ভারতের গুজরাটে মোহাম্মাদ শোয়াইব (২৬) নামে এক মুসলিম যুবককে নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করেছে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। এনসিআর অঞ্চলের বিভিন্ন হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা না দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে।
শুক্রবার (২২ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মুসলিম মিরর।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শোয়াইব ১৪ আগস্ট মুম্বাই থেকে কাজের উদ্দেশ্যে দিল্লি যাচ্ছিলেন। সুরাট রেলওয়ে স্টেশনের কাছে অজ্ঞাত পরিচয়ের কিছু লোক তাকে নৃশংসভাবে মারধর করে। ফলে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। পরে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি তাকে দিল্লিগামী ট্রেনে তুলে দেন।
শোয়াইব যখন হাজরত নিজামুদ্দিন স্টেশনে পৌঁছান, তখন তিনি মারাত্মকভাবে আহত, ক্ষুধার্ত এবং চরম দুর্বল ছিলেন। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের পর তারা তাকে বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ভর্তি করতে অস্বীকার করে।
শোয়াইবের চাচা বলেন, তার কাছে খাবার ছিল না, শক্তি ছিল না, আর প্রতিটি হাসপাতাল আমাদের ফিরিয়ে দিয়েছে।
পরিশেষে, গাজীয়াবাদের একটি হাসপাতাল চার লক্ষ চল্লিশ হাজার টাকা জমা দেওয়ার শর্তে তাকে ভর্তি করার সম্মতি দেয়। পরিবার অত্যধিক ঋণ নিয়ে এই টাকা সংগ্রহ করে। পরে শোয়াইবের অস্ত্রোপচার করা হয় এবং ডাক্তাররা জানান সফলভাবেই অস্ত্রোপচারটি করা হয়েছে। তবে তিনি এখনো নাজুক অবস্থায় রয়েছেন এবং খুব বেশি কথা বলতে পারছেন না।
ঘটনাটি সম্প্রদায়ের নেতাদের মধ্যে নিন্দা ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। জামিয়াত উলেমা-ই-হিন্দের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা হাকিমউদ্দিন কাসমি বলেন, “এটি শুধু এক যুবকের ব্যাপার নয়; এটি দেখাচ্ছে মুসলিমদের সাথে কেমন আচরণ করা হচ্ছে। আমরা এফআইআর, গ্রেফতার এবং হাসপাতালগুলোর জবাবদিহি দাবি করছি।”
হামলার পরও গুজরাত বা দিল্লি পুলিশ কোনো এফআইআর দায়ের করেনি। সক্রিয় সমাজকর্মীরা বলছেন, এটি মুসলিমদের বিরুদ্ধে অপরাধ উপেক্ষার একটি দীর্ঘমেয়াদি ধারা। দিল্লির মানবাধিকার আইনজীবী এডভোকেট ফিরোজ খান বলেন, “এটি স্পষ্টভাবে একটি অপরাধমূলক হামলা। কেন কোনো এফআইআর হয়নি? হামলাকারীরা কেন মুক্ত? এভাবেই ন্যায় বঞ্চনা হচ্ছে।”
শোয়াইবের পরিবার চিকিৎসা ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তার বাবা, একজন ক্ষুদ্র কৃষক। তিনি বলেন, “আমার ছেলে কেবল পরিবারকে সাহায্য করতে চেয়েছিল। এখন সে হাসপাতালের খাটে জীবনযুদ্ধে লড়ছে। আমরা ন্যায় চাই।”