শুক্রবার | ১২ সেপ্টেম্বর | ২০২৫

হাটহাজারীতে আল্লামা বাবুনগরী রহ.-এর জীবন, কর্ম ও অবদান শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক আমীর ও হাটহাজারী মাদরাসার সাবেক শায়খুল হাদীস আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী (রহ.)-এর জীবন, কর্ম ও অবদান শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম হাটহাজারী ডাক বাংলো প্রাঙ্গণে হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক ও হেফাজতের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী খলিল আহমদ কাসেমীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী।

আলোচনা সভায় বক্তারা আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী রহ. এর পারিবারিক পরিচিতি, তাঁর শিক্ষা-দীক্ষা, শৈশব, হাদিস শাস্ত্রে তাঁর বিশেষ অবদান, হাটহাজারীতে তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মজীবন, ধর্মীয় নানা ইস্যুতে তাঁর আন্দোলন-সংগ্রাম-আপোষহীনতা, বিশেষত আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও নাস্তিক্যবাদের বিরুদ্ধে তাঁর অনড় অবস্থানের কথা তুলে ধরেন।

আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে মুসলিম উম্মাহর দুর্দিনের রাহবার উল্লেখ করে আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, ২০১৩ সালে ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতের অবস্থান কর্মসূচিতে ফ্যাসিস্ট হাসিনার নির্দেশে তার লেলিয়ে দেয়া পেটোয়া বাহিনী যখন সরাসরি গুলি করছিল তখনও তিনি সরাসরি মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। নির্ভীকভাবে পুরো ঘটনাপ্রবাহে তিনি ছিলেন অবিচল। শাপলা চত্বর গণহত্যা পরবর্তী সময়ে এক শ্রেণীর নেতৃবৃন্দ যখন আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে আপোষ ও সমঝোতার দিকে ঝুঁকে পড়েন। আওয়ামী সরকারের সাথে সে সময়ে হেফাজতের সেইসব নেতৃবৃন্দের একটা সখ্যতা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু আপোষ ও সমঝোতার ওই সময়টাতে জুনায়েদ বাবুনগরী (রহ.) ছিলেন ব্যতিক্রম। তিনি ছিলেন জালিমের বিরুদ্ধে সরব, প্রতিবাদমুখর ও আপোষহীন। তিনি ২০১৩ সালে ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতের অবস্থান কর্মসূচিতে হামলার কারণে আওয়ামী সরকারকে দায়ী করেছেন। জনগণকে সরকারের মিথ্যা গালগল্প আর কওমি সনদের ধোঁকায় বিভ্রান্ত না হয়ে সত্যের উপর অটল থাকতে পরামর্শ দিয়েছিলেন।

হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা মুফতী খলিল আহমদ কাসেমী বলেন, আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ছিলেন একজন বরেণ্য আলিমে দ্বীন, ইসলামের বিশুদ্ধ চিন্তা-চেতনাধারী মধ্যপন্থার অনুসারী। তাঁর কথা ও আচরণে প্রান্তিকতার ছাপ ছিল না। অত্যন্ত সাদাসিধে জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন তিনি। ভাবগম্ভীর পরিবেশে কথা বলতেন। সবসময় আল্লাহর স্মরণ ও উম্মাহর চিন্তায় বিভোর থাকতেন। অযথা সময় নষ্ট করতেন না। ইলমে হাদিস শাস্ত্রের খেদমত ও দ্বীনের প্রচার ও প্রসার ছিল তাঁর জীবনের মিশন।

