মঙ্গলবার | ৩০ ডিসেম্বর | ২০২৫
spot_img

পাকিস্তানের তুলনায় আফগানিস্তানে নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার বেশি: মাহমুদ আসাকজাই

পাখতুনখাওয়া মিল্লি আওয়ামি পার্টির (পিকেএমএপি) চেয়ারম্যান মাহমুদ খান আসাকজাই বলেছেন, বর্তমানে আফগানিস্তানে পাকিস্তানের তুলনায় বেশি নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার আছে। তিনি বলেন, ইসলামাবাদ আফগান জনগণের ওপর নিজের কোনো দাবি বা শর্ত চাপিয়ে দিতে পারবে না।

পাকিস্তানের একটি পডকাস্টে আঞ্চলিক ইতিহাস ও আফগানিস্তান বিষয়ে পাকিস্তানের নীতি নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

মাহমুদ খান আসাকজাই বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের আফগানিস্তান আক্রমণের পর আমেরিকা পাকিস্তানের সহযোগিতায় ব্যাপক গোয়েন্দা কার্যক্রম চালায়, ফলে আফগানিস্তান দীর্ঘ সময় ধরে একটি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়।

তিনি বলেন, এই সংঘাত থেকে কৌশলগত লাভ হয়েছে পাকিস্তান ও আমেরিকার, কিন্তু মানবিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতির বোঝা সবচেয়ে বেশি বহন করতে হয়েছে আফগান জনগণকে।

আফগান শরণার্থীদের ব্যাপারে পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়েও তিনি কঠোর সমালোচনা করেন এবং বলেন, সংসদীয় কমিটিগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে শরণার্থীদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার আহ্বান জানালেও বাস্তবে তাদের রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে এবং কৌশলগত স্বার্থে শোষণ করা হয়েছে। তার ভাষায়, পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে আফগানদের বিশেষ করে দরিদ্র পশতুদের সস্তা শ্রমশক্তি (মাজদুর) হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছে। পাশাপাশি, আফগানিস্তান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বাধীনভাবে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করলে পাকিস্তান সেসব প্রচেষ্টায় সবসময় অস্বস্তি বোধ করেছে।

তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ব্যবস্থায় শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও ন্যায়বিচারের অভাব রয়েছে। এ কারণে দেশটি আঞ্চলিক কোনো দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়নি।

মাহমুদ আসাকজাই বলেন, “পাকিস্তান নিজের জনগণকেই ব্যবহার করছে এবং ন্যায়বিচার থেকে সরে গেছে। আফগানিস্তানে এখনো তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী প্রজাতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক চেতনা বিদ্যমান।”

মেয়েদের শিক্ষা ও অন্যান্য সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিষয় নিয়ে তিনি বলেন, আফগানিস্তান দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি হস্তক্ষেপের শিকার, বিশেষ করে রাশিয়া ও আমেরিকার। এই শক্তিগুলো আফগানিস্তানের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক কাঠামো ভেঙে দিয়েছে এবং পরে কোনো অর্থবহ সহায়তা ছাড়াই দেশটিকে পরিত্যাগ করেছে।

তিনি তেহরিকে তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) বিষয়ে পাকিস্তানের নীতিকেও বিভ্রান্তিকর হিসেবে আখ্যা দেন। আসাকজাই বলেন, অতীতে পাকিস্তান ধর্মীয় মাদ্রাসাগুলোকে সামরিকীকরণ করেছে এবং পরবর্তীতে সেই পরিস্থিতির দায় ইমারাতে ইসলামিয়ার ওপর চাপিয়েছে।

অনুষ্ঠানে পানি সম্পদ ও শরণার্থী ইস্যুর মতো বিষয়ে আফগানিস্তানের ওপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টাকে তিনি ইসলামাবাদের রাজনৈতিক দুর্বলতারই প্রতিফলন বলে মন্তব্য করেন।

আফগান শরণার্থীদের জোরপূর্বক প্রত্যাবাসনের ঘটনাকে তিনি স্পষ্ট অবিচার হিসেবে নিন্দা জানান এবং সতর্ক করে বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য একদিন পাকিস্তানকে অবশ্যই জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে।

বক্তব্যের উপসংহারে মাহমুদ খান আসাকজাই বলেন, আফগানিস্তানের পুনর্গঠন সম্পূর্ণভাবে আফগান জনগণের ইচ্ছা ও সংকল্পের ওপর নির্ভরশীল। তিনি উল্লেখ করেন, ইতিহাস প্রমাণ করে, বিদেশি শক্তিগুলো সবসময় নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য একটি দুর্বল ও নির্ভরশীল আফগানিস্তানকেই পছন্দ করেছে।

সূত্র: আরিয়ানা নিউজ

spot_img
spot_img
spot_img
spot_img

সর্বশেষ