাশে প্রচণ্ড পরিমাণ রক্তক্ষরণ হচ্ছিল।
এই সাক্ষী বলেন, এসি আরিফুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল এসে আবু সাঈদ ও উপস্থিত আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়ে আহত করেন বলে সঙ্গে থাকা আন্দোলনকারী ও বিভিন্ন অনলাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যমে জানতে পারি। এছাড়া আবু সাঈদের মাথার পেছনে আঘাত করেন। এরপর আমি তাকে সড়কের উত্তর পাশে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাই। ওই সময় আরও কিছু আন্দোলনকারীও আসেন। পরে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। আমি তখন পার্কের মোড়ে (বর্তমানে আবু সাঈদ চত্বর) অবস্থান করি। একপর্যায়ে আমাদের কাছে আবু সাঈদের মৃত্যুর খবর আসে। তার মৃত্যুতে আমরা বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ি। একইসঙ্গে আমাদের আন্দোলন আরও বেগবান করা হয়। আমি এ মামলার সব আসামির সুষ্ঠু বিচার ও ফাঁসি চাই।
এদিন ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন সহিদুল ইসলাম ও মঈনুল করিম। সঙ্গে ছিলেন আবদুস সোবহান তরফদার।