ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের ছোড়া গোলাবারুদে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ফিলিস্তিনের গাজ্জা উপত্যকার ৮২ শতাংশ জমি। ইসরাইলের কামানের গোলায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়ে গাজ্জা। যতদূর চোখ যায়, শুধুই ধ্বংসের দৃশ্য। কৃষিজমিগুলো পরিণত হয়েছে ধু-ধু মরুভূমিতে। নেই সবুজে মোড়া মাঠ, নেই ফসল ফলানোরও উপায়। অনাহারে মরছে মানুষ।
দ্য গার্ডিয়ান ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী পরিস্থিতি দিন দিন আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে।
৬১ বছর বয়সী কৃষক সামি আবু আমর এক নিঃস্তব্ধ বিকেলে গাজ্জার শুজাইয়া এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় তিন একর জমির মধ্য দিয়ে বিষণ্ণ মনে হাঁটছিলেন। একসময় এখানেই তিনি চাষবাস করতেন। বাহারি রকামের সবজির চারা বুনতেন। শসা, টমেটো ও আলুসহ মৌসুমি সবজি চাষ করতেন। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে নিজের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতেন। এটিই ছিল ১৩ সদস্যের পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস। কিন্তু ইসরাইলি হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে তার সেই কষ্টের ফসলভূমি। শুধু কৃষিজমিই নয়, ইসরাইলি সেনারা তার কৃষি সরঞ্জাম, সেচব্যবস্থা এবং হাঁস-মুরগির খামারও ধ্বংস করেছে।
আমর বলেন, এই জমি কেবল জীবিকার উৎস নয়, এটি আমার জীবন, আমার ইতিহাস। বছরের পর বছর আমি নিজের ঘাম ঝরিয়ে এটিকে লালন করেছি।
উত্তর গাজ্জার বেইত লাহিয়ার উপকণ্ঠে ৫২ বছর বয়সী ফরিদ আল আত্তার তার জমির মাঝখানে দাঁড়িয়ে, শুকিয়ে যাওয়া টমেটো ও ভুট্টার চারাগুলোর দিকে তাকিয়ে আছেন। হঠাৎ হাঁটু গেড়ে বসে শুকিয়ে যাওয়া চারাগুলোর পাতা ছুঁয়ে তিনি বলেন, আমি বিশ বছর ধরে এখানে চাষ করছি। এই জমি আমাকে সবসময় ভালো ফসল দিয়েছে। কিন্তু এখন এটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। যদি কেউ এগিয়ে না আসে, তবে আমরা আমাদের খাদ্যের একমাত্র উৎস হারাব।
গত বছারের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইল আগ্রাসন শুরুর পর ঘরবাড়ি, দোকানপাট, বেকারি, হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, রাস্তা-ঘাটসহ প্রায় সব বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী- ৮২ শতাংশ ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ৫৫ শতাংশ খামারের সেচব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে, ৭০ শতাংশ কৃষিকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। সেনাদের বর্বর হামলায় ৯৬ শতাংশ গবাদিপশু এবং ৯৯ শতাংশ হাঁস-মুরগি মারা গেছে।
ফলে গাজ্জার জমি এখন অনুর্বর হয়ে গেছে।