মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ধর্মীয় স্বাধীনতা সংক্রান্ত তার প্রতিষ্ঠিত কমিশনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে শায়েখ হামজা ইউসুফকে নিয়োগ দিয়েছেন। হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে এই নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
বিবৃতিতে শায়েখ হামজা ইউসুফকে ইসলামের শাস্ত্রীয় জ্ঞানের একজন অগ্রগামী চিন্তাবিদ হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম স্বীকৃত মুসলিম লিবারেল আর্টস কলেজ জাইতুনা কলেজের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। পাশাপাশি তিনি বার্কলির গ্র্যাজুয়েট থিয়োলজিক্যাল ইউনিয়নের সেন্টার ফর ইসলামিক স্টাডিজ-এর উপদেষ্টা হিসেবেও যুক্ত আছেন।
হোয়াইট হাউস আরও জানায়, টানা প্রায় এক দশক ধরে ‘দ্য ৫০০ মোস্ট ইনফ্লুয়েনশিয়াল মুসলিমস’ তালিকায় তিনি ‘পশ্চিমা বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ইসলামি স্কলার’ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম মেয়াদে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘কমিশন অন আনঅ্যালিয়েনেবল রাইটস’-এর সদস্য ছিলেন।
এই নিয়োগকে ঘিরে মার্কিন মুসলিম সমাজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিশেষত ট্রাম্পের ইসরাইলপন্থী অবস্থান ও ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে তার আগ্রাসী হুমকির কারণে অনেকেই এই সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ মনে করছেন।
শায়েখ হামজা ইউসুফ ছাড়াও ইসলাম ও ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ে কাজ করা ইসমাইল রয়ারকেও উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসের বিবৃতি অনুযায়ী, ১৯৯২ সালে ইসলাম গ্রহণের পর রয়ার ঐতিহ্যবাহী ইসলামি আলেমদের কাছে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করেন এবং দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ইসলামি দাতব্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। তিনি বর্তমানে রিলিজিয়াস ফ্রিডম ইনস্টিটিউট-এর ইসলাম অ্যান্ড রিলিজিয়াস ফ্রিডম অ্যাকশন টিম-এর পরিচালক।
রিলিজিয়াস লিবার্টি কমিশনটি গঠিত হয় ১ মে, হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে অনুষ্ঠিত একটি বহুধর্মীয় অনুষ্ঠানে ট্রাম্প স্বাক্ষরিত নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে। এই কমিশনের উদ্দেশ্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষায় সরকারকে পরামর্শ দেওয়া। কমিশনে ২৬ জন সদস্য রয়েছেন, যাদের মধ্যে খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্মীয় নেতারাও রয়েছেন।
তবে এই কমিশনের কাঠামো ও উদ্দেশ্য নিয়ে সমালোচকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, এটি খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদকে এগিয়ে নিতে ব্যবহার করা হতে পারে।
এদিকে শায়েখ হামজা ইউসুফের অতীত কর্মকাণ্ড ও কিছু বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। ২০০১ সালের আগে তিনি ছিলেন পশ্চিমা পররাষ্ট্রনীতির এক কড়া সমালোচক। কিন্তু ৯/১১ পরবর্তী সময়ে তিনি ‘ন্যায়বিচারের চেয়ে স্থিতিশীলতা’কে গুরুত্ব দেওয়া শুরু করেন এবং পশ্চিমা ও উপসাগরীয় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলেন।
তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত-ঘনিষ্ঠ আলেম শায়েখ আব্দুল্লাহ বিন বায়্যাহর সঙ্গে, যিনি ইউএই সরকারের সমর্থনে পরিচালিত ফোরাম ফর প্রমোটিং পিস-এর নেতৃত্বে আছেন। এই সংস্থায় শায়েখ হামজা ইউসুফের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেক মুসলিম।
২০১৬ সালে তিনি সিরীয় বিপ্লবের স্লোগান নিয়ে বিদ্রুপ করেছিলেন এবং ফিলিস্তিনিদের দুরবস্থার জন্য আংশিকভাবে তাদেরকেই দায়ী করেছিলেন, যা মুসলিম সমাজে ক্ষোভের জন্ম দেয় এবং তাকে মুসলিম মর্যাদা হীন করার অভিযোগের মুখে ফেলে।
একই বছর তিনি দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘বিশ্বের অন্যতম কম বর্ণবাদী দেশ’ এবং তিনি ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনকে সমর্থনে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন, যা আফ্রো-আমেরিকান মুসলিমদের মধ্যেও অসন্তোষ তৈরি করে।
এসব সমালোচনার জবাবে শায়েখ হামজা ইউসুফ বরাবরই তার কর্মকাণ্ডকে ইসলামি শিক্ষার প্রসার, অন্তর্দৃষ্টিমূলক আলোচনা এবং উম্মাহর দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থে কাজের অংশ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক আন্দোলনের পরিবর্তে জ্ঞান, শিক্ষাগত অগ্রগতি এবং ইসলামি ভাবনার মূলধারায় উপস্থিতিই প্রকৃত পরিবর্তন আনে।
তিনি এই কাজের জন্য জাইতুনা কলেজকে একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দেখেন, যার মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী ইসলামি শিক্ষা পদ্ধতি পশ্চিমে পুনর্জীবিত করা সম্ভব। বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, এসব মাধ্যমে মুসলমানদের কণ্ঠস্বরকে প্রভাবশালী মহলে পৌঁছে দেওয়া যায় এবং মুসলিম স্বার্থকে প্রতিনিধিত্ব করা যায়।
শায়েখ হামজা ইউসুফ তার কিছু মন্তব্য, বিশেষ করে সিরিয়ার বিপ্লব ও বর্ণবাদ সংক্রান্ত বক্তব্যকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে বলেও দাবি করেন।
তিনি বলেন, জটিল বিষয়গুলোতে স্লোগান দিয়ে নয় বরং গভীর ও প্রাঞ্জল আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছাতে হবে।
সূত্র : ৫পিলারস