আজ শনিবার (৭ জুন) বাংলাদেশে উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা, মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। এই দিনটি মুসলিমদের জন্য শুধু আনন্দ ও উৎসবের নয়, বরং আত্মত্যাগ, তাকওয়া ও আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণের এক অনন্য দিবস।
ঈদুল আজহার ঐতিহাসিক উৎস জড়িয়ে রয়েছে হজরত ইবরাহিম আ: ও তাঁর পুত্র হজরত ইসমাঈল আ:-এর আত্মত্যাগমূলক ঘটনার সঙ্গে। মহান আল্লাহর আদেশে পুত্রকে কোরবানি করতে প্রস্তুতি নেওয়া এবং সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার ঘটনাই কোরবানির মূল ভিত্তি। ইসলামে কোরবানি ওয়াজিব ইবাদত, যা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সামর্থ্যবান মুসলমানদের ওপর জরুরী নয়, বরং ঈমান ও আনুগত্যের পরিপূর্ণতার প্রকাশ।
কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে:
لَنْ يَّنَالَ اللّٰهَ لُحُوْمُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلٰكِنْ يَّنَالُهُ التَّقْوٰى مِنْكُمْ
অর্থ: “আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না কোরবানিকৃত পশুর গোশত বা রক্ত; বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া।” (সূরা হজ্ব, আয়াত ৩৭)
এই আয়াত কোরবানির প্রকৃত তাৎপর্যকে সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করে।
ঈদুল আজহা হিজরি বর্ষপঞ্জির ১০ জিলহজ তারিখে পালিত হয়, যা পবিত্র হজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের পরে আসে। গতকাল শুক্রবার পবিত্র আরাফাতের ময়দানে লাখো মুসলমান ‘উকুফে আরাফা’ পালন করে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছেন। এরপর আজ মিনায় অবস্থান করে কোরবানি, শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ ও অন্যান্য হজ কার্যাবলি সম্পাদন করছেন হাজীরা।
সৌদি আরবে স্থানীয় চাঁদ অনুযায়ী গতকাল (৬ জুন) ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে। সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও আমেরিকার অনেক দেশেই একই দিনে ঈদ উদযাপিত হয়েছে।
বাংলাদেশে আজ ভোর থেকে রাজধানীসহ সারাদেশের ঈদগাহ, মসজিদ ও খোলা মাঠে ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে সকাল সাড়ে ৭টায় প্রধান ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে অংশ নেবেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা, কূটনীতিক, রাজনীতিক ও সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পাঁচটি জামাতের আয়োজন করা হয়েছে। সারাদেশে বিভিন্ন শহর, উপজেলা ও গ্রামে শত শত ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যেখানে মুসল্লিরা একত্রে নামাজ আদায় করে পরস্পরকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। খুতবায় খতিবগণ কোরবানির গুরুত্ব, ত্যাগের শিক্ষা ও ইসলামী আদর্শ তুলে ধরেন।
ঈদের নামাজ শেষে সামর্থ্যবান মুসলমানরা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করবেন। এই কোরবানির মাংস তিনভাগে ভাগ করে আত্মীয়, দরিদ্র ও নিজ পরিবারের মধ্যে বণ্টন করা হয়ে থাকে।
ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সড়কপথ, রেল ও নৌপথে অতিরিক্ত যাত্রীসেবা, সিএনজি ও ফিলিং স্টেশন খোলা রাখা, পুলিশের কন্ট্রোলরুম ও দ্রুত সাড়াদান ব্যবস্থা সক্রিয় রয়েছে। কোথাও কোনো ভোগান্তির সংবাদ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ পৃথক পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তারা সবাই ত্যাগের মহিমা থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশের ঐক্য, শান্তি ও উন্নয়নের আহ্বান জানিয়েছেন।
