জাতিসংঘ জানিয়েছে, ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নেওয়া মানবিক সংকটের মাঝেও ইসরাইল বাহিনী গাজ্জা উপত্যকায় তাদের ১৮টি মানবিক সমন্বয় অনুরোধের মধ্যে ১১টিই প্রত্যাখ্যান করেছে।
মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মুখপাত্র ফারহান হক বলেন, “ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ গাজ্জার ভেতরে বহু মানবিক মিশনেই অনুমতি দিচ্ছে না। ফলে ফিলিস্তিনিদের জন্য সীমিত পরিসরে যেটুকু সেবা পৌঁছানো সম্ভব, তাও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রত্যাখ্যাত অনুরোধগুলোর মধ্যে ছিল বিশুদ্ধ পানি পরিবহন, জ্বালানি সংগ্রহ, খান ইউনুসে উদ্ধার অভিযান এবং রাস্তাঘাট মেরামতের মতো জরুরি কাজ।”
তিনি জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় কার্যালয়-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “ইসরাইলি সামরিক আগ্রাসনের কারণে গাজ্জায় দুই মিলিয়নের বেশি মানুষ সবচেয়ে মৌলিক প্রয়োজন থেকেও বঞ্চিত হয়ে পড়েছে।”
উত্তর গাজ্জায় দখলদার সেনাবাহিনীর হামলা আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, জানিয়ে তিনি বলেন, “সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইসরাইলি অভিযান ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এতে বহু নিরীহ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ক্ষুধার্ত, বাস্তুচ্যুত মানুষ যখন সামান্য খাবারের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিতরণকেন্দ্রে যাচ্ছেন, তখনও দখলদার বাহিনী তাদের হত্যা করছে।”
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২৭ মে থেকে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে “গাজ্জা ত্রাণ ফাউন্ডেশন” নামে একটি তথাকথিত মানবিক উদ্যোগ চালু করা হয়েছে। এটি ইচ্ছাকৃতভাবে জাতিসংঘকে পাশ কাটিয়ে পরিচালিত হচ্ছে।
অনেক ফিলিস্তিনি একে উত্তর গাজ্জার অধিবাসীদের জোরপূর্বক দক্ষিণে স্থানান্তরের একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন।
ইসরাইল ২ মার্চ থেকে গাজ্জার প্রধান সীমান্তগুলো সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রেখেছে। শুধু নামমাত্র কয়েকটি ট্রাককে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, যা ফিলিস্তিনিদের বেঁচে থাকার জন্য একেবারেই অপ্রতুল। অথচ গাজ্জায় প্রতিদিন ন্যূনতম ৫০০টি সাহায্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করলেই কেবল জরুরি প্রয়োজন মেটানো সম্ভব।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরাইল বিশ্ব জনমতের যুদ্ধবিরতির আহ্বান অগ্রাহ্য করে গাজ্জা উপত্যকায় লাগাতার হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ইসরাইলি গণহত্যায় প্রায় ৫৫,০০০ ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
এই মানবতাবিরোধী অপরাধের কারণে ২০২৩ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজ্জায় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্ট-এর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
পাশাপাশি, গাজ্জায় চলমান গণহত্যার দায়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত-এ একটি গণহত্যার মামলা এখনও চলমান রয়েছে।
সূত্র : মিডলইস্ট মনিটর