সম্প্রতি কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, আফগানিস্তানের তালেবান সরকার নারীদের লেখা সব বই নিষিদ্ধ করেছে। খবরটি দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু আফগানিস্তানের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা নির্দেশনা বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয়, বাস্তবতা ভিন্ন। নিষিদ্ধ হয়েছে শরিয়াহ ও রাষ্ট্রীয় নীতির পরিপন্থি মোট ৬৭৯টি বই। এর মধ্যে নারী লেখকদের প্রায় ১৪০টি বই থাকলেও, কেবল নারী লেখকদের বই নিষিদ্ধ করার কোন নির্দেশনা নেই।
তালেবান সরকারের অফিসিয়াল নির্দেশনায় কোথাও বলা হনি যে, “নারীদের লেখা সব বই নিষিদ্ধ।” নির্দেশনায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, যে সব বই ও বিষয় শরিয়াহ ও রাষ্ট্রীয় নীতির পরিপন্থি, সেগুলো পাঠ্যক্রমে রাখা যাবে না। অর্থাৎ নিষিদ্ধ তালিকায় নারী লেখকদের কিছু বই পড়লেও তা বইয়ের বিষয়বস্তুর কারণে, লেখক নারী হওয়ার কারণে নয়।
গত ২৫ আগস্ট আফগান শিক্ষা মন্ত্রণালয় সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে দুটি চিঠি পাঠায়।
প্রথম চিঠিতে বলা হয়, মোট ৬৭৯টি বই শরিয়াহ ও রাষ্ট্রীয় নীতির পরিপন্থি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এসব বই বিশ্ববিদ্যালয়ে আর পড়ানো যাবে না, কোনো গবেষণায় উদ্ধৃত করা যাবে না এবং ব্যবহার করা যাবে না। সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে।
দ্বিতীয় চিঠিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস থেকে আফগানিস্তানের সাংবিধানিক আইন, নির্বাচন ব্যবস্থা, রাজনৈতিক সমাজবিদ্যা, জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র, সংবিধানের বিশ্লেষণ, জেন্ডার–সমতাভিত্তিক চাকরির বৈচিত্র্য, জেন্ডার কমিউনিকেশন এবং জনসংযোগে নারীর ভূমিকাসহ ১৮টি বিষয় বাদ দিতে হবে।
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এসব বিষয়ে ব্যবহৃত পাঠ্যসামগ্রীর বহু অংশ শরিয়াহ ও রাষ্ট্রীয় নীতির সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ায় এগুলো পাঠ্যক্রমে রাখা সম্ভব নয়।
নিষিদ্ধ তালিকায় নারী লেখকদের প্রায় ১৪০টি বই রয়েছে। তবে এগুলো নিষিদ্ধ হয়েছে বইয়ের বিষয়বস্তু শরিয়াহ–বিরোধী হওয়ার কারণে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, নিষিদ্ধ করার মানদণ্ড হলো শরিয়াহ ও ইমারাতে ইসলামিয়ার নীতির সাথে বিরোধ। ফলে নারী বা পুরুষ-কোনো লেখককে আলাদাভাবে টার্গেট করা হয়নি।
কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আফগান শিক্ষ মন্ত্রণালয়ের রিভিউ কমিটির একজন সদস্যের বক্তব্য উদ্ধৃত করে দাবি করেছে, নারীদের লেখা সব বই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অথচ অফিসিয়াল চিঠির কোথাও এমন কোনো কথা নেই। এতে বোঝা যায়, খবরটি আংশিক সত্যকে বিকৃত করে প্রচার করা হয়েছে। বাস্তব নির্দেশনার মূল ফোকাস ছিল শরিয়াহ–বিরোধী বিষয়বস্তু অপসারণ; নারী লেখকদের বই অন্তর্ভুক্ত হয়েছে কেবল সেই কারণেই।