সিরিয়ার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নে এক ঐতিহাসিক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। দামেস্কে প্রেসিডেনশিয়াল প্রাসাদে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এতে তুরস্ক, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কোম্পানি অংশ নেয়। সাতশ কোটি ডলারের এই চুক্তির মাধ্যমে সিরিয়ায় পাঁচ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
বুধবার (২৮ মে) স্বাক্ষরিত এই চুক্তিতে অংশ নেয় তুরস্কের ক্যালিয়ন হোল্ডিং ও জেঙ্গিজ হোল্ডিং, কাতারের ইউসিসি কনসেশন ইনভেস্টমেন্টস এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি। তারা সম্মিলিতভাবে একটি কনসোর্টিয়াম গঠন করে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।
এই প্রকল্পের আওতায় সিরিয়ার ত্রাইফাওয়ি, যায়জুন, দেইর আজ-জোর ও মাহারদেহ এলাকায় চার হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ওয়েদিয়ান আলরাবি এলাকায় এক হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।
প্রতিবছর এই কেন্দ্রগুলো চালু হলে প্রায় পঁইত্রিশ হাজার কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলো তিন বছরের মধ্যে এবং সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি দুই বছরের মধ্যে চালু করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সিরিয়ার জ্বালানি ও বিদ্যুৎমন্ত্রী মুহাম্মাদ বাশীর বলেন, “আজ আমরা সিরিয়ার শক্তি ও বিদ্যুৎ খাতে এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হচ্ছি। এই গুরুত্বপূর্ণ খাতের ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামো আমরা পুনরায় গড়ে তুলছি। এই সমঝোতা জ্বালানি খাতে আঞ্চলিক সহযোগিতা ও সংহতি বাড়াবে। পরিচ্ছন্ন ও নবায়নযোগ্য শক্তির প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সহায়তা করবে। এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অংশ নেওয়া প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ, যারা প্রত্যেকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে।”
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের আঙ্কারাভিত্তিক রাষ্ট্রদূত ও সিরিয়াবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি টম ব্যারাক। তিনি বলেন, “এমন মুহূর্ত বারবার আসে না। যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সব প্রচেষ্টা নতুন সিরিয়া সরকারের স্বার্থেই নিবেদিত। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তেরো মে তারিখে সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি এবং সিরিয়া সরকারকে সমর্থনের অঙ্গীকার আবার জানাচ্ছি। চার দেশের পতাকা একসাথে উড়ছে, এটা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।”
তুরস্কের ক্যালিয়ন হোল্ডিং-এর চেয়ারম্যান জামাল ক্যালিয়নচু বলেন, “একটি দেশীয় ও জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা একাশি বছরে যে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করেছি, তা আমাদের প্রকল্পগুলোতে কাজে লাগিয়ে দেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সফলভাবে নিজেকে উপস্থাপন করেছি। আমরা অনেক বড় বড় প্রকল্প করেছি যা দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমাদের বিনিয়োগের মাধ্যমে আমরা তুরস্কে স্থানীয় ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে সহায়তা করেছি। এতে দেশের জ্বালানি স্বাধীনতা এবং বিশ্বের সবুজ রূপান্তরে বড় ভূমিকা রেখেছি। ইউরোপের সবচেয়ে বড় সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র কারাপিনার জিইএস এবং বিশ্বের অন্যতম আধুনিক উৎপাদন কেন্দ্র ক্যালিয়ন পিভি আমাদের অর্জন। আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে দুইশ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছি এবং আগামী তিন বছরে আরও একশ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ করব।”
সিরিয়ার নতুন এই প্রকল্প প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “রোমানিয়ায় কাজ করার পর এবার সিরিয়ার মতো প্রতিবেশী দেশে সম্মানিত অংশীদারদের সঙ্গে এ ধরনের বড় প্রকল্পে অংশ নিতে পেরে আমরা খুশি। আমাদের প্রকৌশল দক্ষতা, ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা এবং সমস্যা সমাধানে মনোযোগী কাজের মাধ্যমে আমরা সিরিয়ার জ্বালানি নিরাপত্তায় অবদান রাখতে চাই। আমি বিশ্বাস করি এই সহযোগিতা আঞ্চলিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতায় সাহায্য করবে। আমি চাই, এই কাজ সবার জন্য কল্যাণকর হোক।”
চুক্তি স্বাক্ষরের পর তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জামাল ক্যালিয়নচু বলেন, “আজ দামেস্কে আমরা অনেক বড় একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। আমরা সিরিয়ার বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। আমাদের শক্তিশালী অংশীদার ও সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। ইনশাআল্লাহ, আমরা খুব দ্রুত এই প্রকল্পের কাজ শুরু করব।”
তিনি আরও বলেন, “এই প্রকল্পটি সিরিয়ায় আমাদের প্রথম কাজ। আমরা ভবিষ্যতে বিমানবন্দরসহ আরও বিভিন্ন খাতে কাজ করতে চাই। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। আমি মনে করি, সিরিয়ার ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল।”
তিনি বলেন, “সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ শারাআ আমাদের এই প্রকল্প বাস্তবায়নের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমরা এই সহযোগিতায় খুবই সন্তুষ্ট। আমি বিশ্বাস করি, আমরা একটি ভালো, কার্যকর ও ফলপ্রসূ কাজ উপহার দিতে পারব।”
সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি ও ইয়েনি শাফাক