দীর্ঘ ১৩ বছরের ধ্বংসাত্মক গৃহযুদ্ধ শেষে সিরিয়ার বিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে অগ্রসর হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বৈশ্বিক সম্পর্ক জোরদার হওয়ার প্রেক্ষাপটে পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকদের মধ্যে এক ধরনের সতর্ক আশাবাদ দেখা দিয়েছে।
অ্যাটলান্টিক কাউন্সিলের সিরিয়া প্রকল্পের নন-রেসিডেন্ট ফেলো ওমর ওজকিজিলসিক তুরস্কের আনাদোলু এজেন্সিকে বলেন, “সিরিয়ার অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য সবকিছু অনুকূলে দেখা যাচ্ছে, তবে এতে কিছুটা সময় লাগবে। আগামী এক থেকে দুই বছরে সিরিয়ার অর্থনীতি হয়তো খুব ভালো হবে না, তবে একটি গ্রহণযোগ্য অবস্থায় থাকবে। অন্তত এটি আর কোনো বিপর্যয় হবে না।”
তিনি জানান, বিদেশি বিনিয়োগের প্রত্যাবর্তন, নতুন সরকারের অধীনে প্রশাসনিক দক্ষতা এবং অবিশ্বাস্য গতিতে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, এসবই এই পুনরুদ্ধারের পেছনে মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে।
জাতিসংঘের আনুমানিক ৪০০ বিলিয়ন ডলার পুনর্গঠন খরচের তুলনায় সিরিয়ার পুনর্গঠনের ব্যয় কম হতে পারে বলেও মত দেন ওজকিজিলসিক।
তিনি বলেন, “সিরীয় জনগণ তাদের দেশ পুনর্গঠনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তাদের মধ্যে সেই ইচ্ছাশক্তি রয়েছে। তাদের প্রবাসী জনগণ, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অংশীদাররা সাহায্য করতে চায়। আর নিষেধাজ্ঞাগুলো যেভাবে দ্রুত তুলে নেওয়া হয়েছে, তা অভাবনীয়।”
সিরিয়ার ১৩ বছরের সিভিল যুদ্ধ দেশটিকে অর্থনৈতিকভাবে ধ্বংস করে দেয়। ২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে দেশটির জিডিপি অর্ধেকে নেমে আসে, কৃষি ও শিল্প উৎপাদন ভেঙে পড়ে এবং আমদানি নির্ভরতা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়।
বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালে সিরিয়ার জিডিপি ছিল ৩৭.১ বিলিয়ন ডলার, ২০২৩ সালে ৩৯.৫ বিলিয়ন এবং ২০২৪ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৯.৩ বিলিয়নে, যা যুদ্ধ-পূর্ব ২০১০ সালের ৬০ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় স্পষ্টভাবে কম।
জিডিপি-প্রতি মাথাপিছু আয়ও ২০১০ সালের ২,৮০০ ডলার থেকে ২০২২ ও ২০২৩ সালে নেমে দাঁড়িয়েছে ২,১০০ ডলারে।
নতুন সরকার, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি
গত ডিসেম্বরে বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর আহমাদ আল-শারাআ আল জুলানী সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর নেতৃত্বে এখন সিরীয় নাগরিকদের দেশ পুনর্গঠনে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
ওজকিজিলসিক বলেন, “আসাদ সরকার ছিল পৃষ্ঠপোষকতাবাদ, স্বজনপ্রীতি ও দুর্ব্যবস্থাপনার জন্য কুখ্যাত। কিন্তু নতুন অন্তর্বর্তী সরকার শাসন ও অর্থনীতি পরিচালনায় অনেক বেশি সক্ষম মনে হচ্ছে।”
বাথ পার্টির সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক নীতির বিপরীতে নতুন সরকার উদারবাজারভিত্তিক অর্থনীতি গ্রহণ করেছে।
ওজকিজিলসিক বলেন, “আমরা জানি, সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক মডেলের চেয়ে উন্মুক্ত বাজারনীতি অনেক বেশি কার্যকর ও ফলপ্রসূ।”
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং সর্বশেষ ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের মাধ্যমে সিরিয়া এখন আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ফিরে আসার পথ পেয়েছে।
ওজকিজিলসিক বলেন, “নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর সিরিয়াকে আর আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হতে কোনো বাধা নেই।”
তিনি আরও জানান, অনেক বিদেশি দেশ ও কোম্পানি এখন সিরিয়ায় বিনিয়োগ করতে সক্ষম, যা একদিকে দেশ পুনর্গঠনে সহায়ক হবে, অন্যদিকে তারা নিজেদেরও লাভবান করতে পারবে।
সূত্র : টিআরটি ওয়ার্ল্ড