রাজধানীতে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে জাতীয় উলামা মাশায়েখ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান
জমিয়তের সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও বিশেষ অতিথি ছিলেন জমিয়তুল মোদারর্ছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, যাদের বিষয়ে আমাদের পূর্বপুরুষেরা আমাদেরকে সতর্ক করে গেছেন এবং অসংখ্য বইপুস্তকে যাদের ভ্রান্ত মতাদর্শ তুলে ধরেছেন, আল্লাহর ওয়াস্তে তাদের সাথে আপনারা কোন অবস্থাতেই জোট করবেন না। জাতির এই সংকটময় মুহূর্তে এ রকম জাতীয় উলামা-মাশায়েখ সম্মেলন আয়োজন করার জন্য আয়োজক সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দকে মোবারকবাদ জানিয়ে তিনি আরো বলেছেন, যাদের কাছে আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস সালাম ও সাহাবায়ে কেরাম রাজিয়াল্লাহু আনহুম আজ্বমাঈনের শান ও সম্মান নিরাপদ নয় তারা কখনোই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অন্তর্ভুক্ত হতে পারেননা।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন, আমরা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের স্বচ্ছ আক্বীদা লালন ও ইলমে ওহীর হেফাজতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েই রাজনীতি করি, সুতরাং যত বাধা ও সমালোচনাই আসুক না কেন আমরা আমাদের এই আদর্শিক জায়গা থেকে কোন ভাবেই সরবোনা ইনশাআল্লাহ।
সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন, হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক মাওলানা খলিল আহমদ কুরাইশী, পটিয়া মাদ্রাসার মহাপরিচালক মাওলানা আবু তাহের নদবী, মাওলানা নুরুল ইসলাম ওলিপুরী, চট্টগ্রাম দারুল মারিফের মহাপরিচালক মাওলানা ফুরকানুল্লাহ নদবী, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান, বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক মাওলানা আরশাদ রাহমানী, মাওলানা এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী, মাওলানা আলিমুদ্দীন দুর্লভপুরী, মুফতী ফায়েতুল্লাহ হাটহাজারী, মাওলানা খুবাইব জিরি, মাওলানা আনোয়ারুল করিম যশোরী, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী,মাওলানা যাইনুল আবিদীন, মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মাওলানা মুসা আল হাফিজ, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী হাটহাজারী, মুফতী মুহাম্মদ আলী আফতাবনগর,বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমদ, মুফতী সালাউদ্দিন প্রমুখ।
সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, জমিয়তের সভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, সহ সভাপতি মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস তালুকদার, মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ সাদী, সহ-সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী, মাওলানা শেখ মুজিবুর রহমান,মুফতী মুজিবুর রহমান, মাওলানা মাসউদুল করিম,মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমী, মাওলানা মতিউর রহমান গাজীপুরী, মুফতী মকবুল হোসাইন কাসেমী, মাওলানা জামিল আহমদ আনসারী, মাওলানা আতাউর রহমান কোম্পানীগঞ্জী,মাওলানা জয়নুল আবেদীন, মাওলানা আব্দুল হক কাওসারী,মাওলানা লোকমান মাযহারী, মুফতী নাছির উদ্দিন খান, মাওলানা তৈয়্যবুর রহমান চৌধুরী, মুফতী ইমরানুল বারী সিরাজী, মাওলানা নুর মুহাম্মদ কাসেমী, মাওলানা শামসুল আরেফিন খান সাদী, এডভোকেট মোহাম্মদ আলী, মাওলানা শামসুল ইসলাম জিলানী, মুফতী জাবের কাসেমী, মাওলানা হেদায়েতুল ইসলাম, মুফতী মাহবুবুল আলম কাসেমী, মুফতী হাসান আহমদ কাসেমী, মাওলানা হাম্মাদ গাজীনগরী, মাওলানা ফখরুল ইসলাম, মাওলানা হাকিম নুরুজ্জামান আসাদী, মাওলানা নজরুল ইসলাম, মুফতী ইবাদুর রহমান, হাফিজ মাওলানা মুখলেসুর রহমান চৌধুরী, মানার রুহুল আমিন নগরী, মাওলানা ইসহাক কামাল, রিদওয়ান মাযহারী।
সম্মেলনে দেশের চলমান রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ১৩ দফা উত্থাপন করা হয়:
১। ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের অফিস স্থাপনের চুক্তি বাতিল করতে হবে।
২। জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
৩। জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪। প্রাথমিক শিক্ষায় ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক ও গানের শিক্ষক নিয়োগ বাতিল করতে হবে।
৫। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে।
৬। শরিয়াভিত্তিক নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং বিতর্কিত নারী কমিশনের সুপারিশ বাতিল করতে হবে।
৭। সমকামিতা ও ট্রান্সজেন্ডার সংস্কৃতিসহ ইসলামবিরোধী পরিকল্পনা বন্ধ করতে হবে।
৮। পিলখানা, শাপলা, মোদীবিরোধী আন্দোলন ও ২০২৪ সালের গণহত্যার বিচার দ্রুত করতে হবে।
৯। ধর্ম অবমাননা রোধে কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে।
১০। অন্তর্বর্তী সরকারকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
১১। গাজায় গণহত্যা বন্ধ ও স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠায় জোরালো আন্তর্জাতিক ভূমিকা রাখতে হবে।
১২। পার্বত্য অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা দমন করতে হবে।
১৩। কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা ও মসজিদ-মাদ্রাসা দখলসহ সকল অন্যায়-জুলুম বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
১৪। মসজিদ দখল, চাঁদাবাজি ইত্যাদি রোধে সরকারকে কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে।
১৫। জমিয়তের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মুশতাক আহমদ গাজীনগরীর হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও হত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।