আরব নেতাদের সমর্থন পাওয়া মিশরের গাজ্জা পুনর্গঠন পরিকল্পনা এবার ইউরোপের বড় ৪টি দেশের সমর্থন পেয়েছে।
শনিবার (৮ মার্চ) আল জাজিরার খবরে একথা জানানো হয়।
খবরে বলা হয়, মিশরের গাজ্জা পুনর্গঠন পরিকল্পনায় সমর্থন জানিয়েছে ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য।
এই ৪ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছেন, মিশরের পরিকল্পনাটি গাজ্জা পুনর্গঠনের একটি বাস্তবসম্মত পথ দেখায়। এটির বাস্তবায়ন গাজ্জার ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের বিপর্যয়কর জীবনযাত্রার দ্রুত অবসানের ও গাজ্জার টেকসই উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেয়। তাই আমরা উৎখাত বিহীন এই পরিকল্পনাকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এছাড়া ফিলিস্তিন স্বাধীনতাকামী ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসও মিশরের পরিকল্পনাকে ইতিবাচক ভাবে দেখছে বলে জানায়। ২য় ধাপ বা পুনর্গঠন ও সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহারের পথে না হেটে ১ম ধাপের মেয়াদ বাড়াতে ইহুদিবাদী অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল ৭ম দিনের মতো গাজ্জায় মানবিক সহায়তার প্রবেশ বন্ধ রাখায় সতর্কও করেছে সংগঠনটি। বলেছে, এর প্রভাব ইসরাইলী জিম্মিদের উপর পড়বে। তাই মুসলিম বিশ্বের নেতা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত গাজ্জায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা তুলে নিতে ইসরাইলকে বাধ্য করা।
মিশরের উৎখাত বিহীন গাজ্জা পুনর্গঠন পরিকল্পনায় যা রয়েছে:
৩টি স্তর বা পর্যায়ে গাজ্জা পুনর্গঠনের পরিকল্পনা পেশ করেছে মিশর। তা হলো, অন্তর্বর্তীকালীন পুনর্গঠন ব্যবস্থা, দীর্ঘমেয়াদি পুনর্গঠন ও পরিচালনা। ১ম পর্যায়টির স্থায়ীত্ব হবে ৬ মাস। বাকি ২টি ৪ থেকে ৫ বছরের মধ্যে তার চূড়ান্ত রূপে পৌঁছবে। ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৩ বিলিয়ন ডলার।
১.অন্তর্বর্তীকালীন পুনর্গঠন ব্যবস্থা ~
◑ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একটি কমিটি গঠিত হবে যারা আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের (পশ্চিম তীরের সরকার) অধীনে পরিচালিত হবে।
◑ এই কমিটি ৬ মাস রাস্তাঘাট ইত্যাদি থেকে ধ্বংসস্তুপ পরিস্কারের দায়িত্ব নিবে। ২ লক্ষ অস্থায়ী আবাস নির্মাণ করবে ও ৬০ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত ভবন বসবাসের উপযুক্ত করে তুলবে।
◑ ব্যয় ৩ বিলিয়ন ডলার।
২.দীর্ঘমেয়াদি পুনর্গঠন ~
◑ ধ্বংসস্তুপ পরিস্কার ও নির্মাণ কাজ চলমান থাকবে।
◑ ৪-৫ বছরের মধ্যে ৪ লক্ষ স্থায়ী আবাস নির্মাণের লক্ষ্যে কাজ শুরু হবে।
◑ গাজ্জার সমুদ্র ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পুনর্নির্মাণ করা হবে। মৎস, বাণিজ্য বন্দর ও শিল্পাঞ্চল স্থাপন করা হবে।
◑ বিদ্যুৎ, পানি, টেলিযোগাযোগ পরিষেবা ও বর্জ্য ব্যবস্থা সহ মৌলিক সেবাগুলো বহাল করা হবে।
◑ ব্যয় ২০ বিলিয়ন ডলার।
৩. পরিচালনা :
◑ গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটিটি মানবিক সহায়তা ও পরিচালনা তত্ত্বাবধান করবে।
◑ বিশেষজ্ঞ কমিটির সহায়তার জন্য স্টিয়ারিং এন্ড ম্যানেজমেন্ট কাউন্সিল নামে একটি তহবিল গঠন করা হবে, যা পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের আর্থিক সহায়তা করে যাবে। দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক তহবিল সরবরাহে কাজ করবে।
◑ পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে আগামী বছর নির্বাচন হবে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এমনটিই বলেছেন।
◑ ব্যয় ৩০ বিলিয়ন।
গাজ্জা পরিচালনার দায়িত্বে হামাস না অন্য কেউ?
মিশরের পরিকল্পনায় গাজ্জা পরিচালনার ক্ষেত্রে হামাসকে পাশ কাটানোর চেষ্টা করা হয়েছে, যেমনটি ইসরাইল-আমেরিকা ও ইউরোপও চায়। পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, স্বাধীন ফিলিস্তিনি বিশেষজ্ঞদের একটি দল গঠন করা হবে যা হামাসের বিকল্প হিসেবে গাজ্জার তত্বাবধানে করবে। গাজ্জার মানবিক সহায়তার দায়-দায়িত্বও তাদের কাঁধে বর্তাবে। আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সরকার পিএ যেনো গাজ্জা পরিচালনা করতে পারে তাদের সেই পথ তৈরি করতে হবে।
এছাড়া পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত গাজ্জার শাসনব্যবস্থার তদারকি ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে একটি শান্তিরক্ষী মিশনের অনুমোদন দেওয়ার আহবান জানিয়েছে দেশটি। নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় ফিলিস্তিনি পুলিশ অফিসারদের মিশর ও জর্ডানে প্রশিক্ষণ দিয়ে গাজ্জায় মোতায়েনের কথাও জানিয়েছে এই দুই দেশের সরকার।