গাজ্জা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে বুধবার ভোর থেকে ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর টানা বিমান হামলায় কমপক্ষে ২১ জন ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন। স্থানীয় হাসপাতাল সূত্র জানায়, শহীদদের মধ্যে ছয়জন ছিলেন ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা নিরীহ মানুষ।
গাজ্জা শহরের পূর্বাঞ্চলীয় শুজাইয়া এলাকায় অবস্থিত শাওয়া স্টেশনে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থী ত্রাণ প্রত্যাশীদের তাঁবুগুলোর ওপর হামলা চালায় ইসরাইলি যুদ্ধবিমান। এতে বহু ফিলিস্তিনি শহীদ ও আহত হন বলে জানায় আল-আকসা টেলিভিশন। একই এলাকায় আল-মানসুরা সড়কে ইসরাইলি হামলায় আরও তিনজন শহীদ হন এবং কয়েকজন আহত অবস্থায় স্থানীয় আল-মুয়াম্মাদানি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
গাজ্জার কেন্দ্রস্থলে নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরের উত্তরের মুফতি এলাকার একটি বাড়িতে চালানো হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হন বলে জানিয়েছে জরুরি সেবাদানকারী একটি সূত্র। এছাড়া দেইর আল-বালাহ শহরের সালাম মসজিদের পার্শ্ববর্তী একটি বাড়িতে বিমান হামলায় পাঁচজন ফিলিস্তিনি শহীদ হন, যাদের মধ্যে শিশুও রয়েছে।
গাজ্জার কেন্দ্রস্থলের ওয়াদি গাজ্জা এলাকায় সালাহউদ্দিন সড়কে ত্রাণের জন্য অপেক্ষমাণ সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় ইসরাইলি সেনারা। এতে পাঁচজন ফিলিস্তিনি শহীদ হন এবং আরও অনেকেই আহত হন। স্থানীয় গণমাধ্যমের তথ্য মতে, নেটসারিম করিডোরে ইসরাইলি সেনারা ত্রাণ প্রত্যাশী ডজনখানেক ফিলিস্তিনি যুবককে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে। এরপর তাদের মরদেহ একটি কূপে ফেলে দেওয়া হয় এবং সেগুলো উদ্ধার করতেও বাধা দেওয়া হয়।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “মানুষকে গাজ্জায় হত্যা করা হচ্ছে যখন তারা ত্রাণের জন্য জীবন বাজি রাখছে।” তিনি আরও বলেন, “গাজ্জায় বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঘাটতি চরমে পৌঁছেছে এবং সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। আমাদের কাজ যথাযথভাবে করার জন্য যথেষ্ট আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে না। আমরা এখনো চেষ্টা করছি ত্রাণসামগ্রী প্রত্যেক পরিবারের কাছে পৌঁছাতে।”
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ ও কর্মসংস্থান সংস্থার কমিশনার জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি মঙ্গলবার জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “গাজ্জায় চালু করা নতুন ত্রাণ ব্যবস্থাটি অপমানজনক, লজ্জাজনক এবং মর্যাদাহানিকর। এটি এক ধরনের মৃত্যুফাঁদ, যা মানুষকে বাঁচানোর চেয়ে অনেক বেশি প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “গাজ্জার সাধারণ মানুষের চোখে এখন ‘গাজ্জা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ অপমানের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের, বিশেষ করে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ ও কর্মসংস্থান সংস্থাকে, যথাযথভাবে সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে ত্রাণ দেওয়ার সুযোগ দিতে হবে।”
সোমবার একাধিক মানবাধিকার সংস্থা গাজ্জা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনকে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। তারা সতর্ক করে বলে, এই সংস্থার কার্যক্রম যুদ্ধাপরাধে সহযোগিতার ঝুঁকি তৈরি করছে।
গাজ্জায় চলমান ইসরাইলি আগ্রাসন ও অবরোধের কারণে মানবিক বিপর্যয় চরম আকার ধারণ করেছে। বারবার স্থানান্তর, নিরাপদ আশ্রয়ের অভাব, খাদ্য ও পানির সংকট এবং চিকিৎসাসেবার অপ্রাপ্তি—সব মিলিয়ে বাস্তুচ্যুত মানুষেরা এখন দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে।
সূত্র: আল জাজিরা









