ধর্ম-বর্ণ ভিত্তিক না হওয়ায় আমেরিকার কথায় স্থানীয় গ্যাংদের সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করবে না বলে জানিয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) রয়টার্সের খবরে একথা জানানো হয়।
খবরে বলা হয়, সম্প্রতি রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় ব্রাজিল সরকার ও আমেরিকার পররাষ্ট্র দপ্তরের নিষেধাজ্ঞা বিভাগের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে আমেরিকার পক্ষ থেকে দেশটির সরকারকে ব্রাজিলিয়ান গ্যাং প্রাইমেইরো কমান্ডো দা ক্যাপিটাল (PCC) ও কমান্ডো ভেরমেলহো (CV)—কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করার অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু ব্রাজিলের সংজ্ঞা অনুযায়ী এসব গ্যাং সন্ত্রাসী না হওয়ায় আমেরিকার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে দেশটি।
ব্রাজিলের জাতীয় জননিরাপত্তা সচিব মারিও সারুবো জানান, ব্রাজিলের আইন অনুযায়ী শুধুমাত্র ধর্মীয় বা বর্ণগত সহিংস কর্মকাণ্ডকে সন্ত্রাসবাদ বুঝানো হয়। ধর্ম-বর্ণ ছাড়া বাকি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডকে সন্ত্রাসবাদ বুঝানো হয় না। তাই ধর্ম-বর্ণ ভিত্তিক দল না হওয়ায় স্থানীয় গ্যাংগুলো কোনো সন্ত্রাসী দল নয়।
তিনি বলেন, “আমাদের এখানে সন্ত্রাসী সংগঠন নেই, বরং সামাজিক অপরাধী সংগঠন রয়েছে।”
তবে বৈঠকে উপস্থিত মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিষেধাজ্ঞা কৌশলের প্রধান ডেভিড গ্যাম্বলের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলটি জানায়, আমেরিকার ১২টি রাজ্যে এই গ্যাংগুলোর সক্রিয় সেল রয়েছে। তারা অস্ত্র, অর্থ ও মাদক পাচারের সাথে জড়িত। এদের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ঘোষণা করা হলে নিষেধাজ্ঞা বিভাগ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারবে। অপরাধ দমন সংস্থাগুলোর কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাবে।
ব্রাজিলের এমন সিদ্ধান্তের ফলে ট্রাম্প প্রশাসন ল্যাটিন আমেরিকান গ্যাং সদস্যদের আমেরিকা থেকে বহিষ্কারের যে উদ্যোগ নিয়েছে তা বাধাগ্রস্ত হবে। কারণ এই সিদ্ধান্তের ফলে গ্যাংয়ের সাথে সম্পৃক্তদের এই দায় দেওয়া যাবে না যে, তারা সন্ত্রাসী দলের সাথে জড়িত যা ব্রাজিল থেকে পরিচালিত হয়।
উল্লেখ্য, আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোতে ইসলাম বিদ্বেষ ও বর্ণবাদ একটি ভয়াবহ সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যাধি। বর্ণবাদ ও ইসলাম বিদ্বেষ থেকে এসব দেশে প্রতি বছর বহু সংখ্যক নৃশংসতা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এরপরও সেখানকার অধিকাংশ রাষ্ট্রে তা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বলে বিবেচিত হয় না। বরং এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে তাদের সরকার ও প্রশাসন সামাজিক অপরাধ বলে গণ্য করে। পক্ষান্তরে মুসলিমদের চিহ্নিত করা হয় সন্ত্রাসী হিসেবে।
এছাড়া মুসলিমদের ধর্মীয় দল সন্ত্রাসী আখ্যায়িত হওয়া সেখানকার অধিকাংশ দেশে সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এমনকি সন্ত্রাসী কিংবা জঙ্গি বলতেই বুঝানো হয় মুসলিমদের কিংবা মুসলিমদের কোনো দলকে।