রবিবার | ৯ নভেম্বর | ২০২৫

টানা তিন দিন পর বাংলাদেশি যুবকের লাশ ফেরত দিল বিএসএফ

অবশেষে দেশে আসল মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নের বিটুলি সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হওয়া বাংলাদেশি ৩০ বছর বয়সী যুবক আব্দুল মুমিন বাপ্পার লাশ। টানা তিন দিন স্বজনদের অপেক্ষা ও আহাজারি শেষে এই লাশ ফেরত দিয়েছে বিএসএফ।

সোমবার (২২ মার্চ) বিকেল উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক শেষে নিহত বাপ্পার লাশ ফেরত দেয় বিএসএফ।

এর আগে বিএসএফের হাতে নিহত বাপ্পার লাশ দেশে ফেরত না আসায় সোমবার (২২ মার্চ) দুপুর থেকে উত্তাল হয়ে উঠে জুড়ী উপজেলার ফুলতলা সীমান্ত। নিহতের বাবা-মা, ভাই, বোন, স্ত্রী, সন্তানসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামবাসীরা লাশের অপেক্ষায় করেছিলেন আহাজারী। লাশ দেশে আনার দাবিতে বাপ্পার পরিবারের স্বজন ও স্থানীয় এলাকার শত শত বিক্ষুব্ধ লোকজন সোমবার দুপুর ১টা থেকে টানা ৪ ঘণ্টা ফুলতলা বিজিবি ক্যাম্পের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও অফিস ঘেরাও করে রাখলে টনক নড়ে বিজিবির।

জানা যায়, ২০ মার্চ সকাল ১১টায় ঘটনাস্থল থেকে নিহত যুবক বাপ্পার মরদেহ উদ্ধার করে ভারতের কদমতলা পুলিশের তত্ত্বাবধানে ধর্মনগর হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। গত রবিবার বেলা ১টা থেকে ৩টার ভেতরে বিজিবি-বিএসএফের পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে লাশ ফেরত নিতে বিজিবিকে চিঠি দেয় বিএসএফ। তখন বিজিবি লাশ নেওয়ার বিষয়টি পরে বিএসএফকে জানাবে বলে পতাকা বৈঠকের সমাপ্তি করে চলে আসে।

সোমবার দুপুরে বিএসএফ একটি গাড়িতে করে বাপ্পার লাশ সীমান্তের জিরো রেখায় নিয়ে আসে ফেরৎ দেওয়ার জন্য এবং ১ ঘণ্টা সীমান্তে অপেক্ষা করে। নিহতের পরিবারের সদস্য ও গ্রামবাসী সীমান্তের জিরো পয়েন্ট এলাকায় বিএসএফ লাশ ফেরৎ দেওয়ার বিষয়টি দেখতে পান। বিজিবির পক্ষে লাশ গ্রহণ না করায় বিএসএফ লাশটি ফেরৎ নিয়ে যায়। লাশ ফেরৎ নেওয়ার বিষয়টি দেখে নিহতের পরিবার ও গ্রামবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার সৃষ্টি হয়।

এরপর খবর পেয়ে বিজিবির-৫২ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার (সিইও) শাহ আলম সিদ্দিকী, জুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সঞ্জয় চক্রবর্তী বিজিবি ক্যাম্পে ছুটে আসেন। তখন তারা উত্তেজিত লোকদের শান্ত থাকার আহবান জানান এবং বাপ্পার লাশ দেশে আনার প্রতিশ্রুতি দেন। সেই প্রেক্ষিতে বিজিবির কমান্ডিং অফিসার শাহ আলম সিদ্দিকী বিএসএসকে লাশ ফেরতের জন্য চিঠি প্রেরণ করেন। এরপর উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অধিনায়ক পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সকল প্রকার কূটনৈতিক আলোচনা শেষে নিহত যুবক বাপ্পার মরদেহ দেশে আনা হয়।

নিহত যুবক বাপ্পার লাশ পৌঁছেছে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁর বাবা আব্দুর রউফ হাউমাউ করে কেঁদে সোমবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে কালের কণ্ঠের এই প্রতিবেদককে বলেন, আমার ছেলের লাশ তিন দিন পর ফেরত পেয়েছি, লাশটিতে পচন ধরেছে। লাশ ধৌত করে দাফন করার প্রক্রিয়া চলছে। আমার ছেলেকে হারিয়ে পরিবারের সকল সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনরা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। নিহত যুবক বাপ্পার মরদেহ দেশে আনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জুড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ সঞ্জয় চক্রবর্তী।

spot_img

সর্বশেষ

spot_img

এই বিভাগের

spot_img