শুক্রবার | ১০ অক্টোবর | ২০২৫

বিদেশি সাহায্য ছাড়াই টিকে আছে আমাদের অর্থনীতি: আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী

মস্কো ফরম্যাটের সপ্তম সভায় ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাওলানা আমির খান মুত্তাকী ঘোষণা দিয়েছেন যে, আফগানিস্তানের অর্থনীতি এখন সম্পূর্ণভাবে বিদেশি সাহায্য ছাড়াই টিকে আছে। ইমারাতে ইসলামিয়া এখন রাষ্ট্রীয় ব্যয়ের সবকিছু নিজস্ব আয়ে পরিচালনা করছে, যা আফগান অর্থনীতির আত্মনির্ভরতার এক ঐতিহাসিক পরিবর্তন।

সোমবার (৭ অক্টোবর) রাশিয়ার রাজধানীতে এ ফরম্যাট অনুষ্ঠিত হয়। এতে আফগানিস্তান ছাড়াও রাশিয়া, চীন, ইরান, পাকিস্তান, ভারত, মধ্য এশিয়ার দেশসমূহ ও অন্যান্য আঞ্চলিক প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

মাওলানা আমির খান মুত্তাকী বলেন, “আল্লাহর নামে শুরু করছি, যিনি পরম করুণাময়, পরম দয়ালু। মহান আল্লাহর কাছে প্রশংসা, এবং মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর পরিবার ও সাহাবীদের প্রতি সালাম ও শুভেচ্ছা। এরপর, রাশিয়ান ফেডারেশনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্যারগেই ল্যাভরভ, মস্কো ফরম্যাটের সপ্তম সভার সদস্য এবং অতিথি দেশগুলোর সম্মানিত প্রতিনিধি, সকলকে শুভ সকাল।

তিনি বলেন, সবথেকে আগে আমি রাশিয়ান ফেডারেশনের সম্মানিত সরকারকে ধন্যবাদ জানাই, যে প্রথমবার আফগানিস্তানকে সদস্য হিসেবে মস্কো ফরম্যাটে আমন্ত্রণ করেছে। এছাড়াও বিশেষভাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্যারগেই ল্যাভরভ এবং রাশিয়ান ফেডারেশনকে তাদের আতিথেয়তা, সাদর আপ্যায়ন এবং উষ্ণ স্বাগতমের জন্য ধন্যবাদ জানাই। আমি এই সুযোগে রাশিয়ান ফেডারেশনকে প্রশংসা জানাই, যে সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে আফগানিস্তান ইসলামি আমিরাতকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এটি এমন একটি পদক্ষেপ ছিল যা আমাদের মধ্যে অনন্য কার্যকর সহযোগিতার পথ খুলে দিয়েছে।”

তিনি উল্লেখ করেন, আফগানিস্তানের এবং অঞ্চলের সম্পর্ক গত চার বছরে আরও শক্তিশালী এবং স্থিতিশীল হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক সমাজের সঠিক বোঝাপড়া এবং শুভেচ্ছার প্রমাণ।

তিনি আরও বলেন, “আপনারা জানেন যে, আমাদের শেষ মস্কো ফরম্যাট সভা ২০২৪ সালের ৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই সময় থেকে অঞ্চল এবং বিশ্বের পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। সৌভাগ্যক্রমে, আফগানিস্তান এবং অঞ্চলের সম্পর্ক পূর্বের তুলনায় আরও শক্তিশালী এবং স্থিতিশীলতার দিকে এগোচ্ছে। এটি আফগানিস্তান সম্পর্কে বৈশ্বিক সমাজের সঠিক বোঝাপড়া এবং শুভেচ্ছার প্রমাণ দেয়।”

