বৃহস্পতিবার, মার্চ ১৩, ২০২৫

ভারতে ২ মুসলিম সহোদরকে কুপিয়ে জখম ও জয় শ্রী রাম বলতে বাধ্য করলো হিন্দুত্ববাদী ধর্মীয় চাঁদাবাজরা

ভারতে ২ মুসলিম সহোদরকে কুপিয়ে জখম ও জয় শ্রী রাম বলতে বাধ্য করলো উগ্র হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী ও ধর্মীয় চাঁদাবাজরা।

বুধবার (১২ মার্চ) মুসলিম মিররের খবরে একথা জানানো হয়।

খবরে বলা হয়, উত্তর প্রদেশের বারাণসী জেলার দিনদয়াল গ্রামে নিয়াজ আহমদ ও খুরশিদ আহমদ নামের রোযাদার ২ মুসলিম সহোদরকে কুপিয়ে জখম ও জয় শ্রী রাম বলতে বাধ্য করেছে হিন্দুদের ধর্মীয় হোলি উৎসবের জন্য চাঁদা উঠাতে আসা উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা।

উগ্র হিন্দুত্ববাদী ধর্মীয় চাঁদাবাজরা রাতে দিনদয়াল গ্রামে হোলির জন্য এই ২ভাইয়ের ঘরে চাঁদাবাজি করতে যায়। নিয়াজ ও খুরশিদ আহমদ তারাবি শেষে ঘরে ফিরতে ফিরতে দেখেন ১০-১২ জনের একটি দল তাদের ঘরে হোলির জন্য চাঁদাবাজি করতে এসেছে। তখন বড় ভাই নিয়াজের সাথে তাদের তর্কাতর্কি হয়। এক পর্যায়ে তারা তাকে গালাগালি, লাঞ্চিত ও ধর্মীয় ভাবে অপমান করতে শুরু করে। ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাকে জয় শ্রী রাম বলতে বাধ্য করে। এক পর্যায়ে তারা তাকে পেটাতে ও কুপিয়ে জখম করতে শুরু করে। ছোট ভাই খুরশিদ তাদের বাঁধা দিতে ও বড় ভাইকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে তাকেও মারধর ও কুপিয়ে জখম করে।

এই নির্মমতা ও নৃশংসতার ভিডিও ফুটেজও সংরক্ষিত রয়েছে। যেখানে দেখা যায়, মারধর ও কোপানোর কারণে ২ ভাই বেহুশ হয়ে পড়ে যাচ্ছেন। তাদের মাথা, কাঁধ ও পিঠ লক্ষ্য করে আঘাত করা হচ্ছিলো। তাদের শার্ট রক্তে রঞ্জিত হয়ে উঠেছিলো। হামলাকারীর সংখ্যা প্রথমে ১২ জন হলেও তাদের উগ্র হিন্দুত্ববাদী হৈ-হুল্লোড়ে আরো হামলাকারীর আগমন ঘটে। সবাই মিলে ওই ২ভাইকে পেটাতে ও জখম করতে থাকে।

নিয়াজ আহমদ পরবর্তীতে সংবাদমাধ্যমকে জানান, তারা হোলির জন্য চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় তাদের গালাগাল করতে শুরু করে হিন্দুত্ববাদী ধর্মীয় চাঁদাবাজরা। তারা প্রথমে সংখ্যায় ১২ জনের মতো ছিলো। তাদের ২ ভাইকেই পরবর্তীতে জয় শ্রী রাম বলতে বাধ্য করা হচ্ছিলো। এটিও অস্বীকার করায় প্রথমে তাকে বেদম মারধর শুরু করে। তাকে বাঁচাতে চেষ্টা করলে তার ছোট ভাইকেও বেদম মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। পরবর্তীতে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলায় কি হয়েছিলো আর কিছুই বলতে পারেন না।

এই নির্মমতা ও নৃশংসতার ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে সকলের মাঝে ক্ষোভের জন্ম দেয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা ভিডিওতে বারাণসী জেলা পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটকে ট্যাগ করে ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন। দাবী জানাচ্ছিলেন দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার ও অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার।

এই প্রসঙ্গে বারাণসীর বরুণ জোনের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার জানান, সারনাথ থানায় একটি প্রাথমিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

উত্তর প্রদেশের উগ্র হিন্দুত্ববাদী যোগী আদিত্য নাথের প্রাদেশিক সরকার ইতিমধ্যে হোলি উৎসবকে কেন্দ্র করে বিশেষ নির্দেশনা জারি করেছে। যার আওতায় সাম্ভলের ঐতিহাসিক শাহী জামে মসজিদ, থানে ওয়ালি ও গুরুদুয়ারা রোড মসজিদ সহ মোট ১০টি মসজিদ উৎসব চলাকালীন সময় ঢেকে রাখা হবে। যেখানে আরো উল্লেখ করা হয় যে, পবিত্র জুম’আর নামাজ ২ ঘন্টা পিছিয়ে দুপুর ২টার দিকে সংক্ষিপ্ত সময়ে দ্রুত আদায় করে নিতে হবে মুসলিমদের। এছাড়া হোলির পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের কাউকে মুসলিমরা বিশ্রামের জন্য বা শরবত ইত্যাদি দিয়ে আপ্যায়ন করতে মসজিদে ঢুকাতে পারবে না, যা বহু বছর ধরে চলে আসছে।

spot_imgspot_img

সর্বশেষ

spot_img
spot_img
spot_img
spot_img