বাংলাদেশ ব্যাংক বেসরকারি খাতের পাঁচটি ইসলামি ব্যাংক একীভূত করে একটি নতুন শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে মূলধন দেবে সরকার। একইসঙ্গে ব্যাংক পরিচালনার প্রাথমিক দায়িত্বও গ্রহণ করবে রাষ্ট্র।
নতুন এই ব্যাংক গঠনের মাধ্যমে অর্থনীতিতে শৃঙ্খলা ফেরানো এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে (এসএমই) বিনিয়োগ জোরদার করাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্য বলে জানা গেছে।
একীভূত হতে যাওয়া ব্যাংকগুলো হলো- সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক। এই পাঁচটির মধ্যে চারটি দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কিত এস আলম গ্রুপের অধীনে ছিল। একমাত্র এক্সিম ব্যাংক ছিল নাসা গ্রুপের মালিক নজরুল ইসলাম মজুমদারের নিয়ন্ত্রণে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে পাঁচটি বিশেষ টিম গঠন করছে, যারা আগামী তিন মাস ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা ও ব্যবস্থাপনা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে, জুলাই থেকে অক্টোবরের মধ্যে একীভূতকরণের প্রাথমিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে, রাষ্ট্রীয় মালিকানায় নতুন ব্যাংক গঠনের সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে, শাখা ও জনবল ধীরে ধীরে পুনর্বিন্যাস করা হবে ও অনিয়মিত ঋণ হস্তান্তর করা হবে ‘সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি’র কাছে।
২০২৩ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ব্যাংকগুলোর পুরনো পর্ষদ বাতিল করে নিয়োগ দেওয়া হয় স্বতন্ত্র পরিচালকদের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের নেতৃত্বে ৪ জুন ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে বৈঠক হয়। সেখানে একীভূত ব্যাংক গঠনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত জানানো হয়- আমানতকারীদের আস্থা পুনঃস্থাপন, শরিয়াহ-ভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা আনা, অর্থনৈতিক খাতে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা, খেলাপি ঋণ ১০% এর নিচে নামিয়ে আনা ও ভবিষ্যতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য শেয়ার ছাড়ের পরিকল্পনা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই পাঁচ ব্যাংকের মোট আমানত রয়েছে ১ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা। বিপরীতে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ১ লাখ ৯২ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ, ঋণের চেয়ে আমানতের ঘাটতি প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা।
নতুন ব্যাংক গঠনের মাধ্যমে বহু গ্রাহক ও সাধারণ আমানতকারী স্বস্তি পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ব্যাংকগুলোর বিস্তৃত নেটওয়ার্ক (৭৬০টি শাখা, ৯৭৫টি এটিএম, ৬৯৮টি উপশাখা ও ৫১১টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট) ঠিক রেখে নতুন ব্যাংক কার্যক্রম চালাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, এই একীভূত ব্যাংকটিই হবে দেশের বৃহত্তম শরিয়াহ ব্যাংকগুলোর একটি।
এই পদক্ষেপ শুধু আর্থিক খাতকে নয়, ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থাকেও পুনঃগঠনের এক ঐতিহাসিক প্রয়াস হতে পারে। তবে এটি কতটা স্বচ্ছ, টেকসই এবং জনগণের কল্যাণে কার্যকর হবে, তা সময়ই বলে দেবে।