ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের আমীরুল মু’মিনীন ও সর্বোচ্চ নেতা মাওলানা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা আলেমদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, নিজেদের জীবনে আগে শরিয়াহ প্রতিষ্ঠা করতে হবে, তারপর মানুষকে তার দিকে ডাকা যাবে। তাঁর বক্তব্যে তিনি স্পষ্ট করেছেন, দীন প্রতিষ্ঠা ও মানুষের হিদায়াতের দায়িত্ব আজ আলেম সমাজের কাঁধেই ন্যস্ত।
আফগানিস্তানের মাজালিসে ফিকহের সব দায়িত্বশীল, সদস্য ও উলামায়ে কেরামকে নিয়ে কান্দাহারে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী এক শিক্ষামূলক সেমিনারে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। বক্তব্যে মাওলানা আখুন্দজাদা সেবা করার সুযোগ, আলেমদের ভূমিকা, শরিয়াহ বাস্তবায়ন এবং ইমারাতে ইসলামিয়ার ফরমান মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়ে দিকনির্দেশনামূলক বিস্তারিত তাগিদ দেন।
মাওলানা আখুন্দজাদা বলেন, এখন আলেমদের সামনে সেবা করার বড় সুযোগ এসেছে। আলেমরা হালালকে হালাল এবং হারামকে হারাম হিসেবে ঘোষণা করতে সক্ষম। তাই জ্ঞান অর্জন করতে হবে, সে জ্ঞান মানুষ পর্যন্ত পৌঁছে দিতে হবে এবং মানুষের মধ্যে তা ছড়িয়ে দিতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে দীনের সফলতার দায়িত্ব আলেমদের ওপর ন্যস্ত, আর তাদের দায়িত্ব এ–ও যে, তারা মানুষকে দীন সম্পর্কে সচেতন করবে।
আফগান আমীরুল মু’মিনীন বলেন, আপনারা একে অপরের সঙ্গে বিরোধে জড়াবেন না, মানুষের মধ্যে যে মতবিরোধ আছে তা দূর করার চেষ্টা করবেন, দুনিয়ার প্রতি লোভী হবেন না, সত্যকে গোপন করবেন না এবং সৎকাজের নির্দেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবেন।
তিনি আলেমদের উদ্দেশে আরও বলেন, মাজালিসে ফিকহের আলেমরা সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি; আপনারাই সাধারণ জনগণ এবং দায়িত্বশীলদের সংস্কার করেন। তিনি বলেন, মানুষের আশা আপনাদের ওপর নির্ভর করে আছে, তাই আপনারা আগে নিজেদের ভেতরে শরিয়াহ বাস্তবায়ন করুন, যাতে মানুষ আপনাদের দেখে এবং আপনাদেরই অনুসরণ করে।
মাওলানা আখুন্দজাদা নির্দেশ দেন, আলেম ও দায়িত্বশীলদের উচিত ইমারাতে ইসলামিয়ার পক্ষ থেকে জারি হওয়া ফরমানগুলো প্রথমে নিজেদের ওপর বাস্তবায়ন করা, তারপর সেগুলো মানুষকে বুঝিয়ে বলা। তিনি বলেন, এসব ফরমান ও আইন জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে, মানুষকে এসব ফরমান সম্পর্কে অবহিত করতে হবে এবং তাদের কাছে এসবের মর্যাদা ও মূল্য ব্যাখ্যা করতে হবে।
মাওলানা আখুন্দজাদা সেমিনারের অংশগ্রহণকারীদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা ও উপদেশ দেন এবং সেখানে উপস্থিত সব উলামায়ে কেরামের সেবাকে তিনি প্রশংসা করেন। তিনি কুরআন কারিম ও সুন্নাহর আলোকে মাজালিসে ফিকহের গুরুত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন— আল্লাহ তাআলা যার জন্য কল্যাণ চান, তাকে দীনের ফিকহ তথা গভীর বুঝ দান করেন। তিনি বলেন, সব জ্ঞানের মধ্যে সেরা জ্ঞান হলো ফিকহের জ্ঞান; কারণ ফিকহ আল্লাহ তাআলার কিতাব এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নতের সারাংশ, যার মাধ্যমে হালাল ও হারাম চিহ্নিত করা হয়।
মাওলানা আখুন্দজাদা আলেম ফকীহ সম্পর্কে বলেন, ফকীহ সেই ব্যক্তি, যে শাখাগত মাসআলা–আহকামের জ্ঞান রাখে, হালাল ও হারাম, ফরজ ও ওয়াজিব, মাকরূহ ও মাকরূহ তানযীহি এবং আকিদাসংক্রান্ত বিধান সম্পর্কে জ্ঞান রাখে। তিনি বলেন, ফিকহি আলেমরা আল্লাহ জল্লা জালালুহু এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট অন্যান্য মানুষের তুলনায় বিশেষ মর্যাদা লাভ করেছেন এবং তাদেরকে খায়েরের মানুষ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা তাদের মর্যাদা উঁচু করেছেন এবং মুসলমানদের কল্যাণের জন্য ফুকাহাকে মনোনীত করেছেন, কারণ তারা হালাল–হারাম এবং ভালো–মন্দ চেনে, তাদের উপকার মানুষের কাছে পৌঁছে এবং তারা মানুষের সমস্যা সমাধান করে।
তিনি মাজালিসে ফিকহ সম্পর্কে বলেন, ইলমের সুবিধা গ্রহণ ও দান করার উদ্দেশ্যে যাওয়া জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ। ফিকহি আলেমরা আল্লাহ তাআলার দীনের উচ্চতার জন্য যাতায়াত করেন এবং মাজলিস বসান। তিনি বলেন, মাজালিসে ফিকহে সত্য কথা প্রকাশিত হয়, বিষয়গুলো সেখানে স্পষ্ট হয়, গবেষণা করা হয়, সেখানে উপকার দেওয়া ও নেওয়া হয় এবং আলেমদের মধ্যে মহব্বত ও ভালোবাসা সৃষ্টি হয়।
মাওলানা আখুন্দজাদা বলেন, আল্লাহ তাআলা নবী–রাসুলদের উত্তরাধিকার আলেমদের হাতে সোপর্দ করেছেন, যাতে তারা জ্ঞান অর্জন করে এবং মানুষকে চরিত্র, জ্ঞান ও আদবের বিষয়ে পথ দেখাতে পারেন। তিনি বলেন, বর্তমানে মানুষের হিদায়াত ও পথপ্রদর্শনের দায়িত্ব উলামায়ে কেরামের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আলেমদের দায়িত্ব হলো মানুষের পথনির্দেশ করা এবং শরই বিধানের আলোকে তাদেরকে পথ দেখানো, কারণ আল্লাহ তাআলা নিজেই তাদেরকে মানুষের হিদায়াত ও পথপ্রদর্শনের জন্য নিয়োজিত করেছেন। তিনি বলেন, এখন উলামায়ে কেরামের জন্য ভালোভাবে সেবা করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
এই সেমিনারে আফগানিস্তানের সব মাজালিসে ফিকহের দায়িত্বশীল ও সদস্যদের পাশাপাশি মাজালিসে ফিকহের প্রধান, কেন্দ্রীয় দারুলইফতার প্রধান, মাদরাসাগুলোর প্রধান এবং আরও অনেক দায়িত্বশীল ও উলামায়ে কেরাম উপস্থিত ছিলেন।
পরবর্তীতে সব উলামায়ে কেরাম আবারও ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের আমীরুল মু’মিনীন মাওলানা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার সঙ্গে নিজেদের বায়াত নবায়ন করেন এবং অঙ্গীকার করেন যে, তারা শরিয়তভিত্তিক এই ব্যবস্থার দৃঢ় সমর্থক ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন।
সূত্র : আরটিএ









