শুক্রবার | ১৮ জুলাই | ২০২৫

আসিফ আদনানদের সংবাদ সম্মেলন : মিথ্যা জঙ্গি মামলায় ফাঁসিয়ে ইসলামপন্থীদের দমন করা হচ্ছে

spot_imgspot_img

ইসলামী ব্যক্তিত্বদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা জঙ্গি মামলার প্রতিবাদে এবং জনপরিসরে ইসলামের অবস্থান সংকুচিত করার চক্রান্তের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক আসিফ আদনান ও জাকারিয়া মাসউদ। তারা অভিযোগ করেছেন সম্প্রতি একটি কথিত জঙ্গি মামলায় ভিত্তিহীনভাবে তাদের নাম জড়ানো হয়েছে।

আজ (১৭ জুলাই) বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে জহুরুল হোক চৌধুরী হলে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।

সংবাদ সম্মেলনের আসিফ আদনান জানান, “গত ১৫ জুলাই একটি অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানতে পারি, একটি তথাকথিত ‘জঙ্গি মামলায়’ আমাকে, লেখক ও দাঈ জাকারিয়া মাসউদকে এবং সম্মানিত আলেম মাওলানা রেজাউল করিম আবরারকে ‘পলাতক আসামি’ হিসেবে দেখানো হয়েছে। অথচ আমরা সবাই নিয়মিত জনসম্মুখে দাওয়াতি কাজ করছি, সেমিনারে অংশ নিচ্ছি, বক্তৃতা দিচ্ছি—তারপরও আমাদের ‘পলাতক’ বানানো হয়েছে।”

তিনি বলেন, “এই মামলাটি করেছে এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)। অভিযোগটি ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং রাজনৈতিকভাবে পরিচালিত। আমাদের কর্মকাণ্ডের প্রতিটি উপাদান পাবলিক ডোমেইনে বিদ্যমান। আমরা কেউ কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত নই। মূলত আমাদের ইসলামী আদর্শ ও অবস্থানের কারণেই আমাদের টার্গেট করা হচ্ছে।”

আসিফ আদনান আরও বলেন, “বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কার্যালয় খোলার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ইসলামপন্থীরা সক্রিয়ভাবে অবস্থান নিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটেই হয়তো ইসলামি বুদ্ধিজীবীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে একটি বার্তা দেওয়া হচ্ছে, ইসলামের পক্ষে অবস্থান নিলে রাষ্ট্র তোমার প্রতিপক্ষ হবে।”

তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “এই মামলা শুধু আমাদের মানহানিকর নয়, এটি আমাদের নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি। বাংলাদেশে অতীতে ‘জঙ্গি’ তকমা দিয়ে অনেককে গুম, নির্যাতন ও ক্রসফায়ারের শিকার করা হয়েছে। আজ আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে, কাল হয়তো গুম করে দেওয়া হবে—এর নিশ্চয়তা কে দেবে?”

তিনি বলেন, “সুপরিচিত ব্যক্তিরা যদি এই ধরনের মামলার শিকার হই, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র, মাদ্রাসার শিক্ষক, চাকরিজীবী কিংবা সাধারণ কোনো ধর্মপ্রাণ মুসলমান কতটা নিরাপদ? একবার এই জঙ্গি তকমা দেয়ার সংস্কৃতি শুরু হলে, তা কেবল ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে নয়, বরং সব ভিন্নমতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে। এর আগে শেখ হাসিনার আমলে তাই হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “৫ই আগস্ট লংমার্চের দিন রাষ্ট্র ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানকে ‘জঙ্গি হামলা’ বলে প্রচার করেছিল। আজও সেই একই ধারা পুনরায় দেখা যাচ্ছে।”

আসিফ বলেন, “হাসিনার শাসনামলে জঙ্গিবাদ দমন নাটককে কেন্দ্র করে দেশে একধরনের ফান্ডিং ব্যবসা গড়ে উঠেছিল। আন্তর্জাতিক ফান্ডিং আসতো, আর সেই ফান্ড ভাগ হয়ে যেত বিভিন্ন সংস্থা, অফিসার, এনজিও এবং প্রভাবশালী সাংবাদিকদের মধ্যে। আর এই ফান্ডের বৈধতা তৈরি হতো আমাদের মতো নিরীহ মানুষদের নামে ‘জঙ্গি নাটক’ মঞ্চায়নের মাধ্যমে।”

তিনি বলেন, “এমনকি তখন ইসলামি পোশাক, দাড়ি, টুপি, টাখনুর ওপরে কাপড় পড়া, ইসলামি বই পড়াকে ‘উগ্রবাদ’ বলে প্রোপাগান্ডা চালানো হতো। এসবই ছিল জনপরিসরে ইসলামের অবস্থান সংকুচিত করার আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ।”

আসিফ আদনান বলেন, “আরও ভয়াবহ ব্যাপার হলো, এই প্রক্রিয়ায় অভিযুক্তের আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ থাকে না। কোনো বিচার নেই, প্রমাণ নেই, কেবল অপবাদই তার শাস্তির জন্য যথেষ্ট। এটা কি কোনো সভ্য দেশের বিচারব্যবস্থা হতে পারে?”

তিনি তুলে ধরেন, “এদেশে গুম কমিশনের রিপোর্ট, আয়নাঘর তদন্ত এবং স্বাধীন অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে প্রমাণ হয়েছে, পূর্ববর্তী সরকার ‘জঙ্গি দমন’ এর নামে নিরীহ মুসলমানদের ওপর ভয়াবহ বর্বরতা চালিয়েছে। নির্যাতন, যৌন নিপীড়ন, এমনকি ধর্ষণের মতো অপরাধও তখন ঘটে গেছে। আজ সেই পুরনো জাহেলিয়াত ফিরে আসছে।”
আসিফ আদনান বলেন, “আমরা এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে আইনী পরামর্শ গ্রহণ করছি, ইন শা আল্লাহ। একই সঙ্গে আমরা সাংবাদিক, নাগরিক, আইনজীবী ও ইসলামপন্থী সব শক্তিকে আহ্বান জানাচ্ছি, এই ফ্যাসিবাদী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে একসাথে রুখে দাঁড়াতে হবে।”

তিনি বলেন, “এই ‘জঙ্গি নাটক’ বন্ধ করতে হবে। এর রচয়িতা ও পরিকল্পনাকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। ইসলামপন্থীদের মুখ বন্ধ করার এজেন্ডা ব্যর্থ করতে হবে।”

তিনি সব গণমাধ্যমকে সত্য প্রকাশে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনেরও আহ্বান জানান।

সংবাদ সম্মেলনটি আয়োজনে সহযোগিতা করে বৈষম্যহীন কারামুক্ত আন্দোলন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন লেখক ও আলোচক আহমাদ রফিক, অনলাইন এক্টিভিস্ট ডাক্তার মাহদি হাসান, জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী বরখাস্ত লেফটেন্যান্ট কেএসএম ইনতিসার ইনজিমাম, হাইকোর্টের সিনিয়র আইনজিবি এডভোকেট ওমর ফারুক তালকুদার, বৈষম্যহীন কারামুক্ত আন্দোলনের সেক্রেটারি মুফতী শফিকুল ইসলাম, জয়েন সেক্রেটারি মাওলানা ইসহাক খান ও মাওলানা আল আমীন সাকী প্রমুখ।

সর্বশেষ

spot_img
spot_img
spot_img