গত ২ দশক ধরে ইসলামিক সংগঠন হিজবুত তাহরিরকে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে আসছিল যুক্তরাজ্য সরকার। তবে নিষিদ্ধ করার জন্য পাকাপোক্ত প্রমাণ পাচ্ছিল না দেশটি। ফলে কয়েক দফা এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। কিন্তু এবার তথাকথিত বেশ কয়েকটি কারণ দেখিয়ে সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ সংস্থার তালিকায় রাখতে সক্ষম হয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার।
গত শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) যুক্তরাজ্য সরকারের সুপারিশে সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেশটির পার্লামেন্ট ।
যে কারণে নিষিদ্ধ হলো হিজবুত তাহরির:
নিষিদ্ধ ঘোষণার পেছনে ঋষি সুনাকের নেতৃত্বাধীন সরকারের দাবি, হিজবুত তাহরির এন্টি সেমেটিক বা ইহুদি জাতির উপর ব্যাপক বিদ্বেষ পোষণ করে। সেই সঙ্গে ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসকে নায়ক হিসেবে বিবেচনা করে থাকে।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলের মন রক্ষার্থেই সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্য সরকার। এমনটিই জানাচ্ছেন নেদারল্যান্ডসের লিডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের গবেষক ফেলো রিচার্ড ম্যাকনিল-উইলসন। যিনি বছরের পর বছর ধরে গ্রুপটির কর্মকাণ্ড অনুসরণ ও গবেষণা করে আসছেন।
উইলসন বলেন, “গত কয়েক মাসে গাজ্জা উপত্যকায় নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যার প্রতিবাদে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে যুক্তরাজ্যে। যদিও এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে ধ্বংসাত্মক ও বিদ্বেষপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এখানে।”
তিনি আরো বলেন, “এই ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচির নেতৃত্ব প্রদান করেছিল হিজবুত তাহেরির। সেই সঙ্গে লন্ডনে গত কয়েক সপ্তাহে ইসরাইলের নিন্দা জানিয়ে বিশাল বিশাল মিছিল বের করেছিল সংগঠনটি। যেখানে হাতে ব্যানার ও প্লাকার্ড নিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছিল হাজার হাজার মানুষ। আর তাদের এমন কর্মকাণ্ডই যুক্তরাজ্যের স্পটলাইটে নিয়ে আসে হিজবুত তাহরিরকে”
উইলসন বলেন, “যুক্তরাজ্য সরকারের ইসরাইল পন্থী অবস্থানের উপর প্রকাশ্য আক্রমণ ঠেকানোর প্রচেষ্টা করছে দেশটির সরকার।”
তিনি আরো বলেন, ঋষি সুনাকের কনসারভেটিভ সরকার অবিচলিতভাবে তেল আবিবের পাশে দাঁড়িয়েছে। শুধু তাই নয় ইসরাইলকে কূটনৈতিক সহায়তা ও সামরিক সরঞ্জামও সরবরাহ করছে লন্ডন।
হিজবুত তাহরির পরিচয় ও কর্মকাণ্ড:
১৯৫৩ সালে জর্দানে প্রতিষ্ঠা লাভ করে হিজবুত তাহরীর নামে সংগঠনটি। একসময় তাদের হাজার হাজার অনুসারী ছিল। বাংলাদেশ থেকে মরক্কো পর্যন্ত মুসলিম দেশগুলোকে একত্রিত করে একটি খেলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রচারকার্য শুরু করেছিল তারা। আর এই ধারণাকে মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছে দিতে তারা বিভিন্ন স্কুল ও কলেজগুলোতে সমাবেশ করত। ছাত্রদের কাছে পৌঁছে দেয়া হতো প্রচার পত্র।
তবে সময়ের সাথে সাথে নাটকীয়ভাবে হিজবুত তাহরিরের অনুসারীর সংখ্যা কমে এসেছে। বর্তমানে যারা রয়েছেন তারা অত্যন্ত বৃদ্ধ। ফলে গতিশীলতা হারিয়েছে সংগঠনটি। আর তাই হিজবুত তাহরির পতনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকেরা।
শুধু তাই নয় বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়াসহ বেশ কয়েকটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে সংগঠনটিকে।
নিষিদ্ধ সংগঠনটির সাথে জড়িত প্রমাণিত হলে যে সাজা হতে পারে:
উইলসন বলেন, “যুক্তরাজ্যের আইন অনুযায়ী যদি হিজবুত তাহরির সংগঠনের সাথে কোন ব্যক্তির সংযুক্ততা প্রমাণিত হয়, তাহলে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হতে পারে।”
তিনি আরো বলেন, “যুক্তরাজ্যের নেতৃত্বাধীন সরকারের গবেষণা থেকে এটি প্রমাণিত হচ্ছে যে, হিজবুত তাহরির শুধুমাত্র একটি ‘কথার দোকান’ বা বক্তব্যের দ্বারাই সীমাবদ্ধ থাকে। তারা সহিংসতার সাথে যুক্ত অথবা এতে আগ্রহী নয়।”
উইলসন বলেন, “সরাসরি এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা দলটির সদস্যদের গাঁ ঢাকা দিতে ও আরো বেশি চরমপন্থী সংগঠনের সাথে যোগ দিতে বাধ্য করবে।”
নিষিদ্ধ ঘোষণার পর হিজবুত তাহরীর প্রতিক্রিয়া:
হিজবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে বর্তমানে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আল সাবাবের মত হিংসাত্মক সংগঠনের সাথে তুলনা করছে যুক্তরাজ্য সরকার। আর এই বিষয়টি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন সংগঠনটির নেতা ও কর্মীরা। তাদের দাবি, হিজবুত তাহরীর কখনোই হাতে অস্ত্র হাতে তুলে নেয়নি অথবা সশস্ত্র প্রতিরোধে অংশগ্রহণ করেনি।
সূত্র: টিআরটি ওয়ার্ল্ড