শুক্রবার, মে ৩০, ২০২৫

ইস্তানবুল বিজয়ের ৫৭২ বছর : সুলতান মুহাম্মাদ ফাতেহের পথে চলার অঙ্গীকার এরদোগানের

spot_imgspot_img

ইস্তাম্বুল বিজয়ের ৫৭২তম বার্ষিকী উপলক্ষে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান বলেছেন, আজ আমরা ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় কাহিনিগুলোর একটি, ইস্তাম্বুল বিজয়ের ৫৭২তম বার্ষিকী স্মরণ করছি।

তিনি বলেন, ২৯ মে ১৪৫৩ সালে, কৌশল আর পরিকল্পনার এক উজ্জ্বল প্রতিভা, একটি বিশ্বাসী ও লক্ষ্যভিত্তিক সেনাবাহিনী নিয়ে ইস্তাম্বুল জয় করেছিলেন।

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ৫৩ দিন ধরে চলা অবরোধ মাত্র ২১ বছর বয়সী ফাতিহ সুলতানের নেতৃত্বে চোখ ধাঁধানো এক বিজয়ের মধ্যে শেষ হয়েছিল। ৫৩ দিন কী মহিমান্বিত দৃশ্য ছিল, যেন মানুষের জেগে দেখা এক স্বপ্ন। আজ সেই মহান স্মৃতির ৫০০ বছর পেরিয়ে গেছে, তবুও সেই ৫৩ দিনের দৃশ্য যেন এখান থেকেও চোখে পড়ে। মরহুম ইয়াহিয়া কামাল, উস্কুদার থেকে বিজয়ের দৃশ্য ৫ শতাব্দী পর এই কবিতার মাধ্যমে আমাদের হৃদয়ে এঁকে দিয়েছিলেন।

এরদোগান বলেন, যিনি যুগ বদলে দিয়ে এই বিজয় জাতিকে উপহার দিয়েছিলেন সেই ফাতিহ সুলতান মুহাম্মাদ এবং তার সেনাবাহিনীকে আমি দোয়া ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি। ফাতিহের এই ৫৭২তম বার্ষিকী মোবারক হোক। আল্লাহ তাকে, সেই সেনাবাহিনীকে, সেই সেনাপতিকে খুশি করুন।

বিজয় ছিল জ্ঞান, অধ্যবসায় ও বিশ্বাসের ফসল

বক্তব্যে প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেন, ইস্তাম্বুল এর আগে চারবার ওসমানী বাহিনী দ্বারা ঘেরা হয়েছিল, কিন্তু কোনোভাবেই দখল করা যায়নি। ফাতিহ ১৯ বছর বয়সে সিংহাসনে বসেই নতুন পদ্ধতি, নতুন প্রযুক্তি ও নতুন অস্ত্র তৈরি করতে উদ্যোগী হন।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, তিনি একদম শুরু থেকেই কঠোর পরিশ্রমে নেমে পড়েন। অজেয় বলা হতো এমন দেয়াল ভাঙার জন্য সারুছা উস্তাকে দিয়ে নতুন কামান বানান। এসব কামানের গোলা শত শত কেজি ওজনের ছিল। তিনি প্রথমে এডিরনেতে তা পরীক্ষা করেন, পরে ইস্তাম্বুলে নিয়ে আসেন। প্রতিটি ধাপ তিনি নিজে পর্যবেক্ষণ করতেন।

এরদোগান বলেন, ৬ এপ্রিল শুরু হওয়া অবরোধের প্রথম এক মাসে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য না এলে, পরের ২৩ দিনে যেসব সাফল্য এসেছে তা এক ঐতিহাসিক বিজয়ের ভিত্তি তৈরি করে। ফাতিহ পাহাড় বেয়ে নৌকা তুলে এনে বিজয়ের জন্য অসাধারণ পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলেন। এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। শাহি নামে পরিচিত নতুন কামান দিয়ে যখন দেয়াল ভাঙা শুরু হয়, তখন থেকেই অবরোধের চিত্র পাল্টে যায়। প্রথম গর্ত তৈরি হয় টপকাপিতে, প্রথম পতাকা ওড়া শুরু হয় সেখানেই।

