মঙ্গলবার | ২৬ আগস্ট | ২০২৫

সাত মাসে সীমান্তে ২২ বাংলাদেশিকে হত্যা করে বিএসএফ

চলতি বছরের প্রথম সাত মাসেই সীমান্তে ২২ বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। আহত অন্তত ৩২ জন। প্রতিবারই ভারতের পক্ষ থেকে ‘ভুলবশত’ বা ‘জরুরি পরিস্থিতিতে আত্মরক্ষার জন্য’ গুলি ছোড়ার ব্যাখ্যা এলেও থেমে নেই এই হত্যাযজ্ঞ।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত গুলি করে মোট ৬০৭ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করে বিএসএফ। প্রতিবার আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আশ্বাস এলেও, বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হত্যা বন্ধ করতে হলে কেবল আলোচনা নয়, দরকার কঠোর কূটনৈতিক অবস্থান। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথাও উঠছে।

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রাম সীমান্তে ১৫ বছরের কিশোরী ফেলানী খাতুনকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ। তার মরদেহ ঝুলে ছিল কাঁটাতারে। সেই ছবি সারা বিশ্বের বিবেক নাড়িয়ে দিলেও, ভারতের মনোভাব পাল্টায়নি।

বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশি নাগরিকদের সীমান্তে গুলি করে হত্যা করলেও ভারত কোনোবারই দৃশ্যমানভাবে দায় স্বীকার করেনি। ২০২৩ সালেও বিজিবির সদস্য রইসউদ্দিনকে গুলি করে হত্যা করেছিল বিএসএফ, যার ব্যাখ্যা ছিল ‘ভুলবশত’।

চলতি বছরের শুরুতেই দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের যৌথ সম্মেলনে সীমান্তে প্রাণহানি শূন্যে নামিয়ে আনার ঘোষণা এসেছিল। কিন্তু বাস্তবে কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। একইভাবে ২০২৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২ জনে, যা আগের বছরের তুলনায়ও আশঙ্কাজনক।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, এটি নিঃসন্দেহে আইন-বহির্ভূত হত্যা।

তার মতে, যারা নিহত হয়েছেন তারা কেউই সশস্ত্র ছিলেন না। কাজেই আত্মরক্ষার প্রশ্নও ওঠে না। এই ধরনের ঘটনায় ভারতের সাধারণ জনগণকে বিষয়টি বোঝানো গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি সীমান্তে একটি স্বাধীন সিভিল কমিশন গঠনের পরামর্শ দেন।

ভারতের সঙ্গে চীন, মিয়ানমার, পাকিস্তানসহ আরও পাঁচটি দেশের স্থলসীমান্ত রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গেই শুধুমাত্র নিয়মিত প্রাণঘাতী ঘটনার নজির দেখা যায়। চীনের সঙ্গে নিরস্ত্র সীমান্ত পাহারার চুক্তি থাকলেও, বাংলাদেশ যখন এমন প্রস্তাব দেয়, তখন তা নিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

এই হত্যাকাণ্ডগুলো সরাসরি মানবাধিকার লঙ্ঘনের আওতায় পড়লেও এখন পর্যন্ত কোনো ঘটনায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিচার হয়নি।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর ফারুক বলেন, বাংলাদেশকে কূটনৈতিকভাবে স্পষ্ট এবং দৃঢ় প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে। প্রয়োজনে এই ইস্যু আন্তর্জাতিক আদালতে তোলা উচিত। তার মতে, এখনই সেই সময়।

এদিকে সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং গুলির ঘটনা বন্ধ করতে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে একটি নতুন সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। বিশ্লেষকরা আশা করছেন, এই সম্মেলনে বাস্তব কোনো সিদ্ধান্ত আসবে। কারণ এখন আর কেবল কথার কোনো মূল্য নেই, চাই কঠোর প্রয়োগযোগ্য ব্যবস্থা।

spot_img

এই বিভাগের

spot_img