শনিবার, মে ১৭, ২০২৫

জম্মু-কাশ্মীরে ভারতের রাষ্ট্রীয় গণহত্যা ও নির্যাতনের ফিরিস্তি

spot_imgspot_img

ভারত দখলকৃত জম্মু-কাশ্মীরের পাহেলগামে রহস্যময় হামলার মধ্যদিয়ে সম্প্রতি কাশ্মীর ইস্যু আবার সবার নজরে এসেছে। উগ্র হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকার এই হামলার জন্য পাকিস্তান দায়ী বলে দাবী করছে। একে ঘিরে দেশ দুটির মাঝে যুদ্ধ যুদ্ধ পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছে। যদিও আশোক কুমার নামের এক সিনিয়র সেনা কর্মকর্তা, পাহেলগামে ছুটি কাটাতে গিয়ে ভারতীয় মিডিয়া কর্তৃক নিহত হওয়ার গুজবের শিকার এক নৌ-সেনার পরিবার ও স্থানীয়দের বক্তব্যে উঠে আসে যে, ঘটনাটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বাস্তবিক অর্থে এটি কোনো মুসলিম সশস্ত্র গোষ্ঠী পরিচালিত হামলা ছিলো না।

বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও বক্তব্যে হামলাটি সাজানো ও মোদি সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিলো বলে উঠে আসলেও হামলার ধরণ ও ছড়িয়ে পড়া বিবরণ একে মুসলিম সশস্ত্র গোষ্ঠী কর্তৃক সন্ত্রাসী হামলার বাস্তবতা এনে দেয়।

কেননা দখলকৃত কাশ্মীরের পর্যটন এলাকাটিতে হামলাটি এমন সময়ে ঘটে যখন পুরো ভারত মোদি সরকারের মুসলিম বিরোধী ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে ফুঁসছে। তীব্র প্রতিবাদ, নিন্দা ও বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে। আবার পর্যটন এলাকাটিতে এটিই ছিলো প্রথমবারের মতো কোনো হামলার ঘটনা যেখানে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইবি (Intelligence Bureau) ও বিমান বাহিনী কর্মকর্তা সহ সর্বমোট ২৬ জন নিহত হোন। তাদের হত্যার আগে হলিউড, বলিউড সিনেমায় দেখানো সন্ত্রাসী হামলার ন্যায় পর্যটক ও বেসামরিক পরিচয়ে থাকা সেনা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ধর্ম পরিচয় ও কালেমা জিজ্ঞেস করা হচ্ছিলো। যা মানুষকে আরো বেশি করে বিশ্বাস করতে বাধ্য করে যে, এটি মুসলিমদের দ্বারা পরিচালিত কোনো পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলা।

হামলায় নিহতদের ২৪ জন ছিলেন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের, ১জন দখলকৃত জম্মু-কাশ্মীরের এবং অপরজন নেপালের নাগরিক। ধর্মের দিক থেকে নিহতদের মধ্যে একজন মুসলিম ও একজন খ্রিস্টানও ছিলেন।

২৬ জন নিহতের ঘটনায় মোদি সরকার ও বিভিন্ন রাজ্যের উগ্র হিন্দুত্ববাদী নেতারা ২৬ এর প্রতিশোধ ২৬০ মুসলিম দিয়ে নেওয়ার হুমকিও দেয়। অথচ নিছক গরুর মাংস রাখার সন্দেহে ভারতজুড়ে তারা শত শত মুসলিমকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে, গুলি করে কিংবা কুপিয়ে মেরেছে। হত্যা, নৃশংসতা, মসজিদ-মাদরাসা ও বাসা-বাড়ি, দোকানপাট গুড়িয়ে দেওয়ার ধারাবাহিকতা জারি রেখেছে। সরকার ও প্রশাসন উগ্র হিন্দুত্ববাদী হওয়ায় এমন অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীরা।

এছাড়া ভারত দখলকৃত জম্মু-কাশ্মীরের মুসলিমরা ৪৭ এর দেশভাগের সময় থেকে নিয়ে এখন পর্যন্ত নিজেদের কাশ্মীরী মুসলিম হওয়ার খেসারত দিয়ে যাচ্ছে। যে ব্যাপারে পাকিস্তান ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা সময়ে সময়ে আওয়াজও তুলেছে।

দখলকৃত জম্মু-কাশ্মীরের নাগরিকদের উপর ভারতের রাষ্ট্রীয় গণহত্যা ও নৃশংসতার বিষয়টি তাই নতুন কিছু নয়। তবে নথিবদ্ধ ধারাবাহিক গণহত্যা ও নৃশংসতার যে প্রমাণ মেলে তার শুরু ১৯৮৮ ও ১৯৮৯ থেকে যখন কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামীরা নিজেদের ভূখণ্ডে ভারত সরকারের দখলদারিত্ব ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে।

এক্ষেত্রে ভারতের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা পিআইবি ইন্ডিয়া ও কাশ্মীরী সংবাদ সংস্থা কেএমএসে দুই ধরণের তথ্য পাওয়া যায়।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী পিআইবি ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে ২০২০ ব্যতীত ১৯৮৮-২০২৪ পর্যন্ত সময়ে সর্বমোট ২৩ হাজার ৮৪৮ জন কাশ্মীরী নিহতের কথা বলা হয়। গড়ে যার পরিমাণ প্রতি বছর ৬৬২ থেকে কিছু বেশি! সরকারি প্রতিবেদনে এসব স্বাধীনতাকামী কাশ্মীরীকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

অপরদিকে কাশ্মীরী সংবাদ সংস্থা কেএমএসে বলা হয় যে, ১৯৮৯-২০২৫ এর ৩১ মার্চ পর্যন্ত সর্বমোট ৯৬ হাজার ৪২৩ জনকে হত্যা করে ভারতীয় বাহিনী। গড়ে যার পরিমাণ প্রতি বছর ২ হাজার ৬৭৮ থেকে কিছু বেশি। যা সরকারি হিসাবের ৪ গুণ বেশি।

কেমএসের রিপোর্টে ১৯৮৯-২০২৫ এর মার্চ পর্যন্ত হত্যাকাণ্ড ও নৃশংসতার সার্বিক চিত্রও তুলে ধরা হয়। এতে হত্যার শিকার কাশ্মীরীদের সর্বমোট সংখ্যা ৯৬,৪২৩ উল্লেখ কর বলা হয়, তন্মধ্যে রাষ্ট্রীয় হেফাজতে হত্যার শিকার হয়েছেন ৭ হাজার ৩৭৯ জন। গ্রেফতারের শিকার হয়েছে ১ লক্ষ ৭৩ হাজার ৪৫৬ বেসামরিক কাশ্মীরী। বিধবা হয়েছেন ২২ হাজার ৯৮১ কাশ্মীরী নারী। এতিম হয়েছে ১ লক্ষ ৭ হাজার ৯৭৭ শিশু। রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হাতে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১১ হাজার ২৬৭ কাশ্মীরী কিশোরী ও তরুণী।

সর্বশেষ

spot_img
spot_img
spot_img