জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার (১৬ জুলাই) জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কর্মসূচিতে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের হামলার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলাসহ সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে এক প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ। এ হামলার ঘটনায় চারজন নিহত এবং ৪৫ জন পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকসহ প্রায় অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রেস উইং থেকে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
এতে বলা হয়, মার্চ টু গোপালগঞ্জের অংশ হিসেবে ১৬ জুলাই সকাল ১১টায় গোপালগঞ্জ পৌর উন্মুক্ত মঞ্চে জাতীয় নাগরিক পার্টির এক জনসমাবেশ কর্মসূচি শুরু করার কথা ছিল। তার আগেই শুরু হয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের তাণ্ডব। নাশকতাকারীরা গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারসহ অন্যান্য সরকারি স্থাপনায় হামলা করে। এ সময় সংঘর্ষে চারজন নিহত হন। প্রায় ৪৫ জন পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকসহ প্রায় অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়।
সমাবেশের নিরাপত্তার জন্য সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন তৎপর থাকে। এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের একটি সন্ত্রাসী দল গোপালগঞ্জ সদর থানার উলপুরে আইনশৃঙ্খলা ডিউটিতে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় একজন পুলিশ পরিদর্শকসহ তিনজন পুলিশ সদস্য আহত হয়।
এরপর সকাল ১১টায় গোপালগঞ্জ সদর থানার কংশুর বাসস্ট্যান্ডে গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট সড়কে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের গোপালগঞ্জ পৌর শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. ওমর ফারুক খান রিপনের নেতৃত্বে ৪০-৫০ জন আওয়ামী লীগ সমর্থক সড়কে গাছ ফেলে এবং কাঠ দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় গোপালগঞ্জ ইউএনও’র গাড়ি একই স্থানে গেলে তা ভাঙচুর করে সড়ক অবরোধ করে রাখে।
সকাল সাড়ে ১১টায় কোটালীপাড়া থানার অবদার হাট এলাকায় কোটালীপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম দারিয়ার নেতৃত্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিছিল করে কোটালীপাড়া-পয়সার হাট সড়কে গাছ ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে ২৮০০-৩০০০ নেতাকর্মী রাস্তা অবরোধ করে রাখে। সকাল ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে গোপালগঞ্জ সদর থানার কাঠি বাজার এলাকায় গোপালগঞ্জ-কোটালীপাড়া সড়কে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের গোপালগঞ্জ পৌরসভার নেতা মামুনের নেতৃত্বে ২০০-৩০০ জন আওয়ামী লীগ সমর্থক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সড়কে গাছ ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে অবরোধ করে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতৃবৃন্দ গোপালগঞ্জ পৌরপার্ক সভাস্থলে পৌঁছানোর পূর্বে দুপুর আনুমানিক ১টা ৪০ মিনিটে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ৫০-৬০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল ককটেল বিস্ফোরণ করে ঢাল, দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মঞ্চে আক্রমণ করে। তারা মঞ্চের ব্যানার এবং চেয়ার ভাঙচুর করে। পরে দুপুর ২টা ১ মিনিটে নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ মঞ্চে ওঠেন।
দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে গোপালগঞ্জ সদর থানার সাতপাড় বাজার এলাকায় দুর্বৃত্তরা দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় এবং দুটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। জনগণ রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে ব্যারিকেড দেয় এবং বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগ করে।
দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে পদযাত্রা সভা সমাপ্ত করে নাহিদ ইসলামসহ এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সভাস্থল ত্যাগ করেন। পদযাত্রা সভায় আনুমানিক ২০০ জন মানুষ উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে তাদের গাড়িবহর পরবর্তী পদযাত্রার সভাস্থল মাদারীপুরের উদ্দেশ্যে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর প্রহরায় রওনা দিলে গোপালগঞ্জ পৌরসভার লঞ্চ ঘাটে আওয়ামী লীগ ও এর নিষিদ্ধ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বিকেল ৩টার সময় গাড়িবহর আটকে দেয়।
নাশকতাকারীদের আক্রমণের ফলে সেনাবাহিনী ও পুলিশ এনসিপি নেতাকর্মীদের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিরাপদে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে ৪টা ৫৮ মিনিটে পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে যৌথবাহিনীর সহায়তায় জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতৃবৃন্দ গাড়িতে করে বাগেরহাট হয়ে খুলনার উদ্দেশ্যে চলে যান।
এদিন সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে উচ্ছৃঙ্খল জনতা নিহত চারজনের মরদেহ পোস্টমর্টেম করতে না দিয়ে জেলা হাসপাতাল থেকে জোরপূর্বক নিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত যৌথবাহিনী ও পুলিশ নাশকতার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ২০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
বর্তমানে গোপালগঞ্জ জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৫০৭ জন পুলিশ সদস্যসহ সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসন কারফিউ জারি করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে বর্তমানে পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রয়েছে।