মঙ্গলবার | ১৫ জুলাই | ২০২৫

বাংলাদেশ সমৃদ্ধ হলে পুরো দক্ষিণ এশিয়া সমৃদ্ধ হবে: বিশ্বব্যাংককে প্রধান উপদেষ্টা

spot_imgspot_img

বাংলাদেশকে কেবল একটি ‘ভৌগোলিক সীমানা’ হিসেবে না দেখে বরং অগ্রগতির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে বিশ্বব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি ভৌগলিক সীমানার চেয়ে বৃহত্তর।

সোমবার (১৪ জুলাই) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিশ্বব্যাংকের নবনিযুক্ত দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট জোহানেস জুট। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটান বিষয়ক নতুন বিভাগীয় পরিচালক জ্যাঁ পেসমে। সাক্ষাতকালে বিশ্বব্যাংকের প্রতি এই আহ্বান জানান অধ্যাপক ইউনূস।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সমৃদ্ধ হলে, পুরো দক্ষিণ এশীয় অঞ্চল সমৃদ্ধ হবে। যদি আমরা নিজেদের বিচ্ছিন্ন করি, তবে আমরা অগ্রগতি করছি না। আমাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সুবিধা এবং পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। আমাদের একটি সমুদ্র আছে। এটি আমাদের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।’

আজ মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই সাক্ষাতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানিয়েছে, বৈঠকে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছেন জুট। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক খাতে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচির জন্য অধ্যাপক ইউনূসকে সাধুবাদও জানান তিনি।

আলোচনায় বাংলাদেশের প্রতি নিজের গভীর ভালোবাসার কথা জানান জুট। তিনি ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে তার দায়িত্ব পালনের স্মৃতিচারণও করেন।

অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টার প্রশংসা করে জুট বলেন, ‘আপনার এবং আপনার চমৎকার টিমকে ভালো কাজের জন্য সাধুবাদ।’

এ সময় বিশেষ করে আর্থিক খাতের অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং কিছু বিষয় মোকাবিলায় সরকারের প্রচেষ্টার কথা তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এই যাত্রা অব্যাহত রাখতে এবং বাংলাদেশের মানুষের উচ্চাকাঙ্ক্ষায় অংশীদার হতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।’

এ ছাড়াও বৈঠকে গত বছরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহত শিক্ষার্থীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান জুট। একে তিনি ‘বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত সবার জন্য একটি অত্যন্ত আবেগঘন মুহূর্ত’ বলে অভিহিত করেন।

জুটের সমর্থন ও প্রশংসার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানান প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, আমরা যখন দায়িত্ব নিয়েছিলাম, তখন দেশের অবস্থা ছিল একটি ধ্বংসস্তূপের মতো, যেন ভূমিকম্প-পরবর্তী এলাকা। আমাদের অভিজ্ঞতা না থাকার পরও সব উন্নয়ন অংশীদার আমাদের সমর্থন করেছে। এটি আমাদের অনেক সাহায্য করেছে; আমাদের আত্মবিশ্বাসী করেছে।

অধ্যাপক ইউনূস গত জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে তরুণদের ভূমিকার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘তরুণরা এই জাতিকে একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, গত জুলাইয়ে আমাদের তরুণরা যা করেছে তা ঐতিহাসিক। বিশেষ করে আমাদের মেয়েরা এবং নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আমরা আজ জুলাই নারী দিবস পালন করছি, তাদের ত্যাগ যেন ব্যর্থ না হয়। তরুণরাই আমাদের দেশের মূল কেন্দ্রবিন্দু। আমাদের উচিত তাদের দিকে মনোযোগ দেওয়া এবং তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বেশিরভাগ দেশেই তরুণদের অভাব রয়েছে। তাই আমরা তাদের বলেছি, তাদের কারখানাগুলো এখানে নিয়ে আসতে। আমরা শিল্পগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু সরবরাহ করব যাতে এটি একটি উৎপাদনকেন্দ্রে পরিণত হতে পারে।

বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট নারীর ক্ষমতায়নে অধ্যাপক ইউনূসের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, আমরা আপনাকে সমর্থন দেওয়া অব্যাহত রাখব। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশে মেয়েদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি কর্মসূচি চালু হয়েছিল যা অন্যান্য দেশেও অনুকরণীয় হয়ে উঠেছে।

তিনি জানান, গত অর্থবছরে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থায়ন করেছে এবং আগামী তিন বছরেও একইরকম সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

সূত্র: ইউএনবি

সর্বশেষ

spot_img
spot_img
spot_img