গাজ্জা পুনর্গঠন ও সম্পূর্ণরূপে সেনা প্রত্যাহারে ইসরাইল-আমেরিকার হঠকারিতা মোকাবিলায় বা গাজ্জা যুদ্ধবিরতি চুক্তির ২য় ধাপ বাস্তবায়নে জরুরী বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন আরব নেতারা।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) আজ কায়রোতে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তির ২য় ধাপে না গিয়ে উল্টো ১ম ধাপের মেয়াদ বাড়ানোর অপচেষ্টা ও আমেরিকা কর্তৃক ফিলিস্তিনিদের উৎখাত করে গাজ্জা পুনর্গঠনের হঠকারিতা মূলক প্রস্তাব কিভাবে মোকাবিলা করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হবে।
চুক্তি মোতাবেক গাজ্জা পুনর্গঠন, সম্পূর্ণরূপে ইসরাইলী সেনা প্রত্যাহার ও নতুন বন্দী বিনিময় প্রক্রিয়া শুরু, ফিলিস্তিনিদের উৎখাত রোধ, সহায়তা প্রবেশে ইসরাইল রবিবার থেকে যে বাঁধা সৃষ্টি করেছে তা তুলে নিতে আরবদের সম্মিলিত প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন ও প্রয়াস চালানোই হলো এই বৈঠকের প্রধান উদ্দেশ্য।
চলমান যুদ্ধবিরতি অনুসারে গত ১ মার্চ ১ম ধাপের মেয়াদ শেষ হয়। যেখানে নারী-শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ-আহত ফিলিস্তিনিদের মুক্তি প্রদান, জনবহুল এলাকা থেকে ইসরাইলী সেনা প্রত্যাহার, গাজ্জায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে ও ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমি, নিজ ঘরে প্রত্যাবর্তনে কোনো বাঁধা না দেওয়া ছিলো শর্ত।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির ২য় ধাপের জন্য একটি আলাদা চুক্তিও সাক্ষরিত হয়েছিলো। যেখানে ২য় ধাপের নিশ্চয়তার লক্ষ্যে ইসরাইল ও তাদের মধ্যস্থতাকারী দেশ আমেরিকা দু’পক্ষই সাক্ষর করেছিলো। এতে স্পষ্ট উল্লেখ ছিলো যে, ১ম ধাপের ১৬ দিনের মাথায় ২য় ধাপের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনায় বসবে ইসরাইল এবং ৬ সপ্তাহ বা ৪২ দিন শেষে ২য় ধাপের বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে তাদের। কিন্তু তা না করে ইসরাইল আমেরিকা শুধু কালক্ষেপণই করেছে। ইসরাইল নিয়মিত দিয়ে গিয়েছে ও যাচ্ছে যেকোনো মুহুর্তে গাজ্জায় পুনরায় যুদ্ধ শুরুর হুমকি এবং আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দিয়ে যাচ্ছেন, গাজ্জাকে মধ্যপ্রাচ্যের নৈসর্গিক নগরীতে পরিণত করার অনির্ভরযোগ্য আশ্বাস। এর সাথে শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন, গাজ্জাকে নৈসর্গিক নগরীতে পরিণত করতে আমেরিকাকে প্রথমে তা খালি করে দিতে হবে ফিলিস্তিনিদের।
আরো দাবী করছেন, পুনর্গঠনের সময় গাজ্জায় মার্কিন সেনাদের উপস্থিতির কোনো প্রয়োজন হবে না। বরং ১৯৯৩ এর অসলো চুক্তি মোতাবেক ফিলিস্তিনের সীমানা ইত্যাদির নিয়ন্ত্রণে থাকা ইসরাইলই মার্কিনীদের গাজ্জা পুনর্গঠন শেষে এর কর্তৃত্ব আমেরিকার হাতে তুলে দিবে।
চুক্তির ২য় ধাপের পরিবর্তে রবিবার ২ মার্চ হুট করে আবার মার্কিন প্রস্তাবনাও হাজির করে ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল, যা ১ম ধাপের মেয়াদ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল দূত স্টিভ উইটকফের তৈরি বলে প্রচারিত হয়। তাদের কেবিনেটও রাতারাতি এর অনুমোদন দেয়। হামাস এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রস্তাবনাটি কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করে। আহবান জানায় সাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী কর্মসম্পাদনের। আরব ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহবান জানায় চাপ প্রয়োগের।
উইটকফের প্রস্তাবনায় যা রয়েছে,
১) ২য় ধাপের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনায় বসতে ১ম ধাপের মেয়াদ বাড়াতে হবে।
২) পবিত্র রমজান ও পাসওভারের কথা বিবেচনায় রেখে মেয়াদ ২০ এপ্রিল পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। যেখানে ২৯ মার্চ রমজান এবং ১৯ এপ্রিল পাসওভার শেষ হবে।
৩) বর্ধিত যুদ্ধবিরতির ১ম দিনে জীবিত ও মরে যাওয়া জিম্মিদের অর্ধেককে মুক্তি দিতে হবে।
৪) চলমান ৩ ধাপের যুদ্ধবিরতি স্থায়ীত্ব পেলে বাকি জিম্মিদেরও নির্ধারিত মেয়াদে পর্যায়ক্রমে মুক্তি দিতে হবে, যার ১ম ধাপ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। মেয়াদ বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চলছে এবং উক্ত প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়াও উইটকফ ইসরাইলের বক্তব্যের সমর্থন জোগান। যেখানে তিনি দাবী করেন, ৪২ দিন মেয়াদি ১ম ধাপ শেষে ২য় মেয়াদ বিলম্বিত হলে ইসরাইল পুনরায় যুদ্ধ শুরুর অধিকার রাখবে। এক্ষেত্রে ২য় ধাপের জন্য পূর্বে সাক্ষরিত আলাদা চুক্তি সাংঘর্ষিক নয়।
সাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির ২য় ধাপে যা উল্লেখ ছিলো এবং ইসরাইল-আমেরিকা যা বাস্তবায়নে কালক্ষেপণ করছে:
১. ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে স্থায়ীভাবে শত্রুতা ও সন্ত্রাসবাদের অবসান।
২. গাজ্জায় আটক থাকা সকল জিম্মির বিপরীতে ইসরাইলের কাছে বন্দী থাকা সকল ফিলিস্তিনির মুক্তি প্রদান।
৩. অবরুদ্ধ গাজ্জা ও ফিলিস্তিনের স্বীকৃত ভূখণ্ড থেকে সম্পূর্ণভাবে ইসরাইলী সেনাদের প্রত্যাহার।
৪. গাজ্জা পুনর্গঠন শুরু ও এতে কোনো ধরণের বাধা না দেওয়া।
সূত্র: আল জাজিরা