মাওলানা মুত্তাকী বলেন, আফগানিস্তানে কোনো গোষ্ঠী নেই যা দেশের ভূমি ব্যবহার করে অন্য দেশে সমস্যা সৃষ্টি করে। তিনি উল্লেখ করেন যে, সম্প্রতি কিছু পক্ষ আফগানিস্তানকে অঞ্চলের জন্য ঝুঁকি হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে, যা তিনি কঠোরভাবে নিন্দা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “আপনারা জানেন, কিছুদিন আগে কয়েকটি দেশের যৌথ ঘোষণা প্রকাশিত হয়েছিল, যেখানে আফগানিস্তানে বিভিন্ন গোষ্ঠীর উপস্থিতি উল্লেখ করা হয়েছিল। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আফগানিস্তানে কোনো গোষ্ঠী নেই যা আফগানিস্তানের ভূমি ব্যবহার করে অন্য দেশে সমস্যা সৃষ্টি করে। আশা করি, অস্থিতিশীলতার জন্য দায়ী দেশগুলি তাদের দায়িত্ব গ্রহণ করবে। আমি গভীর দুঃখের সঙ্গে বলছি যে, কিছু পক্ষ সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করছে গত চার বছরে আসা শান্তি ও নিরাপত্তাকে স্বীকৃতি না দিয়ে আফগানিস্তানকে অঞ্চলের জন্য ঝুঁকি হিসেবে উপস্থাপন করতে। আমি এই প্রচেষ্টা কঠোরভাবে নিন্দা জানাই।”

আফগানিস্তানের নিরাপত্তা অর্জন ও মাদক নিয়ন্ত্রণে সফলতার কথা উল্লেখ করেন আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমাদের তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি দা’শ এবং অন্যান্য কিছু গোষ্ঠী অঞ্চলের অন্য দেশে প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতির কেন্দ্র স্থাপন করেছে, যা আফগান সরকারের জন্য উদ্বেগের কারণ। এছাড়াও, আফগানিস্তানে মাদক চাষ বন্ধের ফলে বিদেশে মাদকের চাষ, উৎপাদন ও পাচার বেড়েছে।”

আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিয়ে তিনি বলেন, “ইমারাতো ইসলামিয়া প্রথমবারের মতো জাতীয় উন্নয়নের ৫ বছরের কৌশল ঘোষণা করেছে। এর প্রয়োগ দেশের উৎপাদন খাত, বিনিয়োগ, রপ্তানি এবং অবকাঠামোর উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনীতির ভিত্তি আরও শক্ত করবে। গত চার বছরে আমাদের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার পথে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশীয় মোট উৎপাদন (জিডিপি) ১৪.৪ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ১৭.৪ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, যা প্রায় ৩% বার্ষিক বৃদ্ধি নির্দেশ করে। আফগান রপ্তানি গত চার বছরে বার্ষিকভাবে ৭০০ মিলিয়ন ডলার থেকে ২ বিলিয়ন ডলার-এ বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং আফগান পণ্য এখন ৭০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। আমদানি প্রতি বছর ৬.৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার-এ উন্নীত হয়েছে।

মাওলানা মুত্তাকী বলেন, আফগান সরকার সব সরকারি ব্যয় অভ্যন্তরীণ বাজেট থেকে বহন করছে। পূর্বে প্রতি বছর ৪–৬ বিলিয়ন ডলার বিদেশি সাহায্য বাজেটের অংশ ছিল। বিদেশি বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি ২১ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে ৭ বিলিয়ন ডলার বাস্তব বিনিয়োগে রূপান্তরিত হয়েছে। শিল্প খাতে ৩,৫০০টি থেকে বেড়ে ৬,০০০-এর বেশি কারখানা কার্যকর হয়েছে।”

তিনি আফগানিস্তানকে অঞ্চলীয় সংযোগ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দেখতে এবং মাদকবিরোধী সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন

বক্তব্যের শেষ দিকে গাজ্জা যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে তিনি আফগান পররষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমি আশা করি চলমান আলোচনার মাধ্যমে একটি বাস্তব ফলাফলের দিকে অগ্রসর হওয়া যাবে, যেখানে ফিলিস্তিনিরা নিজস্ব ভাগ্য নির্ধারণের স্বাধীন অধিকার এবং শান্ত জীবন পাবে। আমি আহ্বান জানাই, যারা গাজায় চলমান নির্যাতন ও গণহত্যা বন্ধ করতে সক্ষম, তারা প্রায়োগিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।”

সূত্র: আরটিএ

spot_img
spot_img

এই বিভাগের

spot_img