১৯৬৭ সালের পর প্রথমবারের মতো ৫ দিন হতে চলেছে, মসজিদে আকসা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে রেখেছে ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল।
বুধবার (১৮ জুন) মিডল ইস্ট আইয়ের খবরে একথা জানানো হয়।
খবরে বলা হয়, ইরান হামলা শুরুর পর গত শুক্রবার মসজিদে আকসা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইল। ১৯৬৭ তে পবিত্র কুদস নগরী দখলের পর এটিই প্রথম দীর্ঘদিন পবিত্র মসজিদটি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রাখার ঘটনা।
জেরুসালেম ওয়াকফ কাউন্সিলের সদস্য ড. মুস্তফা আবু সুয়াই জানান, এবারই প্রথম পুরো মসজিদ এলাকায় তিনি একা নামাজ পড়েছেন। মসজিদ ও মসজিদ প্রাঙ্গণে আর কোনো মুসল্লী ছিলো না। অথচ এরচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে এবং করোনার সময়ও ডজন ডজন মুসল্লী সহ তিনি সেখানে জামাতে নামাজ আদায় করেছেন।
তিনি জানান, ইরানের হামলা শুরুর পর ইসরাইল নিরাপত্তা অজুহাত দেখিয়ে গত শুক্রবার ফজরের নামাজের মুসল্লীদের জোরপূর্বক বের করে দেয়। মসজিদে আকসা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ ঘোষণা করে। শুধুমাত্র পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা ওয়াকফ বোর্ডের সদস্যদের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেয়। অসংখ্য মুসল্লী এখানে ইবাদাতের জন্য আসলেও তারা তাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি। উল্টো মারধর করে চেকপয়েন্ট থেকে ফিরিয়ে দেয়।
মসজিদের এক কর্মী জানান, তাদের মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলেও কঠোর বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয়। কড়া নজরদারিতে রাখা হয়। শুধুমাত্র তাদের দেখিয়ে দেওয়া পথে ও স্থানেই তারা চলাচল করতে পারছেন এবং অবস্থান করতে পারছেন।
তিনি বলেন, আমরা প্রবেশের জন্য প্রধান ফটকে গেলে আমাদের সিলসিলাহ ফটক দিয়ে প্রবেশ করতে বলা হয়, যে ফটক দিয়ে প্রবেশের জন্য দীর্ঘ সময় হাটতে হয়। তবুও তিনি ও ওয়াকফ বোর্ডের এক সদস্য ভেতরে প্রবেশের জন্য হেটে হেটে সিলসিলাহ গেটে পৌঁছেন। কিন্তু রহস্যজনকভাবে তারা সেই ফটকটি বন্ধ দেখতে পান এবং সেখানে থাকা ইসরাইলী নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাদের চলে যেতে বলেন। তারা জানায়, ফটকটি আরো কয়েক ঘন্টা পর খুলে দেওয়া হবে।
মসজিদ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিত্বরা আশঙ্কা করছেন, বিশ্বের মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে ইসরাইল মসজিদে আকসায় নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এজন্যই তারা মসজিদটি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিয়েছে, যা ৬৭-পর এবারই প্রথম দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ঘটনা। মসজিদ সংশ্লিষ্টদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হলেও তাদের শুধুমাত্র নির্দিষ্ট পথে ও স্থানে যেতে এবং অবস্থান করতে দেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিন ইসলামিক ফতোয়া কাউন্সিল ২০২৩ এর আগস্টে এক বিবৃতিতে জানায় যে, ইসরাইল বাইতুল মুকাদ্দাসে তাদের কথিত থার্ড টেম্পলের নির্মাণ কাজ শুরুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।
এছাড়া ২০২৪ এর আগস্টে ইসরাইলী নিরাপত্তা মন্ত্রী বেন গাভির বারবার সেনা ও উগ্রবাদী ইহুদিদের নিয়ে এই পবিত্র মসজিদে অনুপ্রবেশ করার এক পর্যায়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, তিনি সেখানে সিনেগগ (ইহুদি উপাসনালয়) নির্মাণ করতে চান। একটি অংশে অবাধ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে নির্মাণ কাজের আলামতও পাওয়া যায়, যা বিশাল আচ্ছাদন দিয়ে আড়াল করা ছিলো।
এছাড়া অবৈধ রাষ্ট্রটির সরকারও অবৈধ উপায়ে জোরপূর্বক ওয়াকফ বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এতে ইহুদি ও ইহুদিবাদীদের অবাধ যাতায়াত নিশ্চিত করে। ইহুদি ও ইহুদিবাদীদের মসজিদে আকসায় তীর্থযাত্রার জন্য সরকারি তহবিল গঠন করে।
২০২৪ এর আগস্টে অবৈধ রাষ্ট্রটির সরকার অবৈধ উপায়ে জোরপূর্বক মসজিদের ওয়াকফ বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগ পর্যন্ত মসজিদে আকসা কর্তৃপক্ষ ইহুদি ধর্ম মোতাবেক শুধুমাত্র শুক্র ও শনি দু’দিন উপাসনার অনুমোদন দিয়েছিলো। কিন্তু এর নিয়ন্ত্রণ ইসরাইলের হাতে যাওয়ার পর থেকে সপ্তাহের প্রতিটি দিনই মসজিদে আকসায় তাদের অবাধ যাতায়াত শুরু হয়।
এই দৃশ্যমান অবনতির শুরু হয় ২০২৩ সাল থেকে। নিরাপত্তা মন্ত্রী বেন গাভিরের ছত্রছায়ায় যখন থেকে ইহুদিবাদীরা সন্ত্রাসী তাণ্ডব চালিয়ে প্রতিদিন মসজিদে আকসায় প্রার্থনা করা শুরু করে। এসব তাণ্ডবে ইসরাইলী পুলিশদেরও হামলা ও সহায়তা করতেও দেখা যেতো। এর প্রেক্ষিতেই ফিলিস্তিন ইসলামিক ফতোয়া কাউন্সিল বিবৃতিতে জানিয়েছিলো যে, ইসরাইল বাইতুল মুকাদ্দাসে তাদের কথিত থার্ড টেম্পলের নির্মাণ কাজ শুরুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।