ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের প্রধান বিচারপতি শায়খ আবদুল হাকিম হাক্কানির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন কাবুলে সফররত বাংলাদেশের আলেম প্রতিনিধি দল। আয়োজিত এই সাক্ষাতে উভয় দেশের ইসলামী আইনচর্চার অভিন্ন ভিত্তি ও বিদ্যমান বাস্তবতা নিয়ে গভীর আলোচনা হয়।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্টে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিনিধিদলের সদস্যরা আফগানিস্তানের শরিয়াভিত্তিক বিচারব্যবস্থার কার্যপ্রণালী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। আলোচনার মূল বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল, বিচার বিভাগের গঠন কাঠামো, শরিয়াভিত্তিক আইনি প্রক্রিয়ায় বিচারপ্রাপ্তির ধাপসমূহ, এবং আপিল ব্যবস্থার বিভিন্ন পর্যায়।
প্রধান বিচারপতি হাক্কানি বলেন, “শরিয়াভিত্তিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা যায় না স্বাধীন ক্ষমতা অর্জন ছাড়া। একটি ইসলামি সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা। এই ইনসাফ হতে হবে একেবারে নিরপেক্ষ—কোনো জাতি, ভাষা বা মাযহাবের প্রতি পক্ষপাত না দেখিয়ে। তবে ইনসাফ দিতে হলে আগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়। শান্তি ছাড়া ইনসাফ মানুষের কাছে পৌঁছায় না।”
প্রতিনিধিদলের সদস্য মাওলানা মাহবুবুল্লাহ কাসেমী বলেন, “বাংলাদেশে হানাফি ফিকহ শিক্ষার একটি সমৃদ্ধ ঐতিহ্য রয়েছে। কিন্তু এই প্রথমবার আমরা সরাসরি এমন উলামাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছি, যারা সেই একই ফিকহি কাঠামোকে জাতীয় নীতিমালা, বিচারিক কাঠামো এবং রাষ্ট্রপর্যায়ে বাস্তবায়ন করছেন। যখন আমরা দেখি, কিভাবে ফিকহি জ্ঞানের ঐতিহ্য একটি বাস্তব সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রয়োগ হচ্ছে, তখন তা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে।”
প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের উলামাদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগের একটি কাঠামো গড়ে তোলার আগ্রহ প্রকাশ করা হয়। যৌথ গবেষণা, তুলনামূলক একাডেমিক অধ্যয়ন এবং সমকালীন ফিকহি চ্যালেঞ্জ নিয়ে মতবিনিময়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ সহযোগিতার সুযোগ নিয়ে আলোচনা হয়। অংশগ্রহণকারীরা বলেন, এই ধরণের একাডেমিক ও বিদ্বান-ভিত্তিক বিনিময় উভয় দেশের ইসলামি চিন্তাধারাকে সমৃদ্ধ করতে পারে।
এই সফর এশিয়ার দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামি ব্যক্তিত্বের মধ্যে একটি বিরল, তাৎপর্যপূর্ণ সাক্ষাৎ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এবং বৃহত্তর ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও জ্ঞানভিত্তিক সহযোগিতার পথ প্রসারিত করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ব্রিটেনভিত্তিক সংস্থা প্রসপার আফগানিস্তানের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের আলেম প্রতিনিধি দল এই সফরে আছেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের পুনর্গঠন ও আন্তর্জাতিক সংযোগ জোরদারে কাজ করে আসছে সংস্থাটি। এর আগে প্রসপার আফগানিস্তানের মাধ্যমে ইংল্যান্ডের আলেম, চিকিৎসক এবং অন্যান্য পেশাজীবীদের একটি প্রতিনিধিদল আফগানিস্তানে সফর করেন।