বৃহস্পতিবার | ১৮ সেপ্টেম্বর | ২০২৫

অমীমাংসিত পশ্চিম সাহারায় মরক্কোর সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দিলো ইসরাইল

পশ্চিম সাহারায় মরক্কোর সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দিয়েছে ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল।

সোমবার (১৭ জুলাই) মরক্কোর রাজদরবার থেকে এবিষয়ে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, মরক্কান বাদশাহ মুহাম্মদ (৬ষ্ঠ) এর নিকট ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর লিখিত একটি চিঠি হস্তগত হয়েছে। চিঠিতে পশ্চিম সাহারার উপর মরক্কোর সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে ইহুদিবাদী দেশটির অবস্থান স্পষ্ট করেছেন তিনি। এছাড়া পশ্চিম সাহারার দাখলায় একটি কনস্যুলেট খোলার আগ্রহও প্রকাশ করেন তিনি।

উল্লেখ্য, পশ্চিম সাহারা, ১৯৭৫ সালে স্পেনিশ উপনিবেশ শেষ হওয়ার আগ থেকে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে যাওয়া ইউরোপ ঘেঁষা একটি আফ্রিকান অঞ্চল। ২ লক্ষ ৬৬ হাজার বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই অঞ্চলটি আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর প্রান্তে আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে ইউরোপের অতি নিকটে নিকটে অবস্থিত।

প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদ, গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক অঞ্চল ও ভৌগোলিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত হওয়ায় এই অঞ্চলটির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ১৯৭৫ এর আগ পর্যন্ত উপনিবেশিক পরাধীনতার সময় এই অঞ্চলটি বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কেন্দ্র ও নৌ-বন্দরে হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে পড়ে স্পেনের সামর্থ কমতে থাকলে তারা পশ্চিম সাহারা ছেড়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত নেয়। কেননা পশ্চিম সাহারা স্বাধীন করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত ‘পোলিসারিও ফ্রন্টের’ হামলাও দিন দিন তীব্র হচ্ছিলো। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছিলো। অপরদিকে জাতিসংঘও আলজেরিয়া, মরক্কো ও মৌরিতানিয়ার দাবীর প্রেক্ষিতে ১৯৬৫ থেকে স্পেনকে তাদের উপনিবেশ গুটিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করে যাচ্ছিলো। ফলে স্প্যানিশ সামরিক শাসক ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কো অঞ্চলটি থেকে উপনিবেশের অবসান ঘটাতে বাধ্য হয়।

এরই মধ্যে আবার তৎকালীন মরক্কান বাদশাহ হাসান (২য়) অঞ্চলটি দখলে একটি অভাবনীয় কৌশল গ্রহণ করেন। যা ইতিহাসে গ্রিন মার্চ নামে পরিচিত। তিনি পশ্চিম সাহারাবাসীর মতামত ও স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খার তোয়াক্কা না করেই মরক্কানদেরকে জাতীয় পতাকা কাঁধে পশ্চিম সাহারা অভিমুখে মার্চ করার নির্দেশ দেন। এতে করে অঞ্চলটির অধিকাংশ অঞ্চল মরক্কোর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। আর মৌরিতানিয়া বাকি অংশে তাদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে।

পরবর্তীতে ১৯৭৫ এর ১৪ নভেম্বর রাজধানী মাদ্রিদে স্পেন, মরক্কো ও মৌরিতানিয়ার মাঝে একটি চুক্তি সাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে অঞ্চলটির উত্তরাংশ মরক্কোকে এবং দক্ষিণাংশ মৌরিতানিয়ার কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে স্প্যানিশ উপনিবেশের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তিও ঘটে। তবে অঞ্চলটির স্বাধীনতাকামী পোলিসারিও ফ্রন্ট এই চুক্তি মেনে নেয়নি। তারা একে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে। আর স্বাধীনতার লক্ষ্যে সশস্ত্র সংগ্রামও অব্যাহত রাখে।

এই সংগ্রামে তাদের মদদ দিয়ে যাচ্ছিলো মরক্কো, মৌরিতানিয়ারই প্রতিবেশী রাষ্ট্র আলজেরিয়া। ১৯৭৯ সালে মৌরিতানিয়া এক সময় আলজেরিয়া সমর্থিত পোলিসারিও ফ্রন্টের কাছে নিজেদের দখল হারিয়ে বসে। আর পশ্চিম সাহারার দাবী ছেড়ে দেয়। এতে করে ভৌগোলিক ভাবে অতি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলটির ২০ শতাংশ জায়গাজুড়ে স্থানীয়দের (পোলিসারিও ফ্রন্টের) নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়। তবে তীব্র গেরিলা হামলার মুখেও মরক্কো এই অঞ্চলটি থেকে পিছু হটেনি এবং দাবীও ছাড়েনি।

বরং মরক্কো পোলিসারিও গেরিলাদের প্রতিহত করতে করতে ১৯৮৭ সালের ১ এপ্রিল ১৭ হাজার মাইল দীর্ঘ একটি প্রাচীর তৈরি করে। যার নির্মাণকাজ ৬ ধাপে শেষ করা হয়েছিলো আর সময় লেগেছিলো প্রায় ৭ বছর।

১৯৯১ সালে বিবাদ ও সংঘর্ষে লিপ্ত দু’পক্ষের মাঝে যুদ্ধবিরতি বা শান্তি চুক্তি সম্পাদিত হলেও পরবর্তীতে তারা আবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এই চুক্তি অনুযায়ী গণভোট আয়োজনের কথা ছিলো। কিন্তু পরাশক্তিধর রাষ্ট্র আমেরিকা ও ফ্রান্সের প্রকাশ্য মদদে মরক্কো ওই গণভোট বানচাল করে দেয়।

সেই থেকে পশ্চিম সাহারাবাসী আজও তাদের পুরো ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ পেতে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। আর এতে তাদের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে আরেক আফ্রিকান আরব রাষ্ট্র আলজেরিয়া।

তবে মরক্কোও বসে নেই। ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের সাথে গোপন সম্পর্ক থাকলেও ২০২০ সালের ডিসেম্বরে আমেরিকার মধ্যস্থতায় আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন করে তারা। এর পরপরই আমেরিকা তাদের কাছে ১০০ কোটি ডলার সমমূল্যের অস্ত্র বিক্রির ঘোষণা দেয়।

সূত্র: আল জাজিরা

spot_img
spot_img

এই বিভাগের

spot_img