রবিবার, জুন ১, ২০২৫

ফারাবীসহ সকল মজলুম বন্দীদের মুক্তির দাবিতে বৈষম্যহীন কারামুক্তি আন্দোলনের বিক্ষোভ

spot_imgspot_img

ইসলামপন্থী মজলুম ব্লগার শাফিউর রহমান ফারাবীসহ সকল মজলুম বন্দীর মুক্তির দাবিতে বৈষম্যহীন কারামুক্তি আন্দোলনের বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার (৩০ মে) বাদ জুমা রাজধানীর বাইতুল মোকাররমের উত্তর গেইটে সংগঠনের সভাপতি মাওলানা মীর ইদরীসের সভাপতিত্ব ও সেক্রেটারী মুফতী শফিকুল ইসলামের পরিচালনায় এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, খেলাফত আন্দোলন (একাংশ)-এর মহাসচিব মুফতী ফখরুল ইসলাম, বিশিষ্ট আলেম মুফতী জসীম উদ্দিন রহমানি, ইসলামী চিন্তাবিদ আহমাদ রফিক, বিশিষ্ট আলেম ও আলোচক মুফতী মাহমুদুল হাসান গুনভী, লেখক ও গবেষক আসিফ আদনান, বৈষম্যহীন কারামুক্তি আন্দোলনের জয়েন সেক্রেটারি মাওলানা মুহাম্মাদ ইসহাক খান, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আল আমিন সাকি, অর্থ সম্পাদক মাওলানা সাইফুল ইসলাম, বন্দি পরিবারের সদস্য মাওলানা শেখ ফরিদের বড় ভাই মাওলানা শাফায়াত হুসাইন ও ইঞ্জিনিয়ার মোজাম্মেল হক সাইমনের ছোট ভাই আব্দুল্লাহ, খেলাফত ছাত্র আন্দোলন (একাংশ)-এর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী আশিক আল আবিদ প্রমূখ।

সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা মীর ইদরীস বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে দেশে ইসলামফোবিয়া ছড়িয়ে দেয়। আন্তর্জাতিক ইসলামবিদ্বেষী শক্তির সমর্থন পেতে তারা ‘জঙ্গিবাদবিরোধী’ নামে এক ভয়ঙ্কর রাষ্ট্রীয় নাটক পরিচালনা করে। এই ষড়যন্ত্রের মূল লক্ষ্য ছিল ইসলামপন্থী কণ্ঠরোধ, দ্বীনদার সমাজকে আতঙ্কিত করা এবং নিজেদের সেকুলার ভাবমূর্তি তৈরি করা।

তিনি বলেন, এই জঙ্গি নাটকের শিকার হয়েছেন রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, ইমাম, সমাজকর্মী, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এবং সাধারণ গরিব মুসলমানরা। বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করে বহু নিরপরাধ নাগরিককে সাজানো মামলায় দণ্ডিত করা হয়েছে। একের পর এক গায়েবি মামলায় দ্বীনদার মুসলমানদের ‘জঙ্গি’ হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

মাওলানা মীর ইদরীস বলেন, আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি, সেই সময়ের অনেক ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিও নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে খালাস পাচ্ছেন। কিন্তু এই খালাস কেবল বিত্তশালী ও প্রভাবশালীদের জন্য। সহজ-সরল দ্বীনদার ও আর্থিকভাবে দুর্বল বহু মানুষ আজও কারাগারে অমানবিক জীবন যাপন করছেন।

তিনি বলেন, শাফিউর রহমান ফারাবী, মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা শেখ ফরিদ, মুফতী আব্দুল হাই, মুফতী শফিকুর রহমান এবং মাওলানা আমিরুল ইসলাম কেউই অপরাধী নন। তাঁদের অপরাধ একটাই, তাঁরা দ্বীনদার, উম্মাহর পক্ষে কণ্ঠ তুলেছেন, জুলুমের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।

তিনি বলেন, বিচারব্যবস্থাকে কোনো রাজনৈতিক শক্তির হাতিয়ার বানানো চলবে না। দলীয় বিচার কখনও ন্যায়বিচার হতে পারে না। তাই একটি ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গড়তে হলে বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন আইনগত সুরক্ষা ও পূর্ণ স্বাধীনতা।

তিনি আরও বলেন, আমরা আদালতের প্রতি আহ্বান জানাই, মামলায় ধারার ভিত্তিতে নয়, বরং রাজনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে বিচার করুন। বিগত সরকারের সাজানো মামলা বাতিল করে শাফিউর রহমান ফারাবীসহ সকল মানবাধিকার বঞ্চিত মজলুমের মুক্তি দিন। এটি মানবতার প্রশ্ন, ইনসাফের প্রশ্ন।

মাওলানা মীর ইদরীস মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে আল্লাহ বা রাসূল ﷺ কে কটাক্ষকারী ইসলাম বিদ্বেষী সেকুলারদের মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, মামলা নেওয়া হচ্ছে না। অন্যদিকে কোনো দ্বীনদার মুসলমান বিশ্বজুড়ে মুসলিম নিপীড়নের প্রতিবাদ করেন কিংবা জুলুমের বিরুদ্ধে জিহাদের কথা বলেন, তখন তাঁকে ‘জঙ্গি’ আখ্যা দিয়ে কারাবন্দি করা হয়। এসব আর চলতে পারে না।

শেষে তিনি বলেন, বৈষম্যহীন কারামুক্তি আন্দোলন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানবাধিকার বঞ্চিত সকল নিরীহ মজলুমের পাশে আছে, থাকবে ইনশাআল্লাহ। যতদিন মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার না হয় এবং সকল মজলুম কারা বন্দী মুক্তি না পায়, ততদিন আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলবে।

বায়তুল মোকাররম থেকে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে মিছিল সহ শাপলা চত্বর যায়। শাপলা চত্বর থেকে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের সমাপ্তির আগে জেনারেল সেক্রেটারী মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম সরকারের কাছে নিম্নোক্ত পাঁচ দফা দাবি পেশ করেন—

১. শাফিউর রহমান ফারাবীসহ সকল নিরীহ দ্বীনদার বন্দীর অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
২. মিথ্যা মামলাগুলোর তদন্তের জন্য স্বাধীন কমিশন গঠন করতে হবে।
৩. সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ক্ষমতা আইন সংশোধন করে অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
৪. বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে।
৫. মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে ইসলাম অবমাননা বন্ধে আইন প্রণয়ন করতে হবে।

সর্বশেষ

spot_img
spot_img
spot_img