ভারতে এবার মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের মাজার (সামাধি) ভেঙে সরানোর দাবি জানিয়েছেন বিজেপি নেতারা। দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রের সম্ভাজিনগর (যার নাম আগে ছিল আওরঙ্গাবাদ) জেলার খুলদাবাদে রয়েছে এই সম্রাটের মাজার। মাজার সরানোর এই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ।
সোমবার (১০ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ ছত্রপতি সম্ভাজিনগর জেলার খুলদাবাদ থেকে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের মাজার অপসারণের দাবিকে সমর্থন করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, এটি আইনের মাধ্যমেই করতে হবে। কারণ পূর্ববর্তী কংগ্রেস সরকার এই সমাধিসৌধটি আর্কেওলজিক্যাল সোসাইটি অব ইন্ডিয়ার (এএসআই) কাছে হস্তান্তর করেছিল এবং স্থানটি ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক সংস্থা কতৃক সুরক্ষিত।
সম্প্রতি সম্রাট আওরঙ্গজেবকে চোর এবং লুটেরা বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বিজেপির সাতারা সংসদ সদস্য উদয়নরাজে ভোঁসলে মাজারটি জেসিবি মেশিন পাঠিয়ে ভেঙে ফেলার দাবি করেন।
তিনি বলেন, যারা আওরঙ্গজেবের সমাধিতে যায় এবং শ্রদ্ধা জানায় তারা তার ভবিষ্যৎ (আশ্রয়) হতে পারে। তাদের উচিত সেই সমাধিটি তাদের নিজের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু তারপরও আওরঙ্গজেবের গৌরব ও প্রশংসা আর সহ্য করা হবে না।
এর আগে গত ৪ মার্চ বিজেপি নেতা নবনীত রানা সম্রাট আওরঙ্গজেবের মাজার ভেঙে ফেলার দাবি জানিয়ে বলেছিলেন, আমি মহারাষ্ট্র সরকারকে অনুরোধ করতে চাই, ঠিক যেভাবে আওরঙ্গাবাদের নাম পরিবর্তন করে আমাদের ভগবান সম্ভাজি মহারাজের নামে রাখা হয়েছিল, তেমনই আওরঙ্গজেবের সমাধিও ভেঙে ফেলা উচিত।
প্রসঙ্গত, সম্রাট আওরঙ্গজেবকে নিয়ে সমাজবাদী পার্টির সংসদ সদস্য আবু আজমী এক বক্তব্যে বলেছিলেন, সম্রাট আওরঙ্গজেব বহু হিন্দু মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং তিনি মোটেই নিষ্ঠুর প্রজাতির মানুষ ছিলেন না।
তার এই বক্তব্য কোনোভাবে মেনে নিতে পারেনি ভারতের হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীরা। যার ফলে তারা একের পর এক বিতর্কিত দাবি জানাতে থাকে।
হিন্দুত্ববাদীদের এমন সমালোচনার জবাবে আজমী বলেন, আমি যা বলেছি তা ঐতিহাসিকদের বক্তব্য। শিবাজি কিংবা সম্ভাজি মহারাজকে খাটো করার জন্য আমি একথা বলিনি। আমার কথাকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আমার কথায় কেউ যদি আঘাত পেয়ে থাকেন, তাহলে আমি ক্ষমা চাইছি। আমি আমার কথাও ফিরিয়ে নিচ্ছি।
পরে তার এই মন্তব্যের জন্য তাকে মহারাষ্ট্র বিধানসভার অধিবেশনের বাকি দিনগুলোর জন্য বহিষ্কার করা হয়।
উল্লেখ্য, সম্রাট আওরঙ্গজেব ছিলেন ছয়জন মুঘল সম্রাটের মধ্যে সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ সম্রাট। তিনি মারা গেছেন ৩০০ বছরেরও বেশি সময় আগে। ভারতকে ১৬৫৮ সাল থেকে ১৭০৭ সাল পর্যন্ত অর্ধ-শতাব্দী কাল ধরে শাসন করেছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম। তিনি শরিয়া আইন চালু করেছিলেন এবং তাকে বলা হয় সর্বশেষ কার্যকর মুঘল সম্রাট।