রবিবার | ২১ সেপ্টেম্বর | ২০২৫

মৃত্যু নগরী গাজ্জা; শহীদের সংখ্যা পেরোল ৬৫ হাজার

গাজ্জার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শনিবার সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, অক্টোবর ২০২৩ থেকে এখন পর্যন্ত ইসরাইলের অব্যহত গণহত্যায় কমপক্ষে ৬৫ হাজার ২০৮ ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন।

গত ২৪ ঘণ্টার চিত্র

মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে আনা হয়েছে ৩৪ জনের মৃতদেহ, আর আহত হয়েছেন ২০০ জন। এতে ইসরাইলি হামলায় মোট আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ২৭১ জনে।

বিবৃতিতে যোগ করা হয়, “অনেক মৃতদেহ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে ও রাস্তায় পড়ে আছে, যাদের কাছে উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছাতে পারছেন না।”

ত্রাণের জন্য প্রাণ হারানো

মন্ত্রণালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় মানবিক সহায়তা সংগ্রহের চেষ্টায় ৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১৮ জনের বেশি আহত হয়েছেন। এ নিয়ে ২৭ মে থেকে এ পর্যন্ত ত্রাণ সংগ্রহের সময় নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল ২ হাজার ৫১৮ জনে, আর আহতের সংখ্যা ১৮ হাজার ৪৪৯ জনে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও ত্রাণ সংস্থা বর্তমান ইসরাইলি অনুমোদিত সহায়তা ব্যবস্থাকে “মৃত্যুফাঁদ” বলে অভিহিত করেছে। তাদের মতে, শত শত ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিকে ইসরাইল হত্যা করেছে কেবল ত্রাণ সংগ্রহের চেষ্টা করার সময়।

দুর্ভিক্ষ ও অনাহারে মৃত্যু

গত ২৪ ঘণ্টায় অপুষ্টি ও অনাহারে আরও ৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যার মধ্যে একজন শিশু রয়েছে। এতে অক্টোবর ২০২৩ থেকে দুর্ভিক্ষ-সংক্রান্ত মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৪০ জনে, যাদের মধ্যে ১৪৭ শিশু।

শুক্রবারের তথ্য অনুযায়ী, অনাহারে ২ জন, যার একজন শিশু, মৃত্যুবরণ করেছিলেন। তখন মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ৪৪২ জনে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ২ মার্চ থেকে ইসরাইল সম্পূর্ণভাবে গাজ্জার সব সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ রেখেছে, ফলে ২৪ লাখ মানুষকে দুর্ভিক্ষে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

উত্তর গাজ্জায় নিশ্চিত দুর্ভিক্ষ

ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) নিশ্চিত করেছে যে গাজ্জার উত্তরাঞ্চলে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে। তাদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ এটি মধ্য ও দক্ষিণ গাজ্জার দেইর আল-বালাহ এবং খান ইউনুস পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে।

আইপিসি দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করার পর থেকে অন্তত ১৬৪ জন, যার মধ্যে ৩২ শিশু, অনাহারে মারা গেছেন।

যুদ্ধবিরতি ভেঙে নতুন হামলা

১৮ মার্চ থেকে পুনরায় হামলা শুরু করার পর ইসরাইলি সেনারা ১২ হাজার ৬৫৩ জনকে হত্যা করেছে এবং ৫৪ হাজার ২৩০ জনকে আহত করেছে। এতে জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তি সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে।

আন্তর্জাতিক আদালতের পদক্ষেপ

গত নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজ্জায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

এছাড়া, ইসরাইল বর্তমানে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার মামলার মুখোমুখি।

সূত্র: ইয়ানি সাফাক

spot_img
spot_img

এই বিভাগের

spot_img