চাঁদ দেখার ভিত্তিতে সাধারণত একই সময়ে ঈদ উদযাপিত হয়ে থাকে আরব বিশ্বের দেশগুলোতে। কিন্তু ১৪৪৬ হিজরী বর্ষে ঘটছে এর উল্টো। ২৯ মার্চ শনিবার সৌদি, আরব আমিরাত, কাতারের মতো দেশগুলোর আকাশ সীমায় চাঁদ দেখা গেলেও মিশর, সিরিয়ার মতো দেশগুলোতে তা দেখা যায়নি।
এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও দেখা দেয় বিতর্ক। প্রশ্ন উঠে সৌদি, আমিরাত, কাতার আদৌ ঈদুল ফিতর বা শাওয়ালের চাঁদ দেখেছে তো? কেননা এদিন সৌদি ও এর আশপাশের বিভিন্ন দেশে দুপুরে সূর্যগ্রহণ হয়েছিলো। বিকালে সৌদির আকাশ চাঁদ দেখা যাওয়ার মতো যথেষ্ট পরিচ্ছন্নও ছিলো না। সংবাদমাধ্যমের লাইভে দেশটির বিভিন্ন অংশের চাঁদ দেখা কমিটি এও বলছিলেন যে, সূর্যগ্রহণ হওয়ায় আজ চাঁদ দেখা যাওয়া একপ্রকার অসম্ভব। কিন্তু তুমাইর এলাকা থেকে আল-বারগাশী নামক ব্যক্তি মাগরিব হতে না হতেই জানিয়ে দেন তিনি তার অবস্থান থেকে স্পষ্টভাবে শাওয়ালের চাঁদ দেখেছেন।
এসময় আরব আমিরাত, কাতার সহ অন্যান্য আরব দেশগুলোও তাদের চাঁদ দেখা না দেখার ব্যাপারে ফলাফল জানাতে শুরু করে।
যেসব আরব দেশ চাঁদ দেখার দাবী করেছে ও ৩০ মার্চ রবিবার ঈদ:
১. সৌদি আরব ২. ইয়েমেন ৩. আরব আমিরাত ৪. কুয়েত ৫. কাতার ৬. বাহরাইন ৬. সুদান ৭. সোমালিয়া ৮. ফিলিস্তিন ও লেবানন।
যেসব আরব দেশে চাঁদ দেখা যায়নি ও ঈদ ৩১ মার্চ সোমবার:
১. মিশর ২. জর্ডান ৩. সিরিয়া ৪. ইরাক ৫. তিউনিসিয়া ৬. আলজেরিয়া ৭. লিবিয়া ৮. আম্মান ও ৯. মরক্কো।
সৌদি ও অন্যান্য আরব দেশের চাঁদ দেখা ও ৩০ মার্চ রবিবার ঈদুল ফিতরের ঘোষণা বিতর্কের জন্ম দিলেও মধ্য এশিয়ার দেশ আফগানিস্তান উল্টো বাহবা কুড়ায়। কেননা দেশটির দায়িত্বশীলেরা চাঁদ প্রমাণিত হওয়ার বিষয়টি পূর্ণ স্বচ্ছতার সাথে জনগণের সামনে তুলে ধরেন। হানাফি ফিকাহর অনুসরণে চাঁদ দেখার স্বপক্ষে প্রতিনিধি মারফত সরাসরি সাক্ষ্যও গ্রহণ করেন। অপরদিকে আরবের বিভিন্ন দেশে, বিশেষত সৌদি আরবে দু’জন চাঁদ প্রত্যক্ষদর্শীর দাবীই চাঁদ প্রমাণিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট গণ্য করা হয়।
প্রসঙ্গত, এতদিন যাবত আরব বিশ্বের দেশগুলোতে চাঁদ দেখার উপর ভিত্তি করে একই দিনে রোজা শুরু ও ঈদ উদযাপিত হতো। এতে বিভিন্ন অনারব রাষ্ট্রের লোকজন কামনা করতেন ঐক্যবদ্ধ জাতির বার্তা স্বরূপ আরবদের সাথে মিলিয়ে একই দিনে রোযা ও ঈদ উদযাপনের। যা বিভিন্ন কারণে বাস্তবসম্মত নয়।
এছাড়া আরব দেশগুলোর এবারের ঈদ সকলের জন্য বাস্তবতা নিয়ে হাজির হয়। দেখিয়ে দেয়, নিজ নিজ দেশের আকাশে চাঁদ দেখে রোযা শুরু ও চাঁদ দেখে রোযা শেষ করার মাঝেই কল্যাণ। নিজ নিজ দেশের আকাশ সীমায় চাঁদ দেখা যাওয়ার কারণেই তারা রোযা শুরু ও ঈদ উদযাপন করে থাকেন। যা চাঁদ দেখা সাপেক্ষে কাকতালীয়ভাবে সেই দেশের সাথে এতদিন মিলে যেতো যাদের ভূখণ্ড থেকে ধীরে ধীরে ইসলাম বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। যাদের ভূখণ্ডে রয়েছে মহান আল্লাহর ঘর কা’বা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা।