মঙ্গলবার | ১৬ ডিসেম্বর | ২০২৫

আজ বিজয় দিবস

আজ মহান বিজয় দিবস। বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন। নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। বহু ত্যাগ-তিতিক্ষা আর লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে এদিন একটি স্বাধীন জাতিসত্তা এবং লাল-সবুজের পতাকার মালিকানা পায় দেশের জনগণ।

তবে বিজয়ের ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশের পথচলা কখনোই পুরোপুরি নিষ্কণ্টক ছিল না। মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার নামে যে ভারতীয় আধিপত্যবাদী প্রভাব এ দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার বিস্তার ঘটেছে বলে বিভিন্ন মহলে মত রয়েছে। এই আধিপত্য থেকে মুক্ত হতে দেশপ্রেমিক জনগণ বারবার প্রতিরোধের চেষ্টা চালালেও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসেনি বলে মত প্রকাশ করা হয়। তবে গত বছর ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লব নতুন আশার আলো জ্বালিয়েছে।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এই পতনের মধ্য দিয়ে দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা অপশাসন থেকে মুক্তি পায় দেশের জনগণ। ফলে জাতি গতবারের মতো এবারও মহান বিজয় দিবস উদযাপন করছে ভিন্ন এক রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতায়।

এর আগে কারচুপিপূর্ণ, একতরফা ও ভোটারবিহীন নির্বাচন, রাতের ভোট এবং তথাকথিত ‘আমি-ডামি’ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থেকে শেখ হাসিনা টানা সাড়ে ১৫ বছর দেশ শাসন করেন। এই সময়ে রাষ্ট্রের প্রায় সব প্রতিষ্ঠানকে দুর্বল ও ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ ও এর ইতিহাসকে দলীয় স্বার্থে নিজেদের মতো করে উপস্থাপন করা হয়েছে। শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বন্দনাই ছিল রাষ্ট্রীয় প্রচারের মূল বিষয়, যার আড়ালে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা ও ইতিহাস বিকৃত হয়েছে। এ সময় রাষ্ট্রের সর্বস্তরে দলীয়করণ বা আওয়ামীকরণ করা হয়।

এদিকে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস, পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে জানান দেওয়ার দিন। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ-বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে মুক্তিকামী মানুষ ১৯৭১ সালের এই দিনে অর্জন করেছিল বিজয়। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিসংগ্রামের পর অগণিত মানুষের আত্মত্যাগ ও সীমাহীন কষ্টের প্রহর কেটে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর নতুন সূর্যোদয় ঘটে।

জাতি আজ গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে স্মরণ করছে সেইসব শহীদকে, যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বপ্নের স্বাধীনতা। বাংলার শোষিত-বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে বুটের তলায় স্তব্ধ করে দিতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে বর্বর অভিযানে নামে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। আলোচনার টেবিলে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ ছেড়ে তারা বন্দুকের নল ও কামানের গোলাকেই বেছে নেয় সমাধানের উপায় হিসেবে। নিরস্ত্র মানুষের ওপর নির্বিচার হামলা ও হত্যাযজ্ঞের পর শুরু হয় দেশকে শত্রুমুক্ত করার মুক্তিযুদ্ধ।

ব্রিটিশের বিদায়ের পর নতুন রূপে এ জাতির ওপর শোষক হিসেবে আবির্ভূত হয় পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকশ্রেণী। পূর্ব বাংলার মানুষের প্রতি তাদের জুলুম-অবহেলা চরম আকার ধারণ করলে প্রতিবাদে ক্রমে অগ্নিগর্ভ হতে থাকে এ অঞ্চল। কিন্তু এ অঞ্চলের মানুষের ন্যায়সঙ্গত দাবির প্রতি কর্ণপাত না করে বুটের তলায় পিষ্ট করার নীতি গ্রহণ করে পশ্চিমের শাসকগোষ্ঠী। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখিয়ে তারা ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নেয়। শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভকারী আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে টালবাহনা শুরু করে শাসকগোষ্ঠী। ফলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ক্ষোভে-বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে।

দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিসংগ্রামের পর পরাজয় মেনে নেয় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে, বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান লে. জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী ৯১ হাজার ৪৯৮ জন নিয়মিত-অনিয়মিত ও আধা সামরিক সৈন্যসহ আত্মসমর্পণ করেন। এর মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ বাণী দিয়েছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা, মিলাদ মাহফিলসহ বিভিন্ন আয়োজন।

দিনটিতে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলো আলোকসজ্জিত করা হবে। বিজয় দিবস উপলক্ষে পত্রপত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ বেসরকারি টেলিভিশনগুলোতে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হবে। মহান বিজয় দিবসে সরকারি ছুটি থাকছে।

spot_img
spot_img

সর্বশেষ

spot_img

এই বিভাগের

spot_img