ফিলিস্তিন স্বাধীনতাকামীদের সমর্থনে ইসরাইল ও ইসরাইল সংশ্লিষ্ট জাহাজে হামলা জোরদার করা ইয়েমেনের হুথিদের ফেরআউন আমলের ১০ দুর্যোগ দিয়ে শায়েস্তার হুমকি দিলো ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের অবৈধ ইসরাইল।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে অবৈধ রাষ্ট্রটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ এই হুমকি দেন।
গত সপ্তাহে ইসরাইলী হামলায় হুথিদের প্রধানমন্ত্রী ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিহতের পর চলতি সপ্তাহে তারা পুনরায়, বরং আগের তুলনায় হামলা জোরদার করেছে এদিকে ইঙ্গিত করে তিনি লিখেন, হুথিরা পুনরায় ইসরাইল অভিমুখে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করেছে।
ফেরআউন ও তার জাতির উপর খোদায়ী সতর্ক বার্তা হিসেবে আসা যে ১০টি দুর্যোগের কথা পুরাতন বাইবেল বা বাইবেলের এক্সোডাস অংশে বর্ণিত রয়েছে, ইসরাইল তা ইয়েমেনের হুথিদের উপরও নিয়ে আসবে, এদিকে ইঙ্গিত করে তিনি লিখেন, আমরা তুমুল অন্ধকার ও প্রথম সন্তান মরে যাওয়া সহ ১০টি দুর্যোগই তাদের বিরুদ্ধে সম্পন্ন করবো।
সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, কাটজের এই পোস্টের কিছুক্ষণ পূর্বেই ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইয়েমেনের হুথিরা।
অবৈধ রাষ্ট্রটির সেনাবাহিনী জানায়, আজ হুথিরা আবার ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্রগুলো তাদের ভূখণ্ডের বাইরে আঘাত হেনেছে। এর আগের দিনও তারা হুথিদের চালানো কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করে।
এছাড়া সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) ইসরাইলের মালিকানাধীন ট্যাংকার জাহাজ স্কারলেট রেও লোহিত সাগরে হামলার শিকার হয়, পরবর্তীতে যার দায় স্বীকার করে নেয় ইয়েমেনের একাংশে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা করা সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।
ইসরাইল যেমন ইয়েমেনের হুথিদের ফেরআউনের আমলের দুর্যোগে নিপতিত করার হুমকি দেয়, ঠিক তেমনি ফিলিস্তিন স্বাধীনতাকামী ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ফেরআউনের ন্যায় জালেম অবৈধ রাষ্ট্রটিকে ‘মূসার লাঠি’ দিয়ে শায়েস্তা করার ঘোষণা দেয়।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে ‘মূসার লাঠি’ নামে নতুন আঙ্গিকে অভিযান শুরুর ঘোষণা দিয়ে একটি ভিডিও ফুটেজও প্রকাশ করা হয়। যেখানে কাসসাম যোদ্ধাদের আগের তুলনায় আরো দুর্ধর্ষ ভাবে ইসরাইলী সেনাবাহিনী ও তাদের যানবাহনে হামলা চালাতে দেখা যায়।
উল্লেখ্য, বাইবেলের এক্সোডাস অংশের বর্ণনা অনুযায়ী, বনী ইসরাইলের উপর নির্যাতন চালিয়ে যাওয়া ফেরআউন ও তার জাতির উপর খোদায়ী সতর্কবার্তা হিসেবে যে ১০টি দুর্যোগ নেমে এসেছিলো তা হলো –
১. নীল নদ রক্তিম হয়ে যাওয়া।
◑ এই দুর্যোগের সময় মিশরের সব পানি রক্তে পরিণত হয়েছিলো। সব মাছ মরে গিয়েছিলো এবং পানযোগ্য পানির সকল উৎস নষ্ট হয়ে পড়েছিলো।
২. ব্যাঙের উপদ্রব।
◑ এই দুর্যোগের সময় ঘর, বিছানা, রান্নাঘর সহ মিশরের সর্বত্র ব্যাপকভাবে ব্যাঙ ছড়িয়ে পড়েছিলো।
৩. উকুন/মশার উপদ্রব।
◑ এই দুর্যোগের সময় এত বেশি পরিমাণ উকুন বা মশা বৃদ্ধি পেয়েছিলো, যেনো ধূলা উকুন বা মশায় পরিণত হচ্ছিলো এবং মানুষ ও পশুকে আক্রান্ত করেছিলো।
৪. মাছির ঝাঁক।
◑ এত পরিমাণ মাছি বৃদ্ধি পেয়েছিলো যে, যা তৎকালীন মিশরে ইতোপূর্বে কখনো দেখা যায়নি। ছেয়ে যায়। বিশেষত, ঘরবাড়িগুলো মাছিতে ভরে গিয়েছিলো। এসব মাছি প্রচণ্ড রকমের দুর্ভোগ ও সমস্যার সৃষ্টি করেছিলো।
৫. পশুর মৃত্যু।
◑ এমন দুর্যোগ দেখা দেয় যে, সবধরণের গবাদি পশু ভয়ানক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।ব্যাপকহারে পশুর মৃত্যু হয়।
৬. দেহে ঘা ও ফোড়া।
◑ গণহারে মানুষ ও পশুর শরীরে যন্ত্রণাদায়ক ফোড়া দেখা দেওয়ার দুর্যোগও নেমে এসেছিলো।
৭. আগুনে শিলাবৃষ্টি।
◑ ফেরআউনের আমলে খোদায়ী সতর্কবার্তা স্বরূপ আগুন মিশ্রিত ভয়ঙ্কর শিলাবৃষ্টির দুর্যোগও দেখা দিয়েছিলো, যার ফলে সব ফসল ধ্বংস হয়ে যায়। মানুষ ও পশু আহত হয়।
৮. পঙ্গপাল।
◑ পঙ্গপালের দুর্যোগ ছিলো অন্যতম খোদায়ী সতর্কবার্তা। তৎকালীন মিশরে হঠাৎ বিপুল পরিমাণ পঙ্গপালের উপস্থিতি ঘটে। ঝাঁকে ঝাঁকে পঙ্গপাল এসে সবুজ ফসল ও গাছপালা খেয়ে নষ্ট করে দিয়েছিলো।
৯. তুমুল অন্ধকার।
◑ ফেরআউন ও তার জাতীর উপর খোদায়ী সতর্কবার্তা হিসেবে তৎকালীন মিশর টানা তিন দিন ঘন অন্ধকারে ডুবে থাকে।
১০. প্রথম সন্তানদের মৃত্যু।
◑ এটিও অন্যতম দুর্যোগ ছিলো যে, ফেরাউন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের পরিবার পর্যন্ত, মিশরের প্রত্যেক পরিবারের প্রথম সন্তান মারা যায়।
সূত্র: আল জাজিরা