তিনি আরও বলেন, ২৯ মে’র দুপুরে ইস্তাম্বুল ও আয়াসোফিয়া চিরতরে আমাদের হয়ে যায়। যে ধৈর্য ধরে, সে জয় লাভ করে এই কথাটি আবারও সত্য হয়ে উঠে। বিশ্ব ৫৭২ বছর আগে ঠিক এমন এক পরিবেশে এক নতুন যুগের জন্ম ও নতুন শাসনব্যবস্থার সূচনার সাক্ষী হয়েছিল। এরপর থেকে ইস্তাম্বুল, আমাদের সভ্যতা এবং পুরো মানবজাতির জন্য এক অনন্য অবদান রেখেছে। জ্ঞান, সংস্কৃতি, শিল্প, স্থাপত্য, সব ক্ষেত্রেই ইস্তাম্বুল এক উজ্জ্বল তারকা হয়ে উঠেছে।

আধুনিক প্রকৌশলের পথিকৃৎ ফাতিহ

এরদোগান বলেন, ১০৪৮ সালে পাসিনলারে বপন করা বীজ ১০৭১ সালের মালাজগির্ত বিজয়ে যেমন ফল দেয়, এবং তারপর চলতে থাকে অটল বিশ্বাসের পথ ধরে ভারনা, নিগবুলু, চালদিরান, রিদানিয়ে আর প্রেভেজায়, ঠিক তেমনি ইস্তাম্বুল বিজয়ও ছিল আমাদের জাতীয় পরিচয়ের ঘোষণা, বিশ্বজুড়ে একটি গর্বিত পরিচয়ের প্রতিষ্ঠা।

ফাতিহ শুধু একজন সফল সেনাপতি বা শাসক ছিলেন না, তিনিই ছিলেন এক উজ্জ্বল জ্ঞানী ও আধুনিক প্রকৌশলের পথিকৃৎ। তার বানানো শাহি কামান তৎকালীন যুদ্ধপ্রকৌশলের ধারা বদলে দেয়। পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে পাওয়া সেই উদ্ভাবনী চেতনা আমরা আজও ধরে রেখেছি।

তিনি বলেন, আমরা আজ ড্রোন, সশস্ত্র ড্রোন, পানির নিচে চলা যন্ত্রসহ আরও অনেক প্রযুক্তির মাধ্যমে বর্তমান যুদ্ধ নীতিকে বদলে দিচ্ছি। আমরা সদ্য আমাদের ওসমান গাজী জাহাজকে কৃষ্ণসাগরে পাঠিয়েছি। ইনশাআল্লাহ, সেই জাহাজ সমুদ্রের নিচে গবেষণা চালিয়ে গ্যাস উত্তোলন করবে এবং এই গ্যাস জনগণকে স্বস্তি দেবে।

টেকনোফেস্ট প্রজন্ম ও নতুন তুরস্ক

এরদোগান বলেন, যে খাতে আমরা দীর্ঘদিন অন্যের দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলাম, সেই প্রতিরক্ষা শিল্পেই আজ আমরা এমন এক দেশ হয়ে উঠেছি যার দরজায় এখন অন্যরা কড়া নাড়ে।

আমাদের তরুণ প্রকৌশলীরা, ফাতিহ ও তার বিজয় থেকে পাওয়া চেতনার মশাল বহন করে চলেছে। তারা প্রতিদিন নতুন ইতিহাস লিখছে। মনে রাখুন, CHP’র লোকজন দেয়ালে লিখেছিল জুলুম ১৪৫৩-তে শুরু হয়েছে। অথচ এই ব্যর্থ মানসিকতার বিপরীতে আজকের টেকনোফেস্ট প্রজন্ম গৌরবময় পূর্বপুরুষদের পথ অনুসরণ করে তুরস্ককে নতুন দিগন্তে নিয়ে যাচ্ছে।

আমি এখন যে তরুণদের সামনে দেখছি, আমি বিশ্বাস করি তারাই হলো সেই তরুণ যারা পূর্বপুরুষদের আত্মাকে আনন্দিত করবে। মরহুম নুরেত্তিন তপচু হোচা বলেছেন, যুগ পরিবর্তন হোক বা না হোক, চিরজীবী আত্মা হলো ফাতিহ, ইয়াভুয ও ইলদিরিমের আত্মা।

প্রিয় তরুণরা, এই আত্মাকে ভুলে যেও না, তোমরাই তাকে জীবন্ত রাখবে। তোমরাই তুরস্ককে শতবর্ষের স্বপ্নের সঙ্গে মিলিয়ে দেবে। আমাদের গর্বের পতাকা বিশ্বজুড়ে তোমরাই ওড়াবে।

সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি

সর্বশেষ

spot_img
spot_img
spot_img