শুক্রবার, মে ২৩, ২০২৫

গাজ্জা গণহত্যা বন্ধে ব্রিটেন সরকারকে দেশটির শীর্ষ মসজিদ ও মুসলিম সংগঠনগুলোর খোলা চিঠি

spot_imgspot_img

গাজ্জা গণহত্যা বন্ধে ব্রিটেনের (ইউকে) সরকারকে খোলা চিঠি দিয়েছে দেশটির শীর্ষ মসজিদ ও মুসলিম সংগঠনগুলো।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) মিডল ইস্ট মনিটরের খবরে একথা জানানো হয়।

খবরে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের শীর্ষ মসজিদ ও মুসলিম সংগঠনগুলো প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকে শক্তিশালী বার্তা সম্বলিত একটি খোলা চিঠি দিয়েছে, যেখানে তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, গাজ্জায় চলমান নৃশংসতার জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের নিষ্ক্রিয়তাই দায়ী। তারা এই নিন্দাও জানিয়েছে যে সরকার একটি সুসংহত, কঠোর এবং নীতিনির্ভর অবস্থান গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে, যা গাজ্জার বেসামরিক জনগণের উপর সম্মিলিত নিপীড়ন, অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ ও জাতি নিধনের শামিল।

ইস্ট লন্ডন মসজিদ, বার্মিংহাম সেন্ট্রাল মসজিদ, ফিন্সবুরি পার্ক মসজিদ এবং রিজেন্টস পার্কের ইসলামিক কালচারাল সেন্টার সহ ৪৪টি শীর্ষস্থানীয় মুসলিম প্রতিষ্ঠান চিঠিতে গাজ্জার দুর্ভিক্ষ এবং ব্যাপক মানবিক দুর্ভোগ রোধে যুক্তরাজ্য সরকারের নৈতিক অমার্জনীয় ব্যর্থতার তীব্র সমালোচনা করেছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, “১৮ মাস যাবত আমরা গাজ্জায় মাত্রাতিরিক্ত অসহনীয় মানবিক কষ্ট ও ধ্বংসযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করে চলেছি। এটা পরিষ্কারভাবে প্রতীয়মান যে, আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন করে ইসরাইল নিরস্ত্র বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে মারণাস্ত্র হিসেবে অনাহারকে ব্যবহার করছে।”

চিঠিতে স্বাক্ষরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রধানমন্ত্রীকে চারটি নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। সেগুলো হলো,

১. অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও বন্দিমুক্তি।
২. গাজ্জা অবরোধের অবসান।
৩. ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান।
৪. ইসরাইলের কাছে সবধরণের অস্ত্র বিক্রয় বন্ধ করা।

তারা সতর্ক করে বলেছে, ইসরাইলের প্রতি যুক্তরাজ্যের অব্যাহত সহায়তা ও জবাবদিহিতার অভাব যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের প্রতি ঘোষিত অঙ্গীকারকে দুর্বল করে দিচ্ছে।

এছাড়াও বলা হয়েছে, “অর্থবহ কূটনৈতিক বা মানবিক হস্তক্ষেপের অনুপস্থিতি এবং ইসরাইলের প্রতি ধারাবাহিক বস্তুগত সমর্থন, যুক্তরাজ্যের ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার সুরক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।”

জোর দিয়ে আরো বলা হয় যে, “দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান কেবল রাজনৈতিক সুবিধার জন্য নয় বরং ন্যায়বিচার, সমতা ও আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে হওয়া উচিত। আমরা জাতিসংঘের প্রস্তাব ও আন্তর্জাতিক ঐকমত্য অনুসারে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির আহ্বান জানাচ্ছি।”

গাজ্জার ২০ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে অনাহারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের প্রাণঘাতী পরিণতির দিকটি তুলে ধরে বলা হয় “হাজার হাজার অপুষ্টিতে ভোগা শিশু ও নবজাতক এখন অমানবিক, যন্ত্রণাদায়ক এবং অ-প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর সম্মুখীন।”

তারা সতর্ক করেছে যে, “আন্তর্জাতিক আইনকে যদি ধর্ম বা জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে বেছে বেছে প্রয়োগ করা হয় তবে তা বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। মানবাধিকার, বৈষম্য ও বর্ণবাদ বিরোধিতা সর্বজনীনভাবে প্রযোজ্য হতে হবে।”

যুক্তরাজ্যের বড় বড় মসজিদ ও মুসলিম সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে সম্মিলিত ভাবে দেওয়া এই চিঠিটি ধর্মীয় ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে সরকারের ওপর ক্রমবর্ধমান চাপের প্রতিফলন, যারা মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ ও গণহত্যা গবেষকদের ভাষায় গাজ্জায় ইসরাইলের জাতি নিধনযজ্ঞের সমাপ্তির জন্য যুক্তরাজ্যের সমর্থন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছে।

সর্বশেষ

spot_img
spot_img
spot_img