আল্লামা বাবুনগরীকে স্বর্ণযুগের আলেমের প্রতিচ্ছবি উল্লেখ করে মাওলানা মামুনুল হক বলেন, আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী রহ. ছিলেন সালফে সালেহিন তথা স্বর্ণযুগের আলেমদের প্রতিচ্ছবি। ইসলামি জ্ঞানবিজ্ঞানের ইতিহাস দেখলে প্রতীয়মান হয় যে, এমন আলেম ইতিহাসে খুব কমই এসেছেন যাঁদের মধ্যে গভীর ইলম, আমল, জিহাদ, তাজদিদ তথা ইসলামের সংস্কার, গোমরাহ ফিরকার মোকাবেলাসহ ইত্যকার গুণাবলির সমাগম ঘটেছিল। আল্লামা বাবুনগরী রহ. ইতিহাসের সেই ক্ষনজন্মা বিরল ব্যাক্তিদের মধ্যে একজন ছিলেন যাঁরা এইসব গুণে গুণান্বিত ছিলেন। আল্লামা বাবুনগরীকে দেখলে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনুল মোবারক, ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল, ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. এর কথা স্মরণ হতো। সম্রাট আকবের দ্বীনে ইলাহির মোকাবেলায় যেরকম মুজাদ্দিদে আলফেসানী রহ. সীসা ঢালা প্রাচিরের মতো দাঁড়িয়েছিলেন, শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভি রহ. যেমন পতন্মোখ মোঘল সাম্রাজ্যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠা ধর্মহীনতা ও যাবতীয় পাপাচারের লাগাম টেনে ধরেছিলেন, বালাকোটে যেমন সাইয়েদ আহমাদ শহীদ এবং ইসমাইল শহীদ রহ. বুকের তাজা রক্ত দিয়ে দেশকে দখলদারমুক্ত করতে চেয়েছিলেন, শামেলির যুদ্ধে যেমন বালাকোটের অসম্পূর্ণ কাজকে পূর্ণতা দান করতে ভারতবর্ষের উলামায়ে কেরাম আরেকবার শাহাদাতের নজরানা পেশ করেছিলেন, আল্লামা বাবুনগরী রহ. ও তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ইসলামবিরোধী যাবতীয় অপশক্তির বিরুদ্ধে আমরণ সংগ্রাম চালিয়ে গিয়েছিলেন। জেল জুলুম সহ্য করেছেন, কিন্তু একটুও পিছপা হননি। তাঁর মধ্যে সন্নিবেশ ঘটেছিল হাজী এমাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কীর এশকে এলাহী, হযরত গঙ্গুহীর প্রখর ইলম, হযরত নানুতবীর হিকমতের মতো বহু বিরল গুণ। নিকট অতীতের কোন আলেমের মধ্যে এইরূপ বহুগুণের সমারোহ আরও কোন আলেমের মধ্যে দেখা যায়নি।

এতে আরো বক্তব্য রাখেন, পটিয়া মাদরাসার মহাপরিচালক মাওলানা আবু তাহের নদভী, নানুপুর ওবাইদিয়া মাদরাসার মহাপরিচালক মাওলানা সালাহ উদ্দিন নানুপুরী, হাটহাজারী মাদরাসার সিনিয়র মুফতী ও মুহাদ্দিস মুফতী জসিম উদ্দিন, হাটহাজারী মাদরাসার শিক্ষা সচিব মুফতী কিফায়াতুল্লাহ, নাজিরহাট বড় মাদরাসার মহাপরিচালক মুফতী হাবিবুর রহমান কাসেমী, চারিয়া মাদরাসার মহাপরিচালক মাওলানা ওসমান সাঈদী, মাওলানা জহুরুল ইসলাম, মাওলানা মীর কাসেম, মাওলানা আইয়ুব বাবুনগরী, মাওলানা যুবাইর বাবুনগরী, মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী, মুফতী কুতুব উদ্দিন, মুফতী হারুন ইজহার, মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির, মাওলানা মীর ইদরিস নদভী, মাওলানা জাফর আহমদ, জনাব আহসান উল্লাহ, মাওলানা ফরিদ আহমদ আনসারী, মাওলানা হারুন আজীজি নদভী, মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়জী, মাওলানা আনোয়ার শাহ আযহারী, মাওলানা কামরুল ইসলাম কাসেমী, মুফতী মুহাম্মদ বাবুনগরী, মাওলানা নিজাম সাইয়্যিদ, মাওলানা ইরফান সাদেক, মাওলানা নূর হোসাইন নূরানী, মুফতী আজহারুল ইসলাম, মাওলানা ওয়াহিদুল আলম, মাওলানা শরীফ উল্লাহ, মাওলানা ইলিয়াস হামিদী, ড. নূরুল আবছার আযহারী, ড. বেলাল নূর আজিজী, ড.ফরিদ উদ্দিন ফারুক, মাওলানা মাহমুদুল হাসান গুনবী, মুফতী ওসমান সাদেক, মাওলানা আব্দুল ওয়াদুদ নোমানী, মাওলানা মাহমুদ হোসাইন, মুফতী শওকত, মাওলানা এমরান সিকদার, মুফতী আব্দুল হামিদ, মাওলানা নোমান আযহারী, মাওলানা ইন’আমুল হাসান ফারুকী, মাওলানা ইরফান শাহ, মাওলানা আবু বকর, মুফতী মাসউদুর রহমান চৌধুরী, জনাব মোরশেদ আলম, মাওলানা হাফেজ আব্দুল মাবুদ, মাওলানা আসাদ উল্লাহ প্রমূখ।

spot_img
spot_img

এই বিভাগের

spot_img