শুক্রবার, মে ৯, ২০২৫

ভারতের হামলায় মাসুদ আজহারের পরিবারের নিহত ১০ জনের ৮ জনই নারী ও শিশু

spot_imgspot_img

ভারতের হামলায় পাকিস্তানের জাইশে মুহাম্মদ নামের কাশ্মীর ভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠনের প্রধান মাওলানা মাসুদ আজহারের পরিবারের নিহত ১০ জনের ৮ জনই নারী ও শিশু।

বুধবার (৭ মে) বিবিসির খবরে একথা জানানো হয়।

খবরে বলা হয়, পাকিস্তানের কাশ্মীর ভিত্তিক আন্তর্জাতিক ভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত সশস্ত্র সংগঠন জাইশে মুহাম্মদের প্রধান মাওলানা মাসুদ আজহারের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, ভাওয়ালপুরের সুবাহানাল্লাহ জামে মসজিদে ভারতের বর্বরোচিত হামলায় তার পরিবারের ১০ সদস্য ও ৩ সঙ্গী নিহত হয়েছে।

মাসুদ আজহারের পক্ষে প্রকাশিত এক বার্তায় জানানো হয় যে, তার বড় বোন ও বোনের স্বামী, ভাগ্নে ও ভাগ্নের স্ত্রী, ভাগ্নি ও পরিবারের ৫ শিশু সহ মোট ১০ জন সদস্য শহীদ হয়েছেন। এছাড়া ৩ জন নিকট সঙ্গী ও তন্মধ্যে একজনের মাও ভারতের মঙ্গলবার রাতের হামলায় শহীদ হোন।

এই বার্তায় মোদি সরকারকে ইঙ্গিত করে হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলা হয়, তোমাদের অন্যায় ও জুলুম সকল সীমা অতিক্রম করেছে। এবার কোনো দয়ার আশা রাখবেন না।

উল্লেখ্য, মাসুদ আজহার পাকিস্তানের একজন ইসলামিক স্কলার ও কাশ্মীরের স্বাধীনতা লালন করা বিপ্লবী। পাকিস্তানের প্রভাবশালী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান জামেয়া বান্নুরী টাউন করাচী থেকে তিনি তার পড়াশোনা শেষ করেন। পড়াশোনার শেষদিকে তিনি ভারত দখলকৃত কাশ্মীরের স্বাধীনতার জন্য জিহাদি তৎপরতায় জড়িয়ে পড়েন। ১৯৯৪ এর ফেব্রুয়ারিতে জম্মু-কাশ্মীরের শ্রীনগরে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হোন। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী তৎপরতার অভিযোগ আনে ভারত।

তার মুক্তির জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালানো হলেও ভারত সরকার তাকে মুক্তি দিতে অস্বীকার করে। পরবর্তীতে ১৯৯৯ এর ডিসেম্বরে ১৭৬ জন যাত্রী ও ক্রু সহ কাঠমুন্ডু থেকে দিল্লিগামী ভারতীয় ভারতীয় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। মূলত মাসুদ আজহারের মুক্তির জন্য তার ৫জন সঙ্গী এই প্লেন ছিনতাই করে। যা ভারতের ইতিহাসের এখন পর্যন্ত বিমান ছিনতাইয়ের সবচেয়ে বড় ঘটনা।

IC-814 বিমানটি কাঠমুন্ডু থেকে যখন অমৃতসরের আকাশে আসে তখন মাসুদ আজহারের সঙ্গীরা বিমানটির নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নেয়। পাইলটকে তা অমৃতসরে নামতে বাধ্য করে। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা সেখানে বেশিক্ষণ থাকেনি। খুব দ্রুতই বিমানটি লাহোরে নিয়ে যায়। দাবী-দাওয়া উত্থাপন করে লাহোর থেকে দুবাই হয়ে সর্বশেষ আফগানিস্তানের কান্দাহারে নিয়ে যাওয়া হয় বিমানটি। তৎকালীন তালেবান সরকার তখন আফগানিস্তানের ক্ষমতায়। যারা আবার ভারতকে নিজেদের ভূখণ্ডে NSG কমান্ডোকে বিশেষ অভিযান পরিচালনার অনুমতি দিতে রাজি ছিলো না।

পরবর্তীতে এক প্রকার বাধ্য হয়ে ভারত মাসুদ আজহার সহ আরো ২ জিহাদি নেতা আহমদ ওমর সাঈদ শেখ ও মুশতাক আহমদ জারগারীকে মুক্তি দেয়। ১৯৯৯ এর ৩১ ডিসেম্বর বিশেষ বিমানে তাদের দিল্লির কারাগার থেকে কান্দাহার নিয়ে যাওয়া হয়।

বিমানটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখা অবস্থায় রূপিন কাতিয়াল নামের একজনকে হত্যাও করে মাসুদ আজহারের সঙ্গীরা। সেই থেকে মাসুদ আজহার ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছেন।

মুক্তির পর মাসুদ আজহার পাকিস্তান ফিরে গিয়ে কাশ্মীর মুক্তি সংগ্রামের লক্ষ্যে নিজের সশস্ত্র দল জাইশে মুহাম্মদ গঠন করেন। ২০০২ সালে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পাকিস্তান সরকার এই সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করে। এর আগে কাশ্মীরের মুক্তি সংগ্রামের লক্ষ্যে হরকাতুল আনসারের সাথে কাজ করতেন।

সর্বশেষ

spot_img
spot_img
spot_img