আজ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের মানচিত্রে একটি নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল একটি ভূখণ্ড, যার নাম বাংলাদেশ।
একাত্তরের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী নিজ দেশের জনগণের ওপর বর্বর সামরিক অভিযান শুরু করে।
দীর্ঘ সামরিক শাসনের পর ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান আওয়ামী লীগ ও জুলফিকার আলী ভুট্টোর নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টির মধ্যে। ৩০০ আসনের মধ্যে ১৬০টিতে জয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। পিপলস পার্টি পায় ৮১ আসন। বাকি ৫৯টি আসনে মুসলিম লীগ, জমিয়ত ও জামায়াতসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরা নির্বাচিত হন।
আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলেও প্রধান বিরোধী দল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টোর আপত্তির কারণে সেনাপ্রধান ও তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করতে থাকেন। এ নিয়ে একাধিকবার বৈঠক হলেও কোনো সমাধানে পৌঁছানো যায়নি।
২৫ মার্চ ভুট্টোর আপত্তির মুখে আওয়ামী লীগ ও শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার সিদ্ধান্ত নেন জান্তা প্রধান ইয়াহিয়া খান। একই সঙ্গে বাঙালিদের সামরিক শক্তির মাধ্যমে দমনের সিদ্ধান্ত নেয় শাসকগোষ্ঠী। ওই রাতেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাভাষী সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা শুরু করে। তারা প্রথমেই টার্গেট করে আওয়ামী লীগের তৎকালীন নেতা-কর্মীদের।
অভিযানের শুরুতেই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়।
গণহত্যা শুরুর পর আপামর জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত বাংলাভাষী সেনাকর্মকর্তারা বিদ্রোহ করেন। চট্টগ্রামে অবস্থানরত মেজর জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
তিনি ২৬ মার্চ বিকেল ৪টায় একটি শপথ বাক্য পাঠ করান এবং একই দিন প্রথমবারের মতো রেডিওতে ঘোষণা দেন। এই ঘোষণায় তিনি শুধু পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আহ্বান জানাননি, বরং নিজেকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবেও ঘোষণা করেন।
২৭ মার্চ বিকেলে তিনি আরেকটি ঘোষণা দেন, যেখানে বলেন, “আমি, মেজর জিয়া, বাংলাদেশ মুক্তি বাহিনীর অস্থায়ী প্রধান সেনাপতি হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি।”
এই আকস্মিক ঘোষণা হতবিহ্বল জাতিকে উজ্জীবিত করে এবং পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মমতায় ক্ষতবিক্ষত জনমনে নতুন করে আশার সঞ্চার করে।
শুরু হয় দীর্ঘ মুক্তিযুদ্ধ, যার পরিসমাপ্তি ঘটে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের মাধ্যমে।
এই স্বাধিকার আন্দোলনে প্রাণ দিতে হয় লাখ লাখ মানুষকে। সম্ভ্রম হারান হাজারো নারী।
দুইশ বছরের ব্রিটিশ শাসনের পর পাকিস্তান নামে যে দেশটির অভ্যুদয় ঘটেছিল এই অঞ্চলের মুসলমানদের মাধ্যমে, সেই দেশেই ভাষাগত কারণে অকাতরে প্রাণ দিতে হয় বাংলাভাষী মুসলমানদের। মুসলিম হয়েও নিজ দেশের ভিন্ন ভাষাভাষী মুসলিমদের দ্বারা পরিচালিত এমন ভয়াবহ গণহত্যার নজির পৃথিবীর আর কোথাও নেই।