শনিবার | ২৭ সেপ্টেম্বর | ২০২৫

আমি উন্নয়নশীল দেশ হতে সম্পদ পাচার রোধে আন্তর্জাতিক বিধান প্রয়োগের প্রস্তাব করছি: প্রধান উপদেষ্টা

দেশের পাচার হওয়া অবৈধ সম্পদ পুনরুদ্ধার করা বর্তমানে শীর্ষ অগ্রাধিকারে রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি ডলার অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। আমরা নিরলসভাবে এই সম্পদ ফেরত আনার চেষ্টা করছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আইনি প্রক্রিয়া এবং অন্যান্য নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার কারণে আমাদের এই প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর দৃঢ় সদিচ্ছা ছাড়া আমরা পাচার হওয়া অবৈধ সম্পদ পুনরুদ্ধারে সফল হব না। বিশ্বের বিদ্যমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা উন্নয়নশীল দেশ থেকে সম্পদের এই অবৈধ পাচার কার্যকরীভাবে প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিধি বিধানগুলো বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ট্যাক্স হেভেন এ বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ স্থানান্তরে উৎসাহিত করছে। তাই, যেসব দেশ ও প্রতিষ্ঠান এ পাচারকৃত সম্পদ গচ্ছিত রাখবার সুযোগ দিচ্ছে, তাদের আমি আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন এই অপরাধের শরিক না হয়, এ সম্পদ তার প্রকৃত মালিককে অর্থাৎ কৃষক, শ্রমিক ও সাধারণ করদাতাদের নিকট ফিরিয়ে দিন। আমি উন্নয়নশীল দেশ হতে সম্পদ পাচার রোধে কঠোর আন্তর্জাতিক বিধি বিধান প্রণয়ন এবং এর প্রয়োগ নিশ্চিতের প্রস্তাব করছি।

শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনের ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, জলবায়ু সংকট চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় বিশ্বজনীন তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্যমাত্রা আজ আমাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে। প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু সহায়তার প্রতিশ্রুতিও পূরণ হয়নি। বরং যে ক্ষুদ্র অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ হয়ে থাকে, তাও কাগজে কলমে দেখানো হচ্ছে বহুগুণ হিসেবে। এটি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড’ পুরোপুরি চালু করতে হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রশমনের উদ্যোগ যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি অভিযোজনেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। আর অভিযোজন প্রচেষ্টা হতে হবে দেশজ, স্থানীয়ভাবে নির্ধারিত ও পরিচালিত।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্থানীয়ভাবে সংবেদনশীল অভিযোজনের নীতিকে মূল ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেছে। আসন্ন কপ-৩০ সম্মেলনে আমরা তৃতীয় বারের মতো জলবায়ু পরিবর্তন রোধকল্পে আমাদের জাতীয় প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করবো, যেখানে জলবায়ুর পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রশমন লক্ষ্যের পাশাপাশি অভিযোজন উদ্যোগও থাকবে, গুরুত্ব পাবে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল রক্ষা ও জলাভূমি পুনরুদ্ধার। একইসঙ্গে আমরা আশা করি যে বৈশ্বিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে উচ্চ কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলো, তাদের দায়িত্বটুকু আন্তরিকভাবে পালন করবে।

spot_img
spot_img

এই বিভাগের

spot_img