ভারতের বিহারে জেহানাবাদ জেলায় পাঁচ রুপির জন্য মোহাম্মাদ মোহসিন (৭০) নাকে একজন মুসলিম শবজি বিক্রেতাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে ভিকি প্যাটেল নামে এক উগ্র হিন্দুত্ববাদী। জানা গেছে, ভিকির সাথে ভারতের ক্ষমতাশীন দল বিজেপি নেতাদের সম্পর্ক রয়েছে।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) জেহানাবাদ জেলার কাকো গ্রাম বাজারে এই ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানিয়েছে, এটি মাত্র ৫ রুপি টোল বকেয়া নিয়ে তুচ্ছ বিবাদের কারণে হয়েছে। এ ঘটনা বিহারের জঙ্গল রাজ নিয়ে আইনশৃঙ্খলার অভাব এবং সম্ভাব্য সাম্প্রদায়িক প্রভাবের উদ্বেগকে সামনে এনেছে।
জানা গেছে, মোহসিন তার ছোট নাতি নিয়ে বাজারে ফল ও সবজি বিক্রি করতে এসেছিলেন। ভিকি প্যাটেল বৃদ্ধ ব্যক্তির কাছে গিয়ে ১৫ রুপি টোল দাবি করেন। মোহসিনের কাছে কেবল ১০ রুপি ছিল। তিনি বলেছিলেন যে, আমি সাধারণত পুরো টোল দিই, কিন্তু আজ আমার কাছে পর্যাপ্ত টাকা নেই। অর্থাৎ সেই দিন তার কাছে পর্যাপ্ত টাকা ছিল না এবং তিনি বাকি টাকা পরিশোধের জন্য সময় চেয়েছিলেন।
প্যাটেল রেগে যান এবং একটি ডাম্বেল দিয়ে মোহসিনের পেট ও মাথায় বারবার আঘাত করেন। এই হামলার ফলে মোহসিন তাৎক্ষণিক মৃত্যু হয়। এই ভয়ঙ্কর ঘটনা মোহসিনের নাতি ও বাজারের পথচারীদের সামেনেই ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য অনুযায়ী, মোহসিনের দেহ কয়েক ঘণ্টা ধরে বাজারে পড়ে ছিল। স্থানীয়রা যে যার কাজে ব্যস্ত ছিল। তাত্ক্ষণিক কেউ কোনো হস্তক্ষেপ করেনি।
পুলিশ জানিয়েছে, মোহসিনের হত্যার একটি মামলা ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস)-এর ধারা ১০৩ (হত্যা) অনুযায়ী দায়ের করা হয়েছে। তবে ভিকি প্যাটেল এখনও পলাতক রয়েছেন, যা কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়ার সমালোচনাকে তীব্র করেছে।
এই ঘটনার রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াও তীব্র হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, প্যাটেল বিহারের ডেপুটি চিফ মিনিস্টার সম্রাট চৌধরি এবং বিজয় কুমার সিনহাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিজেপি নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলেছেন। এই ছবিগুলো অভিযুক্তকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হতে পারে এমন সন্দেহকে আরও জোরদার করেছে।
কংগ্রেস নেতা এবং রাজ্যসভা এমপি ইমরান প্রতাপগড়ি বলেন, “এটি বিহারের সত্যিকারের জঙ্গল রাজ। একটি সবজি বিক্রেতাকে মাত্র পাঁচ রুপির জন্য হত্যা করা হয়েছে। বিজেপির সহযোগীরা বিহার শাসন করতে পারছে না।”
মোহসিনের পরিবার গভীর শোকের মধ্যে আছে। তারা একজন পরিশ্রমী জীবিকা নির্বাহীকে হারানোর দুঃখ ভুলতে পারছে না। রাজ্যে বাড়তে থাকা সহিংসতা এবং কার্যকর না হওয়া পুলিশের প্রভাব দেখা যাচ্ছে। মানুষ চায় অভিযুক্তকে যত দ্রুত সম্ভব গ্রেফতার করা হোক, কারণ দেরি হলে জনসাধারণের আস্থা কমতে পারে।
সূত্র: মুসলিম মিরর