ইনসাফ | নাহিয়ান হাসান
সংক্ষিপ্ত বাংলাদেশ সফরে এসে উম্মুল মাদারিস খ্যাত জামেয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসা পরিদর্শন করেছেন তাহাফফুজে খতমে নবুওয়্যাত ভারতের সদর ও দেওবন্দ মাদরাসার দাওয়াহ বিভাগের প্রধান মাওলানা শাহ আলম গৌরকপুরী।
শুক্রবার (১১ মার্চ) সংক্ষিপ্ত সফরে তিনি মাদরাসা পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শনকালে মাওলানা শাহ গৌরকপুরীকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান বাংলাদেশের সর্বোচ্চ কওমি বিদ্যাপিঠটির আরবি সাহিত্য বিভাগের প্রধান মাওলানা আনোয়ার শাহ আল আজহারী।
এসময় জামেয়ার মুহতামিম ও আন্তর্জাতিক তাহাফফুজে খতমে নবুওয়্যাত বাংলাদেশের বর্তমান সভাপতি আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহিয়া এবং নায়েবে মুহতামিম মুফতি জসিম উদ্দীনের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন তিনি।
সৌজন্য সাক্ষাতের এক পর্যায়ে ছাত্রদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্যে শাহ গৌরকপুরী তাহাফফুজে খতমে নবুওয়্যাতের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং বহু আগ থেকেই খতমে নবুওয়্যাত বিষয়ক স্বতন্ত্র সংগঠন থাকায় বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের ওলামায়ে কেরামের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, এখানে বহু আগ থেকেই তাহাফফুজে খতমে নবুওয়্যাত বিষয়ক সংগঠন প্রতিষ্ঠিত। মরহুম হযরত রহিমাহুল্লাহর জীবদ্দশাতেই উক্ত বিষয়ে সাক্ষাতের বহু ইচ্ছা ছিলো। শুধু আমারই নয় বরং এদারার (দারুল উলুম দেওবন্দ) সকলেরই খাহেশ ছিলো আমি যেনো হযরত রহিমাহুল্লাহর সাথে এবিষয়ে সাক্ষাত করি, উনার সংস্রব গ্রহণ করি। হযরতের জীবদ্দশাতে তো আসার তাওফিক হয়নি কিন্তু আজ তাওফিক হলো।
ইলমে নববীর গুরুত্ব ও মর্যাদা বুঝাতে গিয়ে এক পর্যায়ে শাহ গৌরকপুরী বলেন, আপনাদের কখনো দুনিয়া এবং দুনিয়াদারদের কারণে আতংকিত হলে চলবে না। আপনারা মাদরাসা ছাত্ররা পৃথিবীর যে প্রান্তেই যান না কেনো কখনো এই দুই জিনিসের কারণে ভীতসন্ত্রস্ত হবেন না।
আপনারা চার দেয়ালে থেকে যে জ্ঞান অর্জন করছেন তার মর্যাদা অনেক। এর সম্পর্ক দ্বীনের সাথে। যা আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং সম্পর্ক স্থাপন করে দিয়েছেন। এর মর্যাদা কখনো শেষ হওয়ার নয়। উদাহরণ স্বরূপ একজন কুরআনে হাফেজ বা আলেমের স্থান সবসময় সমাজের অগ্রভাগে থাকে।
তিনি বলেন, সমাজের সবাই সাধারণত বলে থাকে, হাফিজ সাহাব আঁপ আগে আওর হাম পিছে। অর্থাৎ আপনার স্থান সর্বাগ্রে। একজন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা কোনো মিনিস্টার কখনো সেই অবস্থানে পৌঁছতে পারে না। এমনকি ওফাতের আগে ইলমে নববী অর্জনের সময় থেকে নিয়ে কোনো হাফেজে কুরআন বা আলেমের যে মর্যাদা ও শান থাকে, তার মৃত্যুর পর তা আরো বহুগুণে বেড়ে যায়।
পরিশেষে তিনি আবার দুনিয়া ও দুনিয়াদারদের কারণে ভীতসন্ত্রস্ত না হওয়ার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে কাদিয়ানী ফিৎনার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, নিজেদের ও ভবিষ্যত প্রজন্মের ঈমান রক্ষায় আমাদের এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এটা তো আমাদের দুর্বলতা যে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১৪শত বছর আগে আমাদের সতর্ক করে গিয়েছিলেন যে, এমন এমন ফিৎনা আসবে। কিন্তু আমরা তাতে কর্ণপাত করিনি, তা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিইনি!
ছাত্রদের উদ্দেশ্যে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়্যাতের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনার পূর্বে জামেয়ার সিনিয়র শিক্ষক ও বিভিন্ন শিক্ষা বিভাগের প্রধানদের উপস্থিতিতে আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহিয়া মাওলানা শাহ আলম গৌরকপুরীর হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন এবং জামেয়া পরিদর্শনে আসায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
জবাবে শাহ গৌরকপুরীও জামেয়া প্রধান ও তদসংশ্লিষ্ট সকলের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন এবং দেওবন্দে তার শিক্ষা জীবনের সূচনায় হাটহাজারীর উল্লেখযোগ্য অবদানের ছোট স্মৃতি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, তাহাফফুজে খতমে নবুওয়্যাত ছাড়াও জামেয়া হাটহাজারীতে আমার আগমনের অন্যতম কারণ আহমদ আলী কিংবা মুহাম্মদ আলী নামী অত্র জামেয়ার এক শিক্ষার্থী। যার সান্নিধ্য ও হেদায়া পাঠ আমাকে দেওবন্দের ভর্তি পরীক্ষায় ১ম স্থান অর্জন করতে সাহায্য করেছিলো।
উল্লেখ্য, মাওলানা শাহ আলম গৌরকপুরী বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে কাদিয়ানী ফিৎনার কথা শুনেন সেখানেই ছুটে যান এবং জনগণকে এবিষয়ে সতর্ক করার জন্য বিভিন্ন আলোচনা সভা, কনফারেন্স ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করেন।
জানা যায়, ভারতের বহু কাদিয়ানী অমুসলিম তার আলোচনায় নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে নিজেকে সংশোধন করে নেন এবং কালিমা পাঠ করে আবার ইসলামের সুশীতল ছায়ায় প্রবেশ করেন।
অমুসলিম কাদিয়ানীদের প্রধান ভ্রান্তি হলো, সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বশেষ নবী ও রাসূল হিসেবে অস্বীকার এবং কাদিয়ানী মতের প্রতিষ্ঠাতা মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে নবী, ইমাম মাহদী ইত্যাদি রূপে স্বীকার।
পাকিস্তানের প্রখ্যাত ইসলামী ব্যক্তিত্ব মুফতি তারেক মাসুদের মতে অমুসলিম কাদিয়ানীরা বর্তমানে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় গ্রহণ করছে এবং সেসব দেশে নিজেদেরকে নির্যাতিত হিসেবে উপস্থাপন করছে! অমুসলিম হলেও মুসলমানিত্বের নামে তারা কাদিয়ানী মতের প্রচার করে বেড়াচ্ছে এবং ইউরোপিয়দের মুসলিম বানানোর পরিবর্তে কাদিয়ানীতে রূপান্তর করছে। ইউরোপিয়রা বুঝতেই পারছে না যে তারা মূলত ইসলামের নামে ভ্রান্ত অমুসলিম কাদিয়ানী মতবাদে দীক্ষিত হচ্ছে!