সোমবার | ১৫ সেপ্টেম্বর | ২০২৫

‘জুলাই সনদ’ না মানলে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা; জামায়াতের প্রস্তাব

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে হলে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ মেনে চলা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

দলের পক্ষ থেকে প্রস্তাব হলো, জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে জুলাই জাতীয় সনদ মেনে চলতে হবে এবং বাস্তবায়নের শপথ করতে হবে। হলফনামা দিতে ব্যর্থ হলে প্রার্থিতা বাতিল হবে। নির্বাচনে জুলাই সনদবিরোধী প্রচার চালালে প্রার্থিতা বাতিল এবং রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হবে।

৬ সেপ্টেম্বর জামায়াত এই প্রস্তাব লিখিত আকারে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে জমা দেয়। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আযাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, এটি একটি প্রস্তাব মাত্র। আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।

জামায়াত চায় নির্বাচনের আগে একটি ‘প্রভিশিয়াল সাংবিধানিক আদেশ’ জারি করে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা হোক। এই আদেশে উল্লেখ থাকবে, নির্বাচনে অংশ নিতে হলে প্রার্থীকে সনদের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে শপথ করতে হবে। আর কেউ এই সনদের বিরুদ্ধে প্রচার চালালে তার প্রার্থিতা বাতিলের পাশাপাশি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার ব্যবস্থা করতে হবে।

এই প্রস্তাবে জামায়াত আরও উল্লেখ করেছে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে জনগণের হাতে ‘কন্সটিটুয়েন্ট পাওয়ার’, অর্থাৎ সংবিধান প্রণয়ন বা পরিবর্তনের ক্ষমতা অন্তর্পাত হয়েছে। এই ক্ষমতার ভিত্তিতে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে, যা জনগণের অভিপ্রায়ের প্রতিনিধিত্ব করে। সুতরাং, এই সরকার সাংবিধানিক আদেশ জারি করতে পারে, এবং সেই আদেশই হবে আইনের সর্বোচ্চ ভিত্তি।

জামায়াত বলছে, এই আদেশকে সংবিধানের সমতুল্য মর্যাদা দিতে হবে। যেসব বিদ্যমান আইন কিংবা সংবিধানের ধারা এই আদেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, সেগুলো বাতিল হয়ে যাবে। এমনকি বিচার বিভাগ ও আইন বিভাগও এই আদেশের আওতায় থাকবে। কেউ যদি এই আদেশকে পরিবর্তন বা অগ্রাহ্য করার চেষ্টা করে, তা রাষ্ট্রদ্রোহ হিসেবে বিবেচিত হবে।

তাদের মতে, নির্বাচনের আগে এই সাংবিধানিক আদেশ জারি করে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশের মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজন করবেন। আর নির্বাচনে অংশ নিতে হলে প্রত্যেক প্রার্থী ও দলকে এই আদেশ মেনে চলতে হবে এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়নের শপথ দিতে হবে। তা না হলে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষিত হতে হবে।

জামায়াত বলছে, এই প্রভিশিয়াল আদেশ থাকবে কার্যকর, যতদিন না পর্যন্ত নতুন সংসদ তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে একটি নতুন সংবিধান গৃহীত করে এবং তা গণভোটে অনুমোদিত হয়। তবে নতুন সংবিধানও এই সাংবিধানিক আদেশের ভিত্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। একবার আদেশ জারি হলে, ভবিষ্যতে কেউ এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবে না।

জুলাই সনদ মানতে কাউকে বাধ্য করা কতটা গণতান্ত্রিক এই প্রশ্নে জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই সনদ গণতন্ত্র রক্ষার জন্য তৈরি হয়েছে। জুলাই সনদের বিপরীত মানেই ফ্যাসিবাদ। আমরা চাই সবাই এই চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হোক।

মুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নে ড. আযাদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মানেই বাংলাদেশ। আমরা বাংলাদেশ মেনেই চলছি। তাই আমরা মুক্তিযুদ্ধকে মেনেই রাজনীতি করছি। একইভাবে, এখন যারা রাজনীতি করতে চাইবে, তাদেরও জুলাই মেনে চলতে হবে।

তবে বিএনপি এই বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে আসছে। তাদের মতে, সংবিধান সংশোধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তী সরকারের মাধ্যমে নয়, নির্বাচনের পর নতুন সংসদের মাধ্যমেই বাস্তবায়ন হওয়া উচিত।

spot_img
spot_img

এই বিভাগের

spot